মৃত্যু হলেই তথ্য খুঁজি

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। যদিও কেউ মারা যায়নি, ছড়িয়েছিল আতঙ্ক। হাতে লাগানো স্যালাইন, ক্যাথেটার নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে হয়েছিল রোগীদেরকে।
ছবি: প্রবীর দাশ

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন লাগল ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। যদিও কেউ মারা যায়নি, ছড়িয়েছিল আতঙ্ক। হাতে লাগানো স্যালাইন, ক্যাথেটার নিয়েই প্রাণ বাঁচাতে ছুটতে হয়েছিল রোগীদেরকে। পরে দেখা গেল হাসপাতালগুলোর অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। পরের দিন থেকে শুরু হলো হাসপাতালগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দৌড়-ঝাঁপ। গঠন করা হলো একের পর এক তদন্ত কমিটি।

তার কিছুদিন পর আগুন লাগল চকবাজারে। পুড়ে কয়লা হলো ৭১টি তাজা প্রাণ। সরকার, ফায়ার সার্ভিস, ব্যবসায়ী সবাই উঠে পড়ে লাগল আবাসিক এলাকা থেকে কেমিক্যাল কারখানা সরানোর জন্য।

চকবাজারের রেশ কাটতে না কাটতেই আগুন লাগল বনানীর বহুতলে। আগুনে আটকে পড়া মানুষগুলোর বাঁচার সে-কি আকুতি। জীবন বাঁচাতে লাফিয়ে পড়েছেন ভবনের বিভিন্ন তলা থেকে। কাচ ভেঙে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়েছেন অনেকেই। সিঁড়ি বন্ধ থাকায় ইন্টারনেটের তার বেয়ে নামার চেষ্টা করতে গিয়ে মরতে হয়েছে। দিন শেষে মৃতের সংখ্যা গিয়ে ঠেকল ২৬।

সব মহলের টনক নড়লো বিল্ডিংয়ের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। ফায়ার সার্ভিস ও রাজউকের ঘুম ভাঙল। রাজউক শুরু করলো বিল্ডিং ইন্সপেকশন। বেরিয়ে আসতে শুরু করল বিল্ডিংগুলোর দুর্বল অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

তার একদিন পরেই আবার আগুন লাগল গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেটে। আবার শুরু হলো মার্কেটের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার তল্লাশি।

গত শনিবার ঘটে গেলে আরেক দুর্ঘটনা। বরগুনার একটি স্কুলের ছাদ ধসে মারা গেলো তৃতীয় শ্রেণির এক শিশু। আহত হলো তার আরও তিন সহপাঠী। এ ঘটনার পর যথারীতি সরকার আবার নড়েচড়ে বসেছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিলেন দেশের সকল ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন চিহ্নিত করতে। এখন হয়তো শুরু হবে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবন চিহ্নিত করনের কাজ।

প্রত্যেকটি ঘটনার পর দেয়া হয় শোকবাণী, লাশের সঙ্গে দেওয়া হয় নামমত্র ক্ষতিপূরণ, গঠিত হয় তদন্ত কমিটি, শুরু হয় সরকারী কর্মকর্তাদের হম্বিতম্বি। কিছুদিন হৈচৈ তারপর যাহা লাউ তাহাই কদু। মাঝখানে জান যায় নিরীহ মানুষের।

উপরের সবগুলো ঘটনায় একটি সাধারণ চিত্র পাওয়া যায় তা হলো মানুষ মারা যাওয়ার পরেই আমাদের ঘুম ভাঙে। মনে হয় তার আগ পর্যন্ত আমরা কুম্ভকণের্র ঘুমে ছিলাম। যে ঘুম ভাঙাতে আমাদের দরকার লাশ। লাশের ওপর দাঁড়িয়ে আমাদের শুরু হয় তথ্য সংগ্রহের তোড়জোড়।

আমরা কি আবারও কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে পড়ব, নাকি লাশের জন্য অপেক্ষা করব—নতুন কোনো ঘটনাই তা বলে দিবে।

মোহাম্মদ আল-মাসুম মোল্লা: সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago