লোকসভা নির্বাচন: নজর কাড়ছে ১৭ আসন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর জোরকদমে প্রচার-প্রচারণা চলছে।
Loksabha Elections
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করার পর জোরকদমে প্রচার-প্রচারণা চলছে।

কলকাতা থেকে কোচবিহার কিংবা বজবজ থেকে মেদিনীপুর- সর্বত্রই একই চিত্র।

তবে এর মধ্যে ভোটারদের কাছে কিছু আসন নানা করণে নজর কাড়ছে। আর ওই আসনগুলো নিয়ে গণমাধ্যমেও রয়েছে বাড়তি উৎসব।

রাজ্যের সেই ৪২ আসনের মধ্যে এই নজরকাড়া আসনগুলো হচ্ছে কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর, মেদিনীপুর, ঘাটাল, আসানসোল, বসিরহাট, বীরভূম, ব্যারাকপুর, কোচবিহার, বাঁকুড়া, রায়গঞ্জ, মুর্শিদাবাদ, শ্রীরামপুর, হুগলী, জঙ্গীপুর এবং ডায়মন্ড হারবার।

কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে লড়ছেন সাতবারের জয়ী সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বর্ষীয়ান তৃণমূল কংগ্রেস নেতা লোকসভায় তৃণমূলের চিফহুইপও। মমতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই নেতার স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্থানীয় বিধায়ক এবং অভিনেত্রী।

কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে এবার সুদীপের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা। গত লোকসভা নির্বাচনের রাহুল সিনহা এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ৭৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে সুদীপের কাছে হেরেছেন এক সময়ের বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল। কেন্দ্রটিতে বামফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কনীনিকা ঘোষ। বামনেত্রী হিসেবে তার পরিচিত রয়েছে রাজ্যজুড়ে।

কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রে এবার তৃণমূলের প্রার্থী মালা রায়। তিনি কলকাতা পুরসভার চেয়ারপার্সন এবং বর্ষীয়ান তৃণমূল নেত্রী। তার বিরুদ্ধে বামফ্রন্টের প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়। আর এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী নেতাজি পরিবারের সদস্য চন্দ্র কুমার বসু। নন্দিনী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বর্ষীয়ান বামনেত্রী। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃণমূল-প্রার্থী সুব্রত বক্সির কাছে হেরেছিলেন তিনি।

কলকাতার দক্ষিণের পাশেই আরেকটি তারকা কেন্দ্র এবার যাদবপুর। সেই কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে লোকসভায় লড়ছেন অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী। স্বাভাবিকভাবে দেশের মানুষ তো বটেই বিশ্বজুড়ে তার ভক্ত-অনুসারীদের নজর থাকবে এই কেন্দ্রের ভোটযুদ্ধের দিকে। তার বিরুদ্ধে লড়ছেন বামফ্রন্টের বর্ষীয়ান নেতা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র এবং আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। এখানে বিজেপির প্রার্থী অনুপম হাজারা। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত এই নেতা যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। আলোচিত এই নেতা মুকুল রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলেও পরিচিত। ফলে এই কেন্দ্রটিকে তারকাকেন্দ্র কিংবা হেভিওয়েটদের কেন্দ্র বলে মনে করা হচ্ছে।

কলকাতার বাইরে ব্যারাকপুর আসনে এবার গত দুই বারের জয়ী সাংসদ, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দিনেশ ত্রিবেদী লড়ছেন। আর সেখানেই লড়ছেন তৃণমূল থেকে সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া ডানপিটে নেতা হিসেবে পরিচিত অর্জুন সিং।

বসিরহাট কেন্দ্রে এবার তৃণমূল প্রার্থী করেছে অভিনেত্রী নুসরাত জাহানকে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মুসলমান অধ্যুষিত এই কেন্দ্রে এর আগের সাংসদ ছিলেন তৃণমূলের ইদ্রিস আলি। জেতা আসনে এবার সেলিব্রেটি প্রার্থী দিয়ে আরও এগিয়ে তৃণমূল। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির শীর্ষ নেতা ও আলোচিত মুখ সায়ন্তন বসু। অভিনয়খ্যাতি ও তৃণমূলের দলীয় সমর্থনের সঙ্গে বিজেপির প্রার্থীর লড়াই কতোটা জমবে তা জানার আগ্রহ রয়েছে রাজ্যের মানুষের।

আসানসোলের প্রার্থী এবার দুই তারকা। বিজেপির গতবারের জয়ী বাবুল সুপ্রিয় এবং এবার তৃণমূল কংগ্রেসের মুনমুন সেন। বাবুল সুপ্রিয় শুধু বিজেপি নেতাই নন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও। আর মুনমুন সেন বাঁকুড়া থেকে তৃণমূলের বিজয়ী সাংসদ। এই দুই তারকার মধ্যে রাজনৈতিক লড়াই দেখার আগ্রহ বাড়ছে ক্রমশ।

মেদিনীপুরের ঘাটাল কেন্দ্রে এবারও প্রার্থী অভিনেতা দেব। গতবারের জয়ী সাংসদ তিনি। তৃণমূলের এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবার বিজেপি প্রার্থী করেছেন মেদিনীপুর জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকে। গত কয়েক মাস আগে তিনি সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন এবং সম্প্রতি যোগ দেন বিজেপিতে। পুলিশ সুপার থাকাকালীন তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এমনকি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে তিনি জঙ্গলমহলের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কিন্তু, তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলের দূরত্ব তৈরি হলে তিনি শুধু পুলিশ সুপারের পদ থেকেই নয় ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস থেকেও অব্যাহতি নেন এবং বিজেপিতে যুক্ত হন। যে কারণে এই ঘাটাল কেন্দ্রের দিকে নজর রাজ্যবাসীর।

হুগলীর আসনের দিকে এবার নজর রয়েছে ভোটারদের। কারণ সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিজেপির মহিলা মোর্চা প্রধান ও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। সেখানে ইতিমধ্যেই তৃণমূলের গতবারের জয়ী সাংসদ ডাক্তার রত্না নাগকে প্রার্থী করা হয়েছে। দুই নারীর লড়াই দেখতে মরিয়া রাজ্যবাসী।

এবার বাঁকুড়ার প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী সুব্রত মুখার্জি। জঙ্গীপুর আসনের এবার কংগ্রেসের প্রার্থী প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জি, বিজেপির প্রার্থী এবার মাহফুজা খাতুন। মাহফুজা বর্ষীয়ান বামনেত্রী ছিলেন। তিনবার জয়ী বিধায়কও ছিলেন তিনি। তবে বেশ কয়েক বছর আগেই তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। কাজ করছেন বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের সঙ্গে। জঙ্গীপুর আসনের ৬৮ শতাংশ মুসলিম ভোট। এই ভোট ব্যাঙ্কে প্রণবপুত্র নাকি মাহফুজা খাতুন কে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেন- সেটিই দেখার বিষয়। আর তা দেখতেই উৎসাহ সবার।

মুর্শিদাবাদের বহরমপুর আসনে লড়ছেন রবিনহুড নামে পরিচিত কংগ্রেসনেতা অধীর চৌধুরী। বেশ কিছুদিন তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির দায়িত্ব সামলিয়েছেন। অধীর চৌধুরীর গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে অন্য বিরোধী দলের তেমন প্রভাব নেই। তবে পরিস্থিতি রাজ্য জুড়েই পাল্টেছে। অধীরের বিরুদ্ধে এবার বিজেপি-তৃণমূলের জোড়া প্রার্থী রয়েছে। তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হুমায়ন কবীরকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। অন্যদিকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন অপূর্ব সরকার।

বীরভূমের দুবারের জয়ী সংসদ সদস্য অভিনেত্রী শতাব্দী রায়। তার বিরুদ্ধে এবার বিজেপির প্রার্থী দুধকুমার মণ্ডল। নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত বিজেপির ওই প্রার্থী। আর অভিনেত্রী হিসেবে স্বাভাবিকভাবেই সবার নজরে শতাব্দীর আসান।

ডায়মন্ড হারবারের কেন্দ্রে গতবারের মতো এবারও প্রার্থী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্য তৃণমূলের যুব শাখার সভাপতি তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসে মমতার পর অভিষেকই এখন নেতার প্রধান মুখ। ফলে এই কেন্দ্রের দিকেও নজর রয়েছে সবার।

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago