ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে বড় ভূমিকা রাখছে ইসরাইল

ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সামরিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ়- তা সবার জানা। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে বিজেপি সরকার আসার পর ভারত হয়েছে ইসরাইলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়- গত কয়েক বছরে দেশ দুটির অস্ত্র বাণিজ্য ছয় বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই ভারত সরকার ৭৭৭ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে ইসরাইলের একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
Modi
আলিঙ্গনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি ফাইল ফটো

ইসরাইলের সঙ্গে ভারতের সামরিক সম্পর্ক অনেক দৃঢ়- তা সবার জানা। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে বিজেপি সরকার আসার পর ভারত হয়েছে ইসরাইলি অস্ত্রের সবচেয়ে বড় বাজার। ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়- গত কয়েক বছরে দেশ দুটির অস্ত্র বাণিজ্য ছয় বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র ২০১৮ সালেই ভারত সরকার ৭৭৭ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে ইসরাইলের একটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে।

ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে যুক্তরাজ্যের দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সংঘাতে বড় ভূমিকা রাখছে ইসরাইল’ শিরোনামে গতকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) একটি মতামত লিখেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক রবার্ট ফিস্ক। সাধারণত মধ্যপ্রাচ্যের ঘটনাপ্রবাহের ওপর বিশ্লেষণ লিখে পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তিনি। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সাম্প্রতিক পাকিস্তান অভিযান তার দৃষ্টি এড়ায়নি। এক বিশ্লেষণে তিনি তুলে ধরেছেন প্রায় ২,৫০০ মাইল দূরে থেকে তেলআবিব কীভাবে সহযোগিতা করছে নতুন দিল্লিকে।

বলেছেন- পাকিস্তানের ভূখণ্ডে জইস-ই-মোহাম্মদ ‘সন্ত্রাসীদের’ ঘাঁটিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বোমা ফেলায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম যে উল্লাস প্রকাশ করেছে সেই বোমাগুলো আসলে ইসরাইলের তৈরি রাফায়েল স্পাইস-২০০০ নামের ‘স্মার্ট বোমা’। জিপিএস দ্বারা পরিচালিত সেই বোমাগুলো এসেছে ইসরাইল থেকে।

ইসরাইল থেকে আকাশ-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, রাডার, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য মিসাইলসহ বিভিন্ন প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র কিনে ২০১৭ সালে ভারত নিজেকে ইসরাইলে সবচেয়ে বড় অস্ত্রবাজার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার প্রকাশিত খবরগুলোর কথাও উল্লেখ করেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

নেগেভ মরুভূমিতে ইসরাইলের সঙ্গে ভারতীয় ‘বিশেষ কমান্ডোদের’ যৌথ মহড়ায় অংশ নেওয়ার ভিডিওচিত্র রয়েছে- সে কথাও জানান তিনি। বলেন- সেই মহড়ায় অন্তত ১৬ জন ভারতীয় ‘কমান্ডো’ অংশ নিয়েছিলেন। জনবহুল এলাকায় কীভাবে অভিযান চালাতে হয় তা পরখ করতে আয়োজন করা হয়েছিলো সেই মহড়া।

তবে ইহুদিবাদী ইসরাইলের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের এই সখ্যতার বিষয়ে অনেক ভারতীয় বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন বলেও মন্তব্য রবার্ট ফিস্কের। ব্রাসেলসের এক গবেষক শৈরি মালহোত্রা ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম ‘হারেৎজ’-এ এক প্রতিবেদনে গত বছর লিখেছেন, “ভারত-ইসরাইলের (সুদৃঢ় সামরিক) সম্পর্কটা গড়ে উঠেছে বিজেপি এবং লিকুদ পার্টির রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিত্তিতে।”

সেই গবেষকের মতে, ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে মুসলমানদের হত্যা করছে তা দেখে অনুপ্রাণিত ভারতের ‘ইন্টারনেট হিন্দুরা’। ইন্টারনেট ব্যবহার করে যারা সেই খবর নিয়মিত রাখছেন তারাই মূলত ইসরাইলের ব্যাপক ভক্ত। তারাও যেনো চান সেই একই কায়দায় পাকিস্তানকে ঘায়েল করা হোক।

কারলেটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিবেক দেহেজিয়ার ইচ্ছা- ভারত, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে একটি ‘ত্রিশক্তি’ জোট গড়ে উঠুক। তবে তার এই ধারণাটিরও বিরোধিতা করেন মালহোত্রা। তার মতে- ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠুক বাস্তবতার নিরিখে, কোনো আদর্শগত ভিত্তির ওপর ভর করে নয়। কেননা, এই দুটি দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে গায়ের জোরে পরের জমি দখল করে রাখার।

ফিস্ক বলেন, ইহুদি জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদের সখ্যতার কারণে ইসরাইল থেকে যেসব অস্ত্র ভারতে আসছে সম্প্রতি সেগুলোর কিছু ব্যবহার করা হয়েছে পাকিস্তানের ভেতরে থাকা ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

5h ago