ইনিংস হারের শঙ্কা মাথায় নিয়ে দিন পার
ধারহীন বোলিং, নিস্তেজ ফিল্ডিংয়ের মাথার উপর বিশাল রানের বোঝা চেপেছিল। সেই চাপ সামলাতে যেমন দরকার তেমন শুরু হয়েছিল ব্যাটিংয়ে। আবারও একাই লড়াই করছিলেন তামিম ইকবাল। তবে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর ফের আসা যাওয়ার মিছিল। সেই মিছিল দিনের শেষভাগে সেই মিছিল কিছুটা থামিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ আর সৌম্য সরকার। তবে এখনো চোখ রাঙাচ্ছে ইনিংস হার।
হ্যামিল্টন টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে ম্যাচের লাগামো পুরোটাই স্বাগতিকদের হাতে। বাংলাদেশের ২৩৪ রানের জবাবে ৭১৫ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে কিউইরা। ৪৮১ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তুলে দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
এখনো ইনিংস হার এড়াতে তিনশোর বেশি রান করতে হবে বাংলাদেশকে। পাঁচে নামা সৌম্য অপরাজিত আছেন ৩৯ রানে, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তার সঙ্গী ১৫ রান করে। এখনো পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭৪ রান এসেছে তামিমের ব্যাট থেকে।
এর আগে উদ্বোধনী জুটি আর তামিমের ব্যাটিং ছাড়া সবটাই হতাশার গল্প। আগের দিনে ৪ উইকেটে ৪৫১ রান নিয়ে নামার পর কেন উইলিয়ামসনরা ছড়ি ঘুরিয়েছেন বাংলাদেশকে। ৯৩ রানে থাকা অধিনায়ক উইলিয়ামসন দ্রুতই তুলে নেন ক্যারিয়ারের বিশতম সেঞ্চুরি। অন্য পাশে তার সঙ্গী নাইটওয়াচম্যাম নিল ওয়েগনার শুরু করেন তাণ্ডব। তরতরিয়ে বাড়তে থাকা রান। মাত্র ৩৫ বলে ৪৭ করে ফেরেন ওয়েগনার। জুটিতে আসে ৬০ রান।
টেস্টে ইবাদত হোসেনের প্রথম শিকার হয়ে ওয়েগনার ফেরার পর বিজে ওয়েটলিংকে নিয়ে উইলিয়ামসন গড়েন ৯৬ রানের আরেক জুটি। বাংলাদেশের হতাশা বাড়িয়ে প্রভাব বিস্তার করে রাখেন তারা। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ওয়েটলিং ফেরার পর আসেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। এসেই তিনি খেলছেন ৫৩ বলে ৭৬ রানের ঝড়ো ইনিংস। বাংলাদেশের বোলারদের ইচ্ছামতো পিটিয়ে রান বাড়িয়ে নিয়েছেন দলের।
গ্র্যান্ডহোম যখন আসেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন ততক্ষণে ছাড়িয়ে গেছেন দেড়শোর গন্ডি। সপ্তম উইকেটে আর অবিচ্ছিন্ন হননি তারা। ১১০ রানের জুটির পর দলের রান ছাড়িয়ে যায় সাতশো, উইলিয়ামসন পেয়ে যান ডাবল সেঞ্চুরি। লিড ততক্ষণে পাঁচশ ছুঁইছুঁই। ইনিংস ঘোষণা তাই ছিল প্রত্যাশিতই। দুর্বল শরীরী ভাষায় মিইয়ে যাওয়া মাহমুদউল্লাহরাও যেন ছিল এমন কিছুরই অপেক্ষায়।
মাথার উপর পাহাড়সম রান নিয়ে ব্যাট করতে গিয়ে ভড়কাননি তামিম ও সাদমান ইসলাম। দুজনেই খেলছিলেন স্বচ্ছন্দে। জুটি যাচ্ছিল শতরানের দিকে। তবে প্রথম ইনিংসের মতো বাউন্সার তাক করে ফাঁদ পেতে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের আউট করা ওয়েগনারকে রুখা যায়নি। সাদমানকে তেমন এক বাউন্সারে কাবু করে ফেরান তিনি। ৮৮ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে সব এলোমেলো। ওয়ানডাউনে নেমে এই ইনিংসেও হতাশ করেন মুমিনুল হক। দুই চারে ৬ বল টিকে মাত্র ৮ রান ট্রেন্ট বোল্টের বলে ক্যাচ দেন টেইলরের হাতে।
চারে নামা মোহাম্মদ মিঠুন সাদা পোশাকে নিজের ফের করেন প্রশ্নবিদ্ধ। গালিতে ফিল্ডার রেখে বোল্ট তাকে ড্রাইভ করার যে লোভ দিয়েছিলেন তাতেই নিজেকে সঁপেছেন তিনি। রানের খাতাও খুলতে পারেননি।
১১০ রানে তৃতীয় উইকেট হারিয়ে হতবিহবল দল তবু তামিমের ব্যাটেই খুঁজছিল ভরসার গান। তামিম খেলছিলেনও বেশ। মারার বল মেরে ছাড়ার বল ছাড়ছিলেন। তেমন এক বল ছাড়তেই গিয়েই হলো সর্বনাশ। টিম সাউদির বাউন্সার ডাক করতে গিয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন, তার আগে বল তার ব্যাট ছুঁয়ে আশ্রয় নিয়েছে ওয়েটলিংয়ের গ্লাভসে।
দিনের বাকিটা সময় ৪৮ রানের জুটিতে পার করেছেন সৌম্য আর মাহমুউল্লাহ। তবে ইনিংস হারের শঙ্কা কমেনি একটুও। খুব মিরাকল কিছু চতুর্থ দিনেই এই টেস্টের ফয়সালা দেখছে স্বাগতিকরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(তৃতীয় দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৩৪
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১৬৩ ওভারে ৭১৫/৬ (আগের দিন ৪৫১/৪) (রাভাল ১৩২, ল্যাথাম ১৬১, উইলিয়ামসন ২০০* টেইলর ৪, নিকোলাস ৫৩, ওয়েগনার ৪৭, ওয়েটলিং ৩১, গ্র্যান্ডহোম ৭৬; জায়েদ, ০/১০৩, ইবাদত ১/১০৭, খালেদ ০/১৪৯, সৌম্য ২/৬৮, মিরাজ ২/২৪৬, মাহমুদউল্লাহ ১/৩, মুমিনুল ০/৩২)
নিউজিল্যান্ডের লিড: ৪৮১ রান
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৪৩ ওভারে ১৭৪/৪ (তামিম ৭৪, সাদমান ৩৭, মুমিনুল ৮, মিঠুন ০, সৌম্য ৩৯*, মাহমুদউল্লাহ ১৫*; বোল্ট ২/৫৩, সাউদি ১/৫৪, গ্র্যান্ডহোম ০/১৫, ওয়েগনার ১/৪৮, অ্যাস্টল ০/৪)
Comments