যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছরে ৭১ শতাংশ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গরা

সাধারণ মানুষদের ধারণা- অধিকাংশ জঙ্গি হামলার সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে- গত ১০ বছরে দেশটিতে শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা। আর মুসলমানরা জড়িত ২৬ শতাংশ হামলার সঙ্গে।
Masjid Al Noor
১৭ মার্চ ২০১৯, নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে আল নূর মসজিদে হামলার পর এক মুসলিম নারীকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন অপর এক নারী। ছবি: রয়টার্স

সাধারণ মানুষদের ধারণা- অধিকাংশ জঙ্গি হামলার সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে- গত ১০ বছরে দেশটিতে শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা। আর মুসলমানরা জড়িত ২৬ শতাংশ হামলার সঙ্গে।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক সংস্থা অ্যান্টি-ডিফেম্যাশন লিগ কাজ করে ইহুদি-বিরোধী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা নিয়ে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যতোগুলো সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো মধ্যে ৭১ শতাংশ চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদীরা। সেই দেশে মুসলিম চরমপন্থিদের হামলা হয়েছে ২৬ শতাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।

এদিকে, দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস অব অস্ট্রেলিয়া নামের স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে যে “এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।”

সিডনি-ভিত্তিক সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- “২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে (সারাবিশ্বে) উগ্র-ডানপন্থি দল ও ব্যক্তিরা ১১৩টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের।”

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়- শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই হামলা হয়েছে ৫৯টি। আর সেবছর মারা গিয়েছেন ১৭ জন। ২০১৭ সালে ১২টি হামলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে, ছয়টি সুইডেনে এবং গ্রিস ও ফ্রান্সে দুটি করে হামলা চালানো হয়েছে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয়েছে ৩০টি। তাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন।

সংস্থাটির হিসাবে সেসব হামলার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে “মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগে আক্রান্ত উগ্র-ডানপন্থি শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা।”

গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজ এর দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেগুলো তিনভাগের দুইভাগ চালিয়েছে বর্ণবাদী, মুসলমানবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, ফ্যাসিস্ট, সরকারবিরোধী এবং জাতিবিরোধী ভাবাবেগে প্রভাবিত ব্যক্তিরা।

‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শুরুতে উত্তর আমেরিকায় অনেক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জেহাদি দলগুলোর জড়িত থাকার খবর আসে। কিন্তু, গত দুই বছরে উগ্র-ডানপন্থি রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো।

এতে আরও বলা হয়, “২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নয়টি সন্ত্রাসী হামলায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। সেসব হামলার জন্যে দায়ী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা।”

প্রতিবেদনটির ভাষ্য মতে, ইসলামপন্থি সন্ত্রাসীদের কথা বেশি শোনা গেলেও বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১০ বছরে উগ্র-ডানপন্থিরাই বেশি হামলা চালিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বলেই উগ্র-ডানপন্থিরা হামলা করতে উৎসাহ পান।

তিনি বলেন, “ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রচারিত হয় উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেভাবে প্রচারিত হয় না। এখন সেদিকটিতে নজর দেওয়া সময় এসেছে। কেননা, সব জায়গাতেই উগ্র-ডানপন্থিদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।”

উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায় অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

The psychological costs of an uprising

The systemic issues make even the admission of one’s struggles a minefield

9h ago