জাপানের ওকিনাওয়া মার্কিন ঘাঁটি নিয়ে গণভোট

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে জাপানের হেরে যাওয়ার পর দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ওকিনাওয়া দ্বীপটির দখল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় এই দ্বীপেই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে জাপানি সেনাদের হয়েছিলো তুমুল লড়াই। সেই লড়াইয়ে প্রতি চারজন দ্বীপবাসীর একজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে দ্বীপটি জাপানকে ‘ফিরিয়ে’ দিলেও সেখানে রয়ে যায় বিজয়ী বাহিনীর ঘাঁটি।
Japan okinawa
জাপানের ফুতেনমা থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সরিয়ে নিতে দ্বীপবাসীর বিক্ষোভ। ছবি: জিজি প্রেস/এএফপি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির কাছে জাপানের হেরে যাওয়ার পর দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত ওকিনাওয়া দ্বীপটির দখল নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় এই দ্বীপেই মার্কিন সেনাদের সঙ্গে জাপানি সেনাদের হয়েছিলো তুমুল লড়াই। সেই লড়াইয়ে প্রতি চারজন দ্বীপবাসীর একজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে দ্বীপটি জাপানকে ‘ফিরিয়ে’ দিলেও সেখানে রয়ে যায় বিজয়ী বাহিনীর ঘাঁটি।

বর্তমানে ওকিনাওয়ার মূল দ্বীপের প্রায় ১৮ শতাংশ জমির ওপর রয়েছে মার্কিন বিমান ঘাঁটি। ১৯৯৫ সালে তিন মার্কিন সেনার হাতে এক জাপানি তরুণী ধর্ষিত হওয়ার ঘটনার পর দাবি উঠে সেখান থেকে ঘাঁটি সরানোর। সেই দাবি রূপ নেয় জনরোষের। ফলে, পরের বছর জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্ত নেয় দ্বীপের কম বসতিপূর্ণ উপকূলীয় গ্রাম হেনোকোয় সরিয়ে নেওয়া হবে সেই ঘাঁটি।

জাপানে অবস্থানরত ৪৭ হাজার মার্কিন সেনার অধিকাংশের বেশি থাকেন ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেই ওকিনাওয়া দ্বীপের ফুতেনমা ঘাঁটিতে।

দ্য জাপান টাইমসের এক খবরে বলা হয়, আজকের (২৪ ফেব্রুয়ারি) গণভোটে ওকিনাওয়ার ১০ লাখের বেশি অধিবাসীকে- যাদের বয়স ১৮ বছর বা এর ওপরে- দেওয়া হবে তিনটি প্রশ্ন। হেনোকো গ্রামে মার্কিন ঘাঁটি সরাতে নতুন করে স্থাপনা নির্মাণ করার অনুমতি দেওয়া হবে কী না সে বিষয়ে ভোটাররা ‘হ্যাঁ’, ‘না’ অথবা ‘কোনটিই নয়’ উত্তর দিবেন।

গত সপ্তাহে এক হাজারের বেশি ভোটারের ওপর জরিপ চালিয়ে জাপানের কেয়েদো নিউজ জানায়- দ্বীপটির নতুন এলাকায় মার্কিন ঘাঁটি সরানোর বিরোধিতা করছেন ৬৭ শতাংশ ভোটার। পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ১৬ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ জানিয়েছেন তারা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ এর কোনোটিই সমর্থন করেন না।

তবে, জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৬ শতাংশ বলেছেন গণভোটের ফলাফলের ওপর জাপানের কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। কেননা, এই গণভোটের ফলাফল মানতে সরকারের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকবে না।

এদিকে, ওকিনাওয়া দ্বীপের গভর্নর ডেনি তামাকি আশা প্রকাশ করে বলেছেন- মার্কিন বিমানঘাঁটি সরানোর বিষয়ে স্থানীয় জনগণের ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে আসন্ন গণভোটে।

দ্বীপের ভেতরেই মার্কিন ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার বিরোধিতা করে তামাকি গত সেপ্টেম্বর গভর্নর নির্বাচিত হন। একই সঙ্গে তার আবেদন- জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক চুক্তিটি (ইউএস-জাপান স্ট্যাটাস অব ফোর্সেস অ্যাগ্রিমেন্ট) নতুন করে খতিয়ে দেওয়া হোক।

ওকিনাওয়ার অধিকাংশ অধিবাসী দ্বীপটিতে মার্কিন ঘাঁটির বিরোধী। কেননা, শান্তিপ্রিয় দ্বীপবাসীরা মার্কিন সেনাদের হট্টগোল, দুর্ঘটনা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে বেশ বিরক্ত। তারা চান তাদের দ্বীপ থেকেই সরিয়ে নেওয়া হোক বিদেশি সেনাদের ঘাঁটি।

দ্বীপের একজন অধিবাসী ইয়ুকিকো চিনেন গণমাধ্যমকে জানান- ফুতেনমা বিমানঘাঁটির কাছে একটি নার্সারি স্কুলে পড়ে তার ছয় বছর বয়সী মেয়ে। গতবছর মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে কিছু দ্রব্য এসে পড়েছিলো স্কুলটির ছাদে। গণভোটের প্রাক্কালে ইয়ুকিকোর মন্তব্য, “আমাদেরকে বলা হচ্ছে মার্কিন ঘাঁটি হেনোকোতে হবে কী না। আসলে বলতে চাই যে আমরা এই দ্বীপে কোনো সামরিক ঘাঁটিই চাই না।”

তবে, দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিনজু আবের প্রশাসন ভাবছে এর বিপরীত। আবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দেশটির গণপরিষদে বলেন, “আমরা ফুতেনমা থেকে মার্কিন ঘাঁটি সরিয়ে নেওয়ার জন্যে কাজ করছি। আমরা এই কাজ চালিয়ে যাবো যাতে ওকিনাওয়ার ভার লাঘব হয়।”

আবের প্রশাসন জনগণকে বোঝাচ্ছে এই বলে যে- দ্বীপটির নতুন এলাকায় ঘাঁটি সরিয়ে নিয়ে সেখানে কয়েক মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হবে। এর ফলে সেখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হবে।

উল্লেখ্য, ওকিনাওয়া দ্বীপটি এক সময় ছিলো স্বাধীন রাজার অধীনে। রিউকিউ দ্বীপমালা নামে পরিচিত সেই অঞ্চলে জাপানি সেনাদের অনুপ্রবেশ ঘটে ১৬০৯ সালে। এরপর ১৮৭৯ সালে সেই অঞ্চলটি জাপানের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া হয়।

Comments