বাংলা জানা এক কিউই নারী পুলিশ অফিসারের গল্প

ক্রাইস্টচার্চে হেগলি ওভালে তখন বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ওয়ানডে চলছে। দায়িত্বরত কিউই নারী পুলিশ অফিসার বাংলাদেশের সাংবাদিক দেখে স্পষ্ট বাংলায় উঠলেন, ‘কেমন আছ? আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি?’ ভাষার মাসে বিদেশিনীর মুখে বিদেশ বিভূঁইয়ে বাংলা শোনা হকচকিয়ে যাওয়ার মতই ব্যাপার। নাদনী ভিকারস নামের সেই অফিসারের সঙ্গে খানিক গল্পে জানা গেল তার বাংলা শেখা আর বাংলাপ্রেমের গল্প।

নাদনীর বাংলার কাছাকাছি আসার শুরুটা ২০১৩ সালে। সেবার রথ দেখা আর কলা বেচার মতো ঘটনা ঘটে তার জীবনে।  টাঙাইলের মধুপরে একটা হেলথ কেয়ারের প্রজেক্টের কাজে এসেছিলেন। শখ ছিল ফাঁকে কিছুটা ঘুরেও বেড়াবেন বাংলাদেশ। তা করতে গিয়ে পরিচয় হয়ে যায় স্থানীয় তরুণ রতন বর্মণের সঙ্গে। মায়ায় বাধা পড়ে যান তখনই। পরে বিয়েও করেন তারা।

নাদনী নিজের মুখেই দ্য ডেইলি স্টারকে শুনিয়েছেন শোনালেন সে গল্প, ‘২০১৩ সালে আরও তিনজন কিউইর সঙ্গে ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। একই সময়ে কৈলাকুরি হেলথ কেয়ার প্রজেক্টের কাজও ছিল। একজন কিউই চিকিৎসক ১৯৮০ সালে ওখানকার দরিদ্রদের জন্য একটি হাসপাতাল চালু করেছিলেন। আমি এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের সহায়তা করতে এসেছিলাম, বিশেষ করে নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে দাতাদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ ছিল মূল কাজ। আমার স্বামী রতন সেখানে দোভাষী হিসেবে কাজ করছিল। সেই আমাকে বাংলা শেখায়।

প্রথম পরিচয়ের বছর চারেক পরে ২০১৭ সালে নাদনী রতনকে বিয়ে করেন। ওই বছর তারা নিউজিল্যান্ডেও চলে আসেন। নাদনী যোগ দেন সেখানকার পুলিশ বিভাগে, রতন ক্রাইস্টচার্চেই পেয়ে চান চাকরি।

ইংরেজির চেয়ে এখন ঝরঝরে বাংলায় কথা বলতেই বেশ স্বচ্ছন্দ নাদনী। তবে সেই শেখার শুরুটা খুব সহজ ছিল না বলেও জানান তিনি,  ‘শুরুতে বাংলা শেখাটা কঠিন ছিল, ডাক্তার ভাই আমাকে সাহায্য করেন, স্থানীয়দের কাছ থেকেও সহায়তা পাই। শুরুতে ধুঁকলেও ছয় থেকে আট মাসে বাংলা বলাটা পুরোপুরি আয়ত্তে এসে গেছে।’

বাংলাদেশে ভ্রমণের আগে এখানকার ভাষা, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না এই কিউই নারী পুলিশ অফিসারের।

আলাদা দেশ, আলাদা ধর্ম, আলাদা ভাষা-সংস্কৃতির মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পরিণতের পথটা যে একদম সহজ ছিল না নয়। নাদনী ও রতন দুই পরিবারের কিছু উদ্বেগ ছিল। কিন্তু তারা দুজনেই পরিবারকে রাজী করিয়ে হাতে হাত রাখতে পেরেছেন।

‘২০১৩ সালের ক্রিসমাসে আমার পরিবার ও কিছু বন্ধুবান্ধব বাংলাদেশে যান এবং রতনের সঙ্গে দেখা করেন। কিছু ব্যাপার অবশ্য সংশয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিন্তু পরে তারা সব মেনে নেন। সে (রতন) ভীষণ ভদ্র আর বন্ধুত্বপরায়ণ। তার সঙ্গে সময় কাটাতে আমার ভালো লাগে। সেও ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। আমরা একসঙ্গে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি।’

১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রামের ইতিহাস সবারই জানা। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক  ভাষা শহীদ দিবস পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো নিউজিল্যান্ডেও পালিত হয় দিবসটি।

ওয়েলিংটনে স্থানীয় বাংলাদেশীরা আয়োজন করেছেন বিশেষ অনুষ্ঠানের। নাদনীর আশা তিনিও এবার সেখানে যাবেন। যদি কোন কারণে যেতে না পারেন এই বছরের শেষ দিকে আবার বাংলাদেশে ভ্রমণের ইচ্ছা তার।

 

Comments

The Daily Star  | English

India plane crash death toll revised to 240 after 'double-counting'

It’s the first Dreamliner crash since its 2011 commercial debut, says Aviation Safety Network

10h ago