রায়হান পড়াশোনা চালানোর জন্যে রিকশা চালায়

সতীর্থদের প্রায় সবাই যখন আগামী এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন এই ছেলেটিকে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিকশা চালাতে হচ্ছে।
Rayhan Islam
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিকশা চালাচ্ছে রায়হান ইসলাম। ছবি: স্টার

সতীর্থদের প্রায় সবাই যখন আগামী এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন এই ছেলেটিকে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রিকশা চালাতে হচ্ছে।

১৯ বছর বয়সী এই ছেলেটির নাম রায়হান ইসলাম। আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় মানবিক শাখায় সে অংশ নিবে। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অন্তর্গত পঞ্চগড় জেলার বোদা পাইলট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্র রায়হান।

ক্যাম্পাসে সম্প্রতি দেখা মেলে এই ছেলেটির। সে জানায়, গত মাসে পঞ্চগড় থেকে কাজের জন্যে এলাকার কয়েকজন একসঙ্গে এখানে এসেছে। তারাও ক্যাম্পাসে রিকশা চালায়। তারাই তাকে রিকশা জোগাড় করে দিয়েছে। সে তাদের সঙ্গেই ক্যাম্পাসের কাছে আমবাগান এলাকায় থাকে।

রায়হান বলে, “একজনের কাছ থেকে ৩ হাজার ১শ টাকা ধার করে আমার এইচএসসি পরীক্ষার নিবন্ধনের খরচ দিছিলাম। গত ৩ মাসে সেই টাকা সুদসহ হয়েছে ৪ হাজার ৯শ।”

“ক্যাম্পাসে দিনে আট ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে ৩০০ টাকা আয় হয়,” উল্লেখ করে এই পরীক্ষার্থী বলে, “প্রতিদিন খরচ শেষে ১৫০ টাকা থাকে।”

পঞ্চগড় থানার বোদা উপজেলার বলবীর গ্রামের বাসিন্দা রায়হান আরও জানায় যে তার বাবা দিনমজুর। পড়ার খরচ জোগাড় করা পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয় না। তার ছোট ভাই ও বোন আছে। বোন পড়ে ক্লাস নাইনে। ভাই এখনো ছোট; স্কুলে যায় না।

“এসএসসি পরীক্ষা দেই ২০১৬ সালে। জিপিএ ৩.৬৪ (মানবিক) পাই। ক্লাসে নিয়মিত থাকতে পারতাম না বলে বৃত্তি পাই নাই। তখনও আমাকে কাজ করতে হতো।”

“লেখাপড়া চালায়ে যেতে চাই। যাতে আমার ভবিষ্যৎ সুন্দর হয়। যাতে পরিবারকেও সহযোগিতা করতে পারি।”

কিন্তু, গত একমাস টানা কষ্টের কাজ করে বেশ ক্লান্ত রায়হান। এই সংবাদদাতার সঙ্গে দুদিন আগে টেলিফোনে কথা হলে সে জানায়, বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে সে বাড়ি চলে গেছে।

তখন কথা হয় রায়হানের মা রেহানা পারভীনের সঙ্গে।

তিনি বলেন, “তার বাবায় চায় না সে লেখাপড়া করুক। চায় সে কাজ করে পরিবাররে সহযোগিতা করুক। কিন্তু, রায়হান চায় লেখাপড়া করতে। মাঝে মাঝে সে অন্যদের কাছ থেকে পুরান বই জোগাড় করে।”

লক্ষ্য পূরণের আশায় ছেলের অদম্য আগ্রহ দেখে সৃষ্টিকর্তার কাছে মায়ের প্রার্থনা, “আমার ছেলে অনেক পরিশ্রম করে। আল্লা তারে সফল করুক।”

Comments

The Daily Star  | English

Age limit for govt job entry: 35yrs for men, 37 for women

A government committee has recommended raising the maximum age for applying for public service jobs to 35 years for men and 37 years for women.

9h ago