পশ্চিমবঙ্গে সেলিব্রেটিদের ভিড় কেন রাজনীতিতে?

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন সেলিব্রেটি প্রার্থীদের ভিড়। কি শাসক কি বিরোধী দল, সব শিবিরে সিনেমা-টেলিভিশনের পর্দার চেনামুখগুলো দেখা যাচ্ছে।
(ঘড়ির কাঁটার দিক থেকে) রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, মিমি চক্রবর্তী, দেব, নুসরাত জাহান, বাবুল সুপ্রিয়, লকেট চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন সেলিব্রেটি প্রার্থীদের ভিড়। কি শাসক কি বিরোধী দল, সব শিবিরে সিনেমা-টেলিভিশনের পর্দার চেনামুখগুলো দেখা যাচ্ছে।

লোকসভা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীদের মধ্যেও সেলিব্রেটিদের উপস্থিতি আলোচনার জন্ম দিয়েছে সর্বত্র।

তবে সেলিব্রেটিদের এই ভিড় কিন্তু প্রধান দুটো রাজনৈতিক মেরুতে স্পষ্ট হয়েছে গত এক দশক ধরে। এর আগে বামফ্রন্টের দিকে বুদ্ধিজীবীদের প্রবল উপস্থিতি দেখা গেলেও গত এক দশকে সেই ছবিটাও পাল্টেছে। বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় অংশ এখন মমতা শিবিরে ভিড়েছেন।

৪২ আসনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটিতে তৃণমূল কংগ্রেস সেলিব্রেটি প্রার্থী করেছেন ছয় জনকে। এদের মধ্যে দুজন পুরুষ সেলিব্রেটি চার জন নারী।

যেমন অভিনেত্রী নুসরাত জাহান লড়ছেন ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত লোকসভা কেন্দ্র বসিরহাট থেকে। আবার শতাব্দী রায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বীরভূম আসন থেকে। সুচিত্রা কন্যা মুনমুন সেন লড়ছেন আসানসোল কেন্দ্র থেকে। আবার কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। তৃণমূলের পুরুষ সেলিব্রেটির মধ্যে দেব লড়ছেন ঘাটাল কেন্দ্র থেকে আর বিখ্যাত খেলোয়াড় প্রসূন ব্যানার্জি লড়ছেন কলকাতা লাগোয় হাওড়া কেন্দ্র থেকে।

এবার বিজেপি শিবিরেও সেলিব্রেটির সংখ্যা বাড়ছে। এখনও পর্যন্ত দুই দফায় যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দুজন সেলিব্রেটিকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। এরা হলেন, আসানসোল কেন্দ্র থেকে সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয় এবং শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়।

যদিও বিজেপি শিবিরে সেলিব্রেটির তালিকায় আছেন অভিনেত্রী রুপা গঙ্গোপাধ্যায়, সদ্য যোগ দেওয়া বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল, অভিনেতা জয় ব্যানার্জি। শোনা যাচ্ছে অগ্নিমিত্রা পালকে এবার লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী করতে পারে বিজেপি। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি তার আসন।

সেলিব্রেটিরা কেন রাজনীতিতে আসছেন? এই প্রশ্ন করা হলে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “দেখুন সমাজ সেবা করার জন্য রাজনীতি একটা বড় প্লাটফর্ম। সাধারণ মানুষের পক্ষে যেটা ইচ্ছা থাকা সত্যেও করা সম্ভব হয় না রাজনীতিতে সেটা করা যায়।”

তিনি নিজেও সমাজ সেবা করার জন্য রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন বলে যোগ করেন।

কথা হয় বাবুল সুপ্রিয়’র সঙ্গেও। তিনি বলেন, “কেউ রাজনীতির ঊর্ধ্বে নন। সবাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক আদর্শ লালন করেন। কেউ গোপনে কেউ তা প্রকাশ্যে করেন। তাই আমিও সেরকম। রাজনীতির আদর্শ যা লালন করেছি সেটাই করছি।

তৃণমূল নেতা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, পশ্চিমবঙ্গে শুধু সেলিব্রেটি তারকারাই নন সব ক্ষেত্রের মানুষ মমতা ব্যানার্জিকে পছন্দ করেন। অনেকেই চান প্রকাশ্যে তার দলের প্রতি সমর্থন দিতে। তাই অনেকেই আসছেন দলে। সেলিব্রেটিরাও তো মানুষ। তাদের জন্য দরজা খোলা থাকে।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দ্য ডেইলি স্টারকে এই প্রসঙ্গে বলেন, “দেখুন রাজনীতিতে আসতে চান অনেকেই। অনেকে দলটা ভেতরে ভেতরে করেন। কেউ আবার প্রকাশ্যে। একটা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবাই রাজনীতি করতে পারেন। সেলিব্রেটিরাও আসছেন। বিজেপিতে তাদের গ্রহণ করা হচ্ছে।”

মিমি চক্রবর্তী এবং নুসরাত জাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দুজনই জানান, মমতা ব্যানার্জি তাদের আদর্শ। চলচ্চিত্রে তারা দুজনই জনপ্রিয় বলে নিজেরা মনে করেন। সেই জনপ্রিয়তাকে এবার রাজনীতির ময়দানে কাজে লাগিয়ে দিল্লিতে সংসদে গিয়ে রাজ্যের মানুষের জন্য দুজনই কিছু করে দেখাতে চান এবং অবশ্যই সেটা তাদের দল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশক্রমে।

Comments