হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ২৮ দালালের তালিকা প্রকাশ
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের ২৮ দালালের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বহিরাগত দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে এ তালিকা প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ তালিকা জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়।
এর আগে দালাল নির্মূলে একটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পর্যবেক্ষণ শেষে এ তালিকা প্রকাশ করে।
জানা যায়, জেলার ২০ লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতাল। চিকিৎসা নিতে এসে দালালদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছেন গ্রামাঞ্চলের সাধারণ রোগীরা। দালালদের সিন্ডিকেট এতোই শক্তিশালী যে তাদেরকে ছাড়া কোনো ওষুধপত্র বাইরে থেকে কেনা যায় না। দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বার বার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেও কার্যত কিছুই হয়নি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও দালাল নির্মূল উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডা. মিঠুন রায় বলেন, “এই তালিকা হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, পুলিশ সুপার এবং সদর মডেল থানায় পাঠানো হয়েছে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দালালদের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। প্রতিদিনই প্রতারিত হচ্ছেন বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা সহজ-সরল লোকজন। দালালদের খপ্পরে পড়ে অনেক রোগীর প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। শহরের বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকের সহায়তায় সক্রিয় এই দালাল চক্র। ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় দালাল নির্মূলে উপ-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
এর প্রেক্ষিতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২৮ দালালদের তালিকা প্রকাশ করা হয়। দালাল নির্মূল উপ-কমিটির আহ্বায়ক ডা. মিঠুন রায়সহ তিনজন স্বাক্ষরিত তালিকা অনুযায়ী দালালরা হলেন- সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামের ইউনুছ মিয়া, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার সেলিম মিয়া, বানিয়াচং উপজেলার শাহিন মিয়া, একই উপজেলার কান্দিপাড়া গ্রামের অসিত দাশ, হবিগঞ্জ শহরের শংকরের মুখ এলাকার সজল দাশ, সদর উপজেলার নূরুল মিয়া, লাখাই উপজেলার সাদিকুন্নেছা, হবিগঞ্জ শহরের মোহনপুর এলাকার ছায়া বেগম, ছোট বহুলা গ্রামের রেজিনা বেগম, ইনাতাবাদ এলাকার সিরাজ মিয়া, বড় বহুলা গ্রামের জাফর মিয়া, চুনারুঘাট উপজেলার মাসুক মিয়া, মির্জাপুর গ্রামের শাহিন মিয়া, অনন্তপুর আবাসিক এলাকার আব্দুস সালাম, একই এলাকার আব্দুল মালেক এবং বানিয়াচং উপজেলার হিয়াল গ্রামের সেলিম মিয়া।
এছাড়াও রয়েছেন, অনন্তপুর এলাকার আব্দুল খালেক, অসিত, উত্তর সাঙ্গর গ্রামের সুজন, একই গ্রামের চয়ন, আজমিরীগঞ্জ উপজেলার মাছুম, লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের হাছান, চুনারুঘাট উপজেলার রেহেনা, হবিগঞ্জ সদর উপজেলার যাত্রাবড়বাড়ি এলাকার টেনু মিয়া, বানিয়াচংয়ের মিজান এবং চুনারুঘাটের মাসুক ও শহরের রাজনগর এলাকার দ্বীন উল ইসলাম।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, “তালিকাটি মঙ্গলবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছে। এসব দালালের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, হাসপাতালে কর্মরত কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে দালালি চলছে- রোগীদের এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অবশেষে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এই তালিকাটি প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
Comments