সাব্বিরের সেঞ্চুরির পরও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে পেস-স্যুয়িংয়ে লুটোপুটি খেয়েছিল টপ অর্ডার। এবার পরে ব্যাট করে হলো আরও করুণ দশা। সিরিজ হার হয়েছে আগের ম্যাচেই। মিশন ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। তবে তারচেয়ে বেশি ছিল নিউজিল্যান্ডে মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস জড়ো করা। হয়নি না কিছুই। এবার আগের দুই ম্যাচে না খেলা টিম সাউদি একাই সর্বনাশ করে ছেড়েছেন বাংলাদেশের। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার আরেকটি হতাশার দিনে প্রাপ্তি কেবল সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরি।
Tim Southee
৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেন সাউদি। ছবি: এএফপি

প্রথম দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে পেস-স্যুয়িংয়ে লুটোপুটি খেয়েছিল টপ অর্ডার। এবার পরে ব্যাট করে হলো আরও করুণ দশা। সিরিজ হার হয়েছে আগের ম্যাচেই। মিশন ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর। তবে তারচেয়ে বেশি ছিল নিউজিল্যান্ডে মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাস জড়ো করা। হয়নি না কিছুই। এবার আগের দুই ম্যাচে না খেলা টিম সাউদি একাই সর্বনাশ করে ছেড়েছেন বাংলাদেশের।  হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার আরেকটি হতাশার দিনে প্রাপ্তি কেবল সাব্বির রহমানের সেঞ্চুরি।

বুধবার ডানেডিনে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ৩৩০ রানের জবাবে বাংলাদেশ থেমেছে ২৪২ রানে। ৮৮ রানের লড়াইবিহীন আরেকটি হারে সিরিজে হয়েছে হোয়াইটওয়াশ।

বোলিংয়ে জুতসই শুরুর পর মোস্তাফিজুর রহমান আর রুবেল হোসেনের তালগোল পাকানো। দেদারসে রান বিলানোর দিনে ব্যাটসম্যানরা ছিলেন আরও রুগ্নতা দেখানোর প্রতিযোগিতায়। কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন সাব্বির। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করে দলকে স্বস্তি দিয়েছেন তিনি। রান পেয়েছেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনও। তবে তাদের অর্জন কেবল কমিয়েছে হারের ব্যবধান।

শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়া সাব্বির করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ১০২। সাইফুদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ৪৪ রান। সাউদি ৬৫ রানে নেন ৬ উইকেট। 

বাউন্ডারি ছোট, উইকেট ব্যাট করার জন্য ভালো। ৩৩১ রান তাড়ায় এইগুলো দিতে পারত সাহস। কিন্তু প্রথম ওভারেই জোড়া আঘাতে ভয় আরও বাড়িয়ে দেন টিম সাউদি।

দোষটা তামিমেরই। ইনিংসের মাত্র দ্বিতীয় বলেই রানের খাতা খোলার আগে তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল ব্যাটের কানায় লাগিয়ে উইকেটকিপারের হাতে দেন ক্যাচ। দুই বল পরই নেই সৌম্য সরকার। অবশ্য দারুণ বলে তেমন কিছু করার ছিল না তার। সাউদির ইনস্যুয়িঙ্গারের ছোবল তব্দা করে বেল উড়িয়ে দেয় সৌম্যের।

সাউদির পরের এলবিডব্লিওর শিকার লিটন দাসও। পুরো সিরিজে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ তখন টপ অর্ডারের। সবচেয়ে ব্যর্থ দুই ওপেনার। তামিম তিন ম্যাচে মোটে ৫ আর লিটন করেন মাত্র ৩ রান।

২ রানে নেই ৩ উইকেট। ম্যাচের হিসাব আসলে তখনই শেষ। মুশফিকুর রহিম আর মাহমুদউল্লাহ শুরু করেছিলেন প্রতিরোধ। তা কেবল খানিক সময়ের জন্যই। দলের ৪০ রানে গিয়ে নেই মুশফিক। এবার যম বোল্ট। দায় বেশি মুশফিকেরই। বোল্টের স্যুয়িং না বুজে মারতে গিয়ে বল তুলে দেন আকাশে। ১৭ রান করা মুশফিকের পথ ধরতে বেশি দেরি করেননি ১৬ রান করা মাহমুদউল্লাহ।

বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত ছিল দল, এমন পরিস্থিতিতে নেমে সাব্বির খেলেন ওই ইনিংস। তবে ম্যাচের ফল নিয়ে ততক্ষণেই দোলাচল না থাকায় তার হারানোর ছিল না কিছু। পাকা ব্যাটিং উইকেটে বল একটু পুরনো হওয়ায় চাপহীন থেকেই দাপট নিয়ে খেলেছেন সাব্বির।

সময়ের হিসাবে ২১ মাস আর ১৬ ইনিংস পর পেরিয়ে যান ফিফটি। সেই ফিফটিকে বানান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। 

এর আগে সকালের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলতে আগে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। নিজেই শুরুটা এনে দেন দারুণ। সাইফুদ্দিন করেন আঁটসাঁটও বোলিং, মাঝের ওভারে রান আটকে দেওয়ার কাজ করেন মিরাজও। তবে বাকি দুই পেসার রুবেল আর মোস্তাফিজের উদারতায় ভুগেছে দল।  মোস্তাফিজ তো ১০ ওভারে ৯২ রান দিয়ে কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে দিন। রুবেল ৯ ওভারে দেন ৬৪ রান।

অথচ দিনের শুরুটা ছিল ভালো। কলিন মনরোকে শুরুতেই ফিরিয়ে দিয়ে অধিনায়কই আনেন প্রথম উইকেট। রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করে বাঁহাতি মনরোকে বানান এলবিডব্লিও। ২১ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর ফের দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল। তবে এবার বেশি দূর আগাতে পারেননি। বলা ভালো আগাতে দেননি তামিম। সাইফুদ্দিনের বলে লঙ অন দিয়ে ছক্কা পেটানোর শট মেরেছিলেন আগের দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি করা গাপটিল। বাউন্ডারি লাইনে অসম্ভব ক্ষীপ্রতায়, শরীরের ভারসাম্য রেখে দুই দফায় সেই ক্যাচ হাতে জমান তামিম।

গাপটিল ফিরলেও নিউজিল্যান্ডের ভিত দাঁড়িয়ে যায় পরের দুই জুটিতে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে হেনরি নিকোলাস আর রস টেইলর তুলেন ৯২ রান। দুজনেই রান বাড়ান সমান তালে। মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে মিড উইকেটে তামিমের কাছে জমা পড়ে বিদায় নেওয়া নিকোলাস করেন ৬৪ রান।

চতুর্থ উইকেটে টেইলরের সঙ্গে এই ম্যাচের অধিনায়ক টম ল্যাথাম গড়েন ৫৫ রানের আরেক জুটি। ডানেডিনের মাঠে বরাবরই ভালো খেলা টেইলর দিচ্ছিলেন বড় কিছুর ইঙ্গিত। ৬৯ রানে তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন রুবেল হোসেন।

শেষটায় কিউইদের রাঙান ল্যাথাম। রুবেলের এক ওভার থেকে দুই ছক্কায় তুলেন ২১ রান। মার খেয়েছেন মোস্তাফিজও। তবে শেষ দিকে ৫১ বলে ৫৯ করা ল্যাথামকে ফেরান তিনিই। এর আগে ২৪ বলে ৩৭ রান করা জিমি নিশামকেও বোল্ড করেন মোস্তাফিজ।

কিন্তু নিজের শেষ দুই ওভারে প্রচুর রান দেন তিনি। ১০ ওভারের স্পেলে দুই উইকেট নিতে খরচ করে ফেলেন ৯২ রান।

দিন শেষে বাজে ব্যাটিং অবশ্য ভুলিয়ে দিয়েছে মোস্তাফিজের অমন বোলিংও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউজিল্যান্ড:  ৫০ ওভারে ৩৩০/৬ (গাপটিল ২৯, মনরো ৮, নিকোলাস ৬৪ , টেইলর  ৬৯, ল্যাথাম ৫৯ , নিশাম ৩৭, গ্র্যান্ডহোম ৩৭,  স্যান্টনার ১৬ ; মাশরাফি ১/৫১, মোস্তাফিজ ২/৯২, রুবেল ১/৬৪ , সাইফুদ্দিন ১/৪৮, মিরাজ ১/৪৩, মাহমুদউল্লাহ ০/২৮)

বাংলাদেশ:   ৪৭.২ ওভারে ২৪২ (তামিম ০, লিটন ১, সৌম্য ০, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৬, সাব্বির ১০২* , সাইফুদ্দিন ৪৪, মাশরাফি ২, মিরাজ  ৩৭, রুবেল ৩, মোস্তাফিজ ০*; সাউদি ৬/৬৫ , বোল্ট ২/৩৭,  গ্র্যান্ডহোম ১/১৮, ফার্গুসেন ০/৫০, স্যান্টনার০/৪৬, নিশাম ০/২৪ )

ফল: নিউজিল্যান্ড ৮৮ রানে জয়ী।

সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: টিম সাউদি। 

ম্যান অব দ্য সিরিজ: মার্টিন গাপটিল।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago