ধর্নায় মমতা, রাস্তায় প্রতিবাদে সামিল তৃণমূল

সারদা কাণ্ডের তদন্তের জন্য সিবিআই গোয়েন্দাদের সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে তল্লাশির চেষ্টার ঘটনাকে সাংবিধানিক সংকট এবং তা বাঁচাতে রোববার রাত থেকে কলকাতায় অনশন শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় নেত্রীর প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে রাত থেকেই পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরাও।
ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে

সারদা কাণ্ডের তদন্তের জন্য সিবিআই গোয়েন্দাদের সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে তল্লাশির চেষ্টার ঘটনাকে সাংবিধানিক সংকট এবং তা বাঁচাতে রোববার রাত থেকে কলকাতায় অনশন শুরু করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনিক প্রধান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় নেত্রীর প্রতিবাদে সংহতি জানিয়ে রাত থেকেই পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরাও।

এরই মধ্যে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল মমতার এই প্রতিবাদকে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।

রোববার রাত তখন সাড়ে আটটা। ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেল মোড়ে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই আস্তে আস্তে তার মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য, দলীয় নেতা-নেত্রীরা এসে যুক্ত হন দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর এই আন্দোলনে।

গণমাধ্যমে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্য জুড়ে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের হাজার হাজার সমর্থন রাস্তা নেমে পড়েন। কোথাও তারা পথ অবরোধ করেন কোথাও প্রতিবাদ মিছিল। রাতভর এই আন্দোলন গড়ায় সোমবারও। এখনও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই ধরনের আন্দোলনের খবর মিলছে। 

সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশের সঙ্গে এই সংঘাতের পরই কলকাতার সিবিআই সদর দপ্তর নিজাম প্যালেস এবং ইন্টারোগেশন সেল সিজিএ কমপ্লেক্সে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। রাহুল গান্ধী, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অখিলেশ যাদব, তেজস্বী যাদব, চন্দ্রবাবু নাইডু, দেবে গৌড়া সহ শরদ পাওয়ারের মতো নেতারা মমতার এই প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছেন।

মমতার ধর্না মঞ্চের পাশে অস্থায়ী একটি প্যান্ডেলের মধ্যে আজ মন্ত্রিসভার বাজেটকালীন বৈঠক ডাকা হয়েছে।

রোববার রাতে জেরা করতে গিয়ে কলকাতা পুলিশের হাতে কার্যত আটক হয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের কর্মকর্তারা। দীর্ঘক্ষণ আটক রাখার পর রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

এই ঘটনায় আজ সুপ্রিম কোর্টে যায় সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশ। হাইকোর্ট এই মামলার শুনানি মঙ্গলবার হবে বলে জানিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতি সিবিআইয়ের কাছে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে নথি নষ্টের প্রমাণ চেয়ে পাঠান। বিচারপতি বলেন, অভিযোগ প্রমাণ হলে এমন ব্যবস্থা নেবো যাতে ওই অফিসার সারা জীবন পস্তাবে।

পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেও যাওয়া হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। রাজ্যের হয়ে আদালতে সওয়াল করবেন, কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি। কলকাতা পুলিশের তরফে আদালতকে জানানো হয়, সিবিআইয়ের নোটিশে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল আদালত। সেই নির্দেশ অমান্য করে সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়াই পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দিয়েছিলো সিবিআই।

এদিকে কেন্দ্র রাজ্যের এই সংঘাতে  ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র পাশে দাঁড়িয়েছেন বিরোধীরা। এই ঘটনায় দেশের সংবিধানকে রক্ষা করার দাবিতে সমস্ত বিরোধীদের পাশে চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন মমতা। রোববার রাতেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সমর্থন জানিয়ে ফোন করেন মমতাকে। টুইটে সেকথা লিখে রাহুল বলেন, আমি নিজে মমতাদির সঙ্গে কথা বলেছি আর বলেছি আমরা তার পাশে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বাংলায় যা হয়েছে তা মোদি এবং বিজেপির মিলিত আক্রমণ দেশের ওপর। এই ফ্যাসিবাদী বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত বিরোধীরা একজোট হয়ে লড়বে।

ভারতের এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার টুইটারে লেখেন, পশ্চিমবঙ্গের এই ঘটনা গণতন্ত্রের উপর নিগ্রহ। পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই–কে সম্পূর্ণ অপব্যবহার করা হয়েছে। এজন্য সব বিরোধীরা একত্রিত হবে। টিডিপি সুপ্রিমো এন চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, আজ দেশের সমস্ত বিরোধী নেতারা দিল্লিতে এই ব্যাপারে বৈঠকে বসবে। তারপর দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে খসড়া কর্মসূচি তৈরি করবেন। তার দলের সাংসদরা এই ইস্যুতে একযোগে প্রতিবাদ জানাবে।

জম্মু কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ টুইটারে লিখেছেন, আমি মমতাদিকে ফোন করে বলেছি আমরা তার ধর্নাতে তার পাশে আছি। সিবিআই–কে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা এবং মোদি সরকারের এভাবে কেন্দ্রীয় সংগঠনগুলির অপব্যবহার আজ সহ্যের সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।

গুজরাটের দলিত বিধায়ক জিগনেশ মেওয়ানি টুইটারে মমতাকে সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, ভারতের মাটিতে আজ গণতন্ত্র এবং সংবিধান ধ্বংস হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি–অমিত শাহ মিলে সিবিআই-কে দিয়ে কলকাতায় যা করেছে তা অঘোষিত জরুরি অবস্থা এবং ফ্যাসিবাদ। যেভাবে মমতাজির কর্মকর্তাকে সিবিআই নিশানা করেছে তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে রাজনৈতিক প্রতিবাদ হওয়া উচিত।

সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব টুইটারে লিখেছেন, বিজেপি যেনতেন প্রকারে ক্ষমতায় থাকতে চায়। তারা এত ভয় পাচ্ছে যে সিবিআই–কে নির্বাচনী এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। এটা অগণতান্ত্রিক এবং সংবিধান বিরুদ্ধ। আমাদের দাবি সিবিআই–কে এভাবে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা যাবে না।

মমতার পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে সমর্থন-বার্তা পাঠিয়েছেন বহুজন সমাজবাদী পার্টির প্রধান মায়াবতীও। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল টুইটারে লিখেছেন, মমতাদির সঙ্গে কথা বলে তার পাশে থাকার বার্তা আমি দিয়েছি। মোদি–শাহ যা করেছেন সেটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। আরজেডি নেতা তথা লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদব টুইটারে লিখেছেন, মমতাদিদির সঙ্গে কথা বলে আরজেডি–র সমর্থন জানিয়েছি। এদিকে, আজই সিবিআইয়ের ডিরেক্টর পদে দায়িত্ব নিতে চলেছেন ঋষি শুক্লা। সিবিআই সূত্রে খবর, দায়িত্ব নিয়েই তিনি পশ্চিমবঙ্গে আসতে চলেছেন। আজ বা কাল তিনি পশ্চিমবঙ্গে আসবেন। এসে সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে সিবিআই কর্মকর্তাদের মনোবল বাড়াতে বৈঠক করবেন।

ইতিমধ্যেই দিল্লিতে গতকালের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকজন অফিসারের নাম পাঠানো হয়েছে সিবিআইয়ের পরিচালকের অফিসে। যার মধ্যে একজন ডিসি, একজন এডিসিপি, দুই জন ইন্সপেক্টরসহ অন্যান্য কয়েকজনের নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কাজে বাধা ও মারধর করার অভিযোগ আনছে সিবিআই। পাশাপাশি আজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠির কাছেও বিষয়টি জানিয়ে সিবিআই অভিযোগ জানাতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। বিষয়টি জানার পরই ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরিনাথ ত্রিপাঠিকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago