‘নদীর বিষয়ে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা সঠিক নয়’

Eviction drive
সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারের তোলা ছবিতে দেখা যায় ঢাকার কামরাঙ্গীচরের আশরাফাবাদ এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে দখলকৃত স্থাপনা উচ্ছেদের কাজে বিআইডব্লুটিএ। (নিচে) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন (বামে) এবং স্থপতি ইকবাল হাবিব।

প্রকৃতির নিয়মে নদী ভাঙে আর গড়ে। কিন্তু, সরকার যখন নদী-পাড়ের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয় তখন কিছুদিন পর সেগুলো আবার আগের মতোই গড়ে উঠে কোন নিয়মে? কেনো নদীর মতোই দখলকৃত স্থাপনা ভাঙা-গড়ার খেলা দেখতে হয় প্রতিবছর? বিষয়গুলো জানতে কথা হয় দুজন বিশিষ্ট পরিবেশবাদীর সঙ্গে- যারা নদী বাঁচানোর আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক বছর ধরে।

গতকাল (৬ ফেব্রুয়ারি) দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনে মতামত প্রকাশ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন এবং স্থপতি ইকবাল হাবিব।

আব্দুল মতিন বলেন, “নির্বাচনের পর সরকার কিছু ইতিবাচক কাজ করার চেষ্টা করছে বলে হয়। এর মধ্যে নদী উদ্ধারের কাজ রয়েছে। এই উচ্ছেদ অভিযান কতোদিন চলবে জানি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটি কি সম্পন্ন করবেন, নাকি অসম্পন্ন অবস্থায় বন্ধ করে দিবেন তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে নদী উদ্ধারের কাজ যেহেতু হচ্ছে- আমরা এর প্রশংসা করি। আমরা চাই এটি পূর্ণাঙ্গভাবে হোক এবং সরকার তা সফলভাবে করুক। আমরা এই অভিযানকে ইতিবাচকভাবে দেখছি।”

এই উচ্ছেদ অভিযান কতোদিন চলবে জানি না বলে মন্তব্য করছেন কেনো?- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা সরকারের কাজে স্ববিরোধীতার কথা সবসময়ই বলে আসছি। কারণ- নদীর বিষয়ে সরকারের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা সঠিক নয়। তা পরিবেশবাদীদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মেলে না। সরকার নীতিগতভাবে মনে করে তার উন্নয়ন কাজ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির জন্যে নদীর ওপর হস্তক্ষেপ করা যায়। আমরা মনে করি, সরকারের নদীনীতি ভুল।”

বিষয়টি ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “সরকারের নীতি হওয়া উচিত বিজ্ঞানভিত্তিক। সারাবিশ্বে এ নিয়ে আন্দোলন রয়েছে এবং কাজও হয়েছে। জাতিসংঘ ১৯৯৭ সালে নদীর প্রবাহ নিয়ে আইন করেছে। সারাবিশ্বের পানি বিজ্ঞানীরা মিলে সেই আইনটি করেছেন। আইনটি যখন হয় তখন বাংলাদেশ সরকার সেটিকে সমর্থন দিয়েছিলো। কিন্তু, পরে এর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।”

“জাতিসংঘের আইনে বলা হয়েছে- নদীর ভেতরে কোনো অবকাঠামো গড়া যাবে না। পানির প্রবাহকে বন্ধ করা যাবে না। নদী হচ্ছে একটি চলমান জলপ্রবাহ। এর ওপর কোনো বাঁধ দেওয়া বা বাধা সৃষ্টি করা যাবে না। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং পাকিস্তান জাতিসংঘের সেই আইন মানে না,” যোগ করেন (বাপা) সাধারণ সম্পাদক।

মতিন মনে করেন, “জাতিসংঘের আইনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার তার ভুল নীতির বৃত্তের মধ্যে আবদ্ধ রয়েছে। সেই ভুল নীতির ওপর ভিত্তি করে সরকারের সমস্ত প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। নদীর পাড়ের অবকাঠামো ভাঙা হচ্ছে কিন্তু, নদীর ভেতরের সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামো ভাঙা হচ্ছে না। এখানে সরকারের স্ববিরোধিতা রয়েছে। সরকারের নীতিগত ভ্রান্তির কারণেই এই স্ববিরোধিতা।”

“সরকারি প্রকল্প থেকেও নদীকে মুক্ত করতে হবে” উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “সরকার নদীর পাড়ের দখলদারদের উচ্ছেদ করতে চায় নদীকে স্বাধীন করে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু, নদীর ভেতরে যে অবকাঠামো গড়ে তুলেছে সরকার, সেটিকে তারা নদীর পরাধীনতা মনে করে না। মনে করে- তারা সঠিক রয়েছে। আমরা মনে করি সরকার এটি ভুল করছে।”

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, “সম্প্রতি, আমাদের আদালত এক রায়ে নদীকে একটি সত্তা হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে একটি দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য নতুনভাবে উত্থাপন করেছেন। তবে যতক্ষণ  পর্যন্ত না প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক তা প্রত্যায়িত হচ্ছে ততক্ষণ তা কার্যকর হবে না। আশঙ্কার কথা হচ্ছে- প্রতিবারের মতো এবারও উচ্ছেদের পরপরই সেই অঞ্চলটি সংরক্ষণের করার জন্যে কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে তা আমরা এখনো খবরে দেখিনি। অতীতের মতো পরিকল্পনা ছাড়া উচ্ছেদ হলে সেই জমি যে আবার বেদখল হবে তা বলাই বাহুল্য। কারণ, সংরক্ষণের জন্যে যে পুলিশ ফোর্স থাকা প্রয়োজন তা বিআইডব্লুটিএ-র নেই। এর মানে- এই উচ্ছেদ অভিযান আবারো চোর-পুলিশ খেলার মতো ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি করছে।”

“তবে যেহেতু কতকগুলো দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি তাই এবারের অভিযানকে সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন বলে দাবি করা হলে তা হেসে উড়িয়ে দিতে পারছি না।”

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ‘অসঙ্গতি’-র প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “টেলিভিশনে দেখলাম কর্ণফুলীর দুই পাড়ে উদ্ধার অভিযানের পর কর্তৃপক্ষ বলছে- নদীর দুই পাশে ঘাট তৈরি করে দেওয়া হোক। এই যে অসঙ্গতি সেটি তো ঐ ব্যক্তি ধারন করছেন বা ঐ সংস্থা ধারন করছে। কেননা, অবকাঠামো না করার জন্যেই তো আমাদের আন্দোলন। আদালত বলেছে- নদীর পরিসর খোলা থাকবে, সেখানে পায়ে হাঁটার পথ থাকবে এবং বনায়ন করা হবে। তবে কোনো কাঠামো থাকবে না।”

“একটি সমন্বিত পরিকল্পনাবিহীন উদ্ধারকাজ হিতে বিপরীত হতে পারে” বলে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, “যে ব্যক্তিরা অতীতে আমাদেরকে হতাশ করেছেন ভবিষ্যতে তারা যে আবার হতাশ করবেন না- এটি নিশ্চিত করে বলা খুবই কঠিন।”

তবে তার আশা, “অতীতে যারা দখল কার্যক্রমে অংশ নিয়েছিলেন তারা এবার হয়তো শুধরিয়ে নিয়ে নিজেদেরকে একটি সংরক্ষণবাদী মানসিকতায় নদীর পাড়কে শুধু উদ্ধারই করবেন না সেই উদ্ধারকে স্থায়িত্ব দিবেন।”

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

Every beat of my patriotic heart, every spark of my nation building energy, every iota of my common sense, every conclusion of my rational thinking compels me to most ardently, passionately and humbly appeal to Prof Yunus not to resign from the position of holding the helm of the nation at this crucial time.

2h ago