নাটকীয় জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ইউনাইটেড
কঠিন তবে অসম্ভব নয়। প্রথম লেগে ০-২ গোলে হারার পর এমন সমীকরণই ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সামনে। আগের দিনই তো প্রত্যাবর্তনের রোমাঞ্চকর গল্প লিখেছিল আয়াক্স। তাই দেখে আত্মবিশ্বাসটাও নিশ্চয় বেড়েছিল তাদের। তার পূর্ণ সদ্ব্যবহারই করল দলটি। প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) বিপক্ষে নাটকীয় এক জয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে জায়গা করে নিল ইংল্যান্ডের দলটিই। পিএসজির মাঠে তাদের ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে ওলে গানার সুলশারের শিষ্যরা।
কাজটা কঠিন জেনেই মাঠে নেমেছিল ইউনাইটেড। তবে সে কাজটাই সহজ করে দেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর (পিএসজি) গোলরক্ষক জুয়ানলুইজি বুফন ও ডিফেন্ডার থিলো কেহরার। এ দুই খেলোয়াড়ের দুই ভুলে দুইটি গোল উপহার পায় অতিথিরা। কিন্তু তাতেও জাগে শঙ্কা। কারণ একটি গোল শোধ করে দেয় পিএসজি। তবে ভাগ্যটা যে অতিথিদের সঙ্গেই ছিল। শেষদিকে ভিএআরের সহায়তায় পেয়ে যায় পেনাল্টি। আর তা থেকে গোল আদায় করে নিয়েই ইতিহাস গড়ে দলটি।
আর নিজেদের চরম দুর্ভাগা ভাবতেই পারে পিএসজি। প্রথম লেগে ইতিহাস গড়া এমন জয়ের পরও নিজেদের মাটিতে উড়ে গেল দলটি। তাও আবার ইউনাইটেডের প্রতিটি গোল এক প্রকার উপহারই দিল তারা। প্রতিপক্ষের সাফল্যের চেয়ে যে নিজেদের দায়টাই বেশি। আর শুধু যে এবার এমনটাও নয়। দুই মৌসুম আগে বার্সেলোনার বিপক্ষেও প্রথম লেগে ৪-০ গোলে এগিয়ে থেকে পরে ১-৬ ব্যবধানে হেরে বিদায় নিয়েছিল তারা। এবার তারা ইউনাইটেডের কাছে অ্যাওয়ে গোল সুবাদে বিদায় নিল। কারণ দুই লিগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে সমতাই ছিল।
এদিন ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে থিলো কেহরারের ভুলে এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। নিজেদের ডিবক্সের সামনে অধিনায়ক থিয়াগো সিলভাকে পাস দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিকভাবে দিতে না পারায় তার পেছনে থাকা রোমেলু লুকাকু বল পেয়ে যান। সে বল ধরে গোলরক্ষককে কাটিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে কোনো ভুল করেননি এ বেলজিয়ান।
তবে গোল পরিশোধ করতে খুব বেশি দেরি করেনি পিএসজি। ১২তম মিনিটেই কিলিয়েন এমবাপের দারুণ এক ক্রসে আলতো টোকায় বল জালে জড়ান লেফট ব্যাক হুয়ান বেরনাত। কিন্তু ৩০তম মিনিটে আবারো ভুল করে স্বাগতিকরা। এবার দলের অভিজ্ঞ তারকা গোলরক্ষক জুয়ানলুইজি বুফোন। ৩০গজ দূর থেকে নেওয়া মার্কাস রাশফোর্ডের শট ঠিকভাবে ধরতে না পারলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান লুকাকু। আলতো টোকায় আবারো দলকে এগিয়ে দেন তিনি।
৫৫তম মিনিটে বল জালে জড়িয়ে ছিলেন আনহেল দি মারিয়া। কিন্তু অফসাইডে থাকায় ভিএআরের সাহায্য নিয়ে গোল বাতিল করেন রেফারি। তবে ৪৮ মিনিটেই ইউনাইটেডের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে পারতেন এমবাপে। দিনের সবচেয়ে সহজ সুযোগটি মিস করেন তিনি। গোলরক্ষককে একা পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন পর্যাপ্ত সময়ও। কিন্তু গোলরক্ষককে কাটাতে গিয়েই ভুলটা করেন তিনি। পরের বল পেয়েছিলেন বেরনাত। কিন্তু তার শট পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
নির্ধারিত সময়ের শেষ সময়ে পেনাল্টি পায় অতিথিরা। বদলি খেলোয়াড় দিয়োগো দালটের শট ডিবক্সের মধ্যে হাতে লেগে যায় প্রথম লেগের প্রথম গোলদাতা প্রিসনেল কিমপেম্বের। যদিও ইচ্ছাকৃত হাতে লাগাননি তিনি। কিন্তু ভিএআরের সাহায্য নিয়ে ইউনাইটেডের পক্ষেই বাঁশি বাজান রেফারি। আর তা থেকে গোল আদায় করে নিতে কোন ভুল করেননি মার্কাস রাশফোর্ড। ফলে নাটকীয় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে সফরকারী দলটি।
অথচ এদিন ভাঙ্গাচোরা একটি দল নিয়েই খেলতে নেমেছিল ইউনাইটেড। প্রথম লেগের স্কোয়াডে থাকা ১০ জন খেলোয়াড়কেই পায়নি তারা। মাত্র ১০ জন সিনিয়র খেলোয়াড় নিয়ে ফ্রান্সে পা রাখে দলটি। নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না পল পগবা। অসুস্থ ফিল জোন্স। আর জেসে লিংগার্ড, নেমানজা মাতিচ, আন্দের হেরেরা, হুয়ান মাতা, অ্যান্তিনিও ভ্যালেন্সিয়া, মাত্তেও দারমেইন, অ্যান্থনি মার্শিয়াল ও আলেক্সিস সানচেজ রয়েছেন ইনজুরিতে। কিন্তু দ্বিতীয় সারির দল নিয়েই বাজীমাত করে দিল তারা।
দিনের অপর ম্যাচেও রোমাঞ্চকর পরিণতি হয়েছে। সে ম্যাচের শেষদিকে পেনাল্টি পেয়ে ৩-১ গোলের ব্যবধানে এএস রোমাকে হারায় এফসি পোর্তো। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট কাটে পর্তুগালের দলটি।
Comments