যানজট নিরসনে আলিবাবা’র ‘সিটি ব্রেন’

গাড়ির পেছনে গাড়ি, তার পেছনেও গাড়ি। মূল সড়কে গাড়ি যেমন নিশ্চল তেমনি নিশ্চল ফ্লাইওভারেও। সৃষ্টি হয়েছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। প্রিয় পাঠক, এটি ঢাকা শহরের ‘ফ্লাইওভার সমৃদ্ধ’ কোনো এলাকার দৃশ্য নয়। এ দৃশ্য সমৃদ্ধ চীনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাংঝু’র।
Hangzhou city
চীনের হাংঝু শহরে যানজটের দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

গাড়ির পেছনে গাড়ি, তার পেছনেও গাড়ি। মূল সড়কে গাড়ি যেমন নিশ্চল তেমনি নিশ্চল ফ্লাইওভারেও। সৃষ্টি হয়েছে গাড়ির দীর্ঘ সারি। প্রিয় পাঠক, এটি ঢাকা শহরের ‘ফ্লাইওভার সমৃদ্ধ’ কোনো এলাকার দৃশ্য নয়। এ দৃশ্য সমৃদ্ধ চীনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হাংঝু’র।

প্রায় ৭০ লাখ অধিবাসীর হাংঝু-কে এক সময় দেশটির পঞ্চম ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী হিসেবে গণ্য করা হতো। এখন এর অবস্থান তালিকায় ৫৭-তে এসে পড়েছে। এক সময়ের যানজটের শহর হিসেবে কুখ্যাত হাংঝু’র একমাত্র খ্যাতি ছিলো পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আলিবাবা’র শহর হিসেবে। সেই আলিবাবাই তার ‘জাদুবলে’ এই শহরটিকে দিয়েছে এক ভিন্ন পরিচয়।

সম্প্রতি, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-র বাণিজ্য বিভাগের এক প্রতিবেদনে ‘উদ্ভাবনী শহর’ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে একদা যানজটে ক্লিষ্ট হাংঝু-কে। কারণ, আলিবাবা তার উদ্ভাবিত ‘সিটি ব্রেন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে সেই শহরটির প্রতিদিনকার যানজটকে ‘হাওয়া’ করে দিয়েছেন।

কী এই ‘সিটি ব্রেন’?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় পুরো হাংজু শহরের তথ্য। এর মধ্যে রয়েছে সড়কের বিভিন্ন মোড়ের ভিডিওচিত্র। জিপিএস ড্যাটা থেকে জেনে নেওয়া হয় গাড়িগুলোর অবস্থা ও অবস্থান।

এরপর, সেসব তথ্য একটি ঘরে বসে বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে বসেই সমন্বয় আনা হয় শহরের ১ হাজার সিগন্যাল বাতির সংযোগ ব্যবস্থায়। তারপর জট সারানোর জন্যে নেওয়া হয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

পরীক্ষামূলক কার্যক্রম হিসেবে এই প্রযুক্তি হাংঝু শহরে চালানো হয় বছর দুয়েক। এরপর, মেলে সফলতা। আলিবাবা’র মতে, ‘সিটি ব্রেন’ শহরের গাড়িচালকদের পথ কমিয়ে দিয়েছে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা সহজেই ব্যবহার করতে পারছেন কম জটের রাস্তাগুলো।

শহরের শীর্ষ রাইড-শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান দিদি চুশিং-এর এক কর্মী জানান, আগে যেখানে ৩ কিমি পথ পাড়ি দিতে ৪০ মিনিট লাগতো এখন সেখানে পরিস্থিতি আগের তুলনায় “অনেক ভালো”।

City Brain
আলিবাবা’র উদ্ভাবিত ‘সিটি ব্রেন’ প্রযুক্তির মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

আলিবাবা’র প্রযুক্তি বিভাগের স্থায়ী কমিটির প্রধান ওয়াং জিয়ান সিএনএন-কে বলেন, “বিশ্বের যে কোনো শহরের তুলনায় চীনের শহরগুলোতে সমস্যা বেশি। আসলে সবকিছুই নির্ভর করে রাস্তার পরিস্থিতির ওপর। আমরা যেমন বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি, তেমনি এখন আমাদের অনেককিছু নির্ভর করে রাস্তায় যান চলাচলের গতির ওপর।”

এই প্রযুক্তি মালয়েশিয়ায়, জার্মানিতে

নিজ শহরে ‘সিটি ব্রেন’ প্রযুক্তি ব্যবহারের আগে আলিবাবা এটি ব্যবহার করেছিলো মালয়েশিয়ার ব্যস্ততম শহর কুয়ালালামপুরে। গত বছরে সংস্থাটি দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটির রাজধানী শহরে তাদের এই উদ্ভাবনীকে প্রথম কাজে লাগায়।

এরপর, গেলো শরতে জার্মানির ভলফবুর্গ শহরে ফক্সভাগন (ভক্সওয়াগন) এবং সিমেন্স সংস্থা দুটি স্মার্ট ট্রাফিক ব্যবস্থা হিসেবে ‘সিটি ব্রেন’-এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে চালকরা দ্রুতই জেনে যাচ্ছেন কোনদিকে রয়েছে ‘সবুজ সংকেত’।

বিশেষজ্ঞের মত ও বিতর্ক

গত বছর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক সংস্থা ম্যাককিনসে গ্লোবাল ইনস্টিটিউট এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করে, “(এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে) আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের শহরগুলোর যানজট ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যাবে।”

কিন্তু, এই প্রযুক্তিটিকে নিয়ে উঠেছে বিতর্কও। বিশেষ করে, চীনে ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে চালানো হয় নজরদারী। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সবার তথ্য হাতিয়ে নিয়ে সেই কাজটি দেশের বাইরেও চালাতে পারবে চীন- তেমন আশঙ্কা অনেকের।

তবে এ সমস্যাটি সমাধানের জন্যে কাজ করা হচ্ছে বলে সিএনএন-কে জানিয়েছেন আলিবাবা’র প্রযুক্তি বিভাগের স্থায়ী কমিটির প্রধান।

Comments

The Daily Star  | English

DHL, Daily Star honour five business luminaries for outstanding achievements

The theme of this year's event is "Bangladesh on the rebound".

2h ago