মমতার দলের ইশতেহারে মোদি সরকারে তদন্তের প্রতিশ্রুতি

Trinamul
২৭ মার্চ ২০১৯, কলকাতার কালীঘাটে নিজের বাড়ি তথা দলের প্রধান অফিসে ইশতেহার প্রকাশ করছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: স্টার

ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস তাদের দলীয় ইশতেহার প্রকাশ করেছে। কেন্দ্রে সরকার গড়লে কিংবা তাদের লোকসভা অধিবেশনে গিয়ে কী বিষয়ে দাবি তুলবেন তৃণমূল সাংসদরা- সে বিষয়ে এই ইশতেহারে পরিষ্কার বর্ণনা দেওয়া হয়।

ইশতেহারের দুটি দিক রেখেছে তৃণমূল। এক দিকে রয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে এবং অন্যদিকে এককভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য তাদের দলের উন্নয়নমূলক কর্মসূচির খতিয়ান।

গতকাল (২৭ মার্চ) বিকালে কালীঘাটের নিজের বাড়ি তথা দলের প্রধান অফিসে বসে এক-এক করে ইশতেহারে প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরেন দলের নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেন্দ্রে সরকার গড়লে কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম বা নূন্যতম জাতীয় কর্মসূচির রূপায়ণ করা হবে। সেখানে জিএসটি এবং বিমুদ্রাকরণের বিষয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করা হবে। সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে এই তদন্ত করানো হবে বলে জানান তৃণমূল নেত্রী। একই সঙ্গে রাজ্যে-কেন্দ্রে ১০০ দিনের কর্মসূচি বাড়িয়ে কমপক্ষে ২০০ দিন কাজের সুযোগ রাখার কথা জানান মমতা। বলেন, দৈনিক মজুরি দ্বিগুণ করার কথা আমরা বলছি।

ইশতেহার ঘোষণা করতে গিয়ে মমতা বলেন, “অসংগঠিত শ্রমিকদের ৬০ বছর বয়সের পর ভাতা দেওয়া হবে। আমরা ১০০ দিনের কাজকে ২০০ দিনে নিয়ে যেতে চাই। কৃষকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। দৈনিক মজুরি দ্বিগুণ করতে চাই।”

মমতা বলেন, “আমরা যোজনা কমিশনকে ফিরিয়ে আনব। ক্ষমতায় এলে জিএসটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।” তিনি দাবি করেন, মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। বিজ্ঞান, গবেষণা, সাংস্কৃতিক দিক থেকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও মমতা তার ইশতেহারে দাবি করেন। মমতার আরও দাবি, সব ধর্ম রাজ্যে সসম্মানে পালিত হয়।

তিনি কেন্দ্রের সমালোচনা করে বলেন এমনভাবে জিএসটি চালু করা হয়েছে, যাতে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। জিএসটি এবং নোটবন্দি দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।

“গরিব মানুষদের ন্যায্য অধিকার দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য” উল্লেখ করে প্রশ্নও তোলেন মমতা। বলেন, “নোট বাতিল কার স্বার্থে, কেনো হয়েছিলো, তদন্ত চাই। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত হোক। ১৫ লাখ টাকা দেননি মোদী, বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরেনি।”

স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে তার দৃঢ় দাবি, এমন কেউ নেই, যে বাদ পড়েছে। এমনকি, কেবল অপারেটর ও কর্মীদেরও এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে বলেও দাবি মমতার। প্যারা টিচারদের মাইনে বাড়ানো ছাড়াও বেশ কিছু ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা জানান তৃণমূল নেত্রী।

মমতার ইশতেহার প্রকাশের সময় বিজেপির বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন। বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি এবং দলটির সভাপতি অমিত শাহ ছিলো তার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য।

মমতা বলেন, আদভানীকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। দলের সবচেয়ে বর্ষীয়ান নেতাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিজেপি বর্ষীয়ান নেতাদের সম্মান দিতে শেখেনি। যদিও এটা বিজেপির অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেও মন্তব্য করেন। মোদির সমালোচনা করে মমতা বলেন, নিজেদের নাম ভুলে ‘চৌকিদার’ করেছেন সবাই।

গতকাল মিশন শক্তি নিয়েও সমালোচনার স্বর চওড়া করেন মমতা। বলেন, ‘মিশন শক্তি’র বিষয়ে ২০১০ সালেই ডিআরডিও জানিয়েছিলো, এই ক্ষমতা তাদের রয়েছে। “অর্থাৎ আমরা তখন থেকেই এই শক্তিধর ছিলাম। এখন লোকসভা ভোটের সময় সেটা ঘোষণা করে তার কৃতিত্ব নিলেন মোদি। উনি কি কিছু করেছেন? গবেষণায় কি যোগদান রয়েছে ওনার?” মমতার কটাক্ষ।

তিনি আরও বলেন, “মোদি নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের জন্য কে কে শর্মাকে পুলিশ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু যাকে নিয়োগ করেছে কমিশন, তাকে উর্দি পরে আরএসএস-এর অনুষ্ঠানে দেখা গিয়েছে। কেনো ওই ব্যক্তিকে নিয়োগ করা হলো? এটা কি গণতন্ত্র?”

মমতার এই সময় কেন্দ্রের অগণতান্ত্রিক আচরণের প্রমাণ দিতে গিয়ে বলেন, “আমার মোবাইল ট্র্যাক করা হয়েছে, আমার কাছে প্রমাণ আছে। প্রতিটি ফোন কল, প্রতিটি এসএমএস তারা দেখতে পারে। কোথায় স্বাধীনতা? এটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি।”

মমতা তার প্রচার কর্মসূচি প্রসঙ্গে কথা জানান, আগামী ৩১ মার্চ থেকে ভিন-রাজ্যে প্রচারে যাবেন।

Comments

The Daily Star  | English

Jatiya Party central office vandalised, library set on fire in Kakrail

Protesters linked to Gono Odhikar Parishad demand ban on JP, accuse it of siding with Awami League

4h ago