আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র

পার্থক্য গড়ে দেবে গোর্খা ভোট

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে এবার গেরুয়া হাওয়ার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের সংগঠনের জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে বিজেপির ভরসা মোদি হাওয়া, আর তৃণমূলের হাতিয়ার তাদের সংগঠন।
election bengal
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে এবার গেরুয়া হাওয়ার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের সংগঠনের জমজমাট লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এই কেন্দ্রে বিজেপির ভরসা মোদি হাওয়া, আর তৃণমূলের হাতিয়ার তাদের সংগঠন।

এই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে শহরের মধ্যবিত্ত ভোটারদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদির হাওয়া প্রভাববিস্তার করলেও, এই লোকসভার অন্তর্গত চা বাগানে তৃণমূলের সাংগঠনিক শক্তি ঘাসফুল শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন যোগাচ্ছে। এই কেন্দ্রে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোট, ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের ফল পর্যালোচনা করে এবারে সম্ভাব্য ফলের পূর্বাভাস পাওয়া বেশ কঠিন।

কারণ, ২০১৭ সালে গোর্খাল্যান্ড ইস্যুকে কেন্দ্র করে ডুয়ার্সের ৩৯৬টি মৌজা বিমল গুরুংয়ের দাবি মতো গোর্খাল্যান্ডের অন্তর্ভুক্ত করতে চাওয়ায় আদিবাসী বিকাশ পরিষদের নেতা জন বারলার সঙ্গে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকির গোলমাল বাঁধে।

যার জেরে সংগঠনচ্যুত হন জন বারলা। তবে বিমল গুরুংকে খুশি করতে ডুয়ার্সের ৩৯৬টি মৌজাকে গোর্খাল্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে চাওয়ার ইনাম স্বরূপ বিমল গুরুং বিজেপি নেতৃত্বকে বলে-কয়ে আলিপুরদুয়ারে জন বারলাকে বিজেপির প্রার্থী করেছেন। তবে জন বারলার প্রার্থীপদ নিয়ে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই রয়েছে চাপা অসন্তোষ। তার উপর সম্প্রতি আলিপুরদুয়ারে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভায় গোর্খাদের অনুপস্থিতি গেরুয়া শিবিরকে চিন্তায় ফেলেছে।

২০১৬ সালে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাট বিধানসভা নির্বাচনের সময় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার ১০০ শতাংশ সমর্থন ছিলো বিজেপির দিকে, কিন্তু ২০১৭ সালে পাহাড়ে বিমল গুরুং এবং বিনয় তামাংয়ের মধ্যে বিরোধের পর ডুয়ার্সে বেশিরভাগ গোর্খারা আজ বিনয় শিবিরে। ফলে এই কেন্দ্রে বরাবরের ঐতিহ্য মোতাবেক গোর্খা ভোট যেদিকে ঢলবে সেদিকেই পাল্লা ভারী হবে।

যদিও আলিপুরদুয়ারের বিজেপি নেতৃত্ব এই সমীকরণকে মানতে নারাজ। বিজেপির আলিপুরদুয়ারের জেলা নেতা হেমন্ত কুমার বলেন, এবারের ভোটে কোনো অঙ্কই কাজ করবে না। ভারতের সুরক্ষায় মোদিজীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বের জেরে দেশে এখন প্রবলভাবে বইছে বিজেপি হাওয়া। তার উপর গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের জোর জবরদস্তির রাজনীতি, পঞ্চায়েত স্তরে প্রতিটি কাজের জন্য তৃণমূল নেতাদের তোলা আদায়, এসবের নিট ফল এবারে বিজেপি জিতছে এই কেন্দ্রে।

গত লোকসভা নির্বাচনে এই আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রে তৃণমূলের দশরথ তিরকে মাত্র ২১ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। দ্বিতীয়স্থানে ছিলেন আরএসপি। আর আরএসপি প্রার্থীর থেকে মাত্র হাজার পাঁচেক ভোট কম পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। এবারেও তৃণমূলের প্রার্থী দশরথ তিরকে। তবে এবারের লড়াইতে যে আরএসপি প্রার্থীও বেশ ভালোভাবে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন সেকথা জানিয়ে দিলেন আলিপুরদুয়ার আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনিল বণিক। তিনি বলেন, মানুষের বিজেপির প্রতি মোহভঙ্গ হয়েছে। আর তৃণমূল তো দাদাগিরি আর কমিশন খেয়ে নিজেদের পায়ে নিজেরাই কুড়াল মেরেছে।

এবারে আরএসপির প্রার্থী মিলি ওঁরাও। আলিপুরদুয়ার আরএসপির জেলা সম্পাদক সুনিল বণিক বলেন, আমরা এবারে লড়াইতে আছি।

উল্লেখ্য, এই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৮২টির মতো চা বাগান রয়েছে। এই সমস্ত চা বাগানের শ্রমিক সংখ্যা এই কেন্দ্রের মোট ভোটারের প্রায় ৪২ শতাংশ। তৃণমূলের দাবি, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উদ্যোগ নিয়ে এখানে একের পর এক বন্ধ চা বাগান খুলিয়েছেন। চা বাগানের শ্রমিকদের রেশন সুনিশ্চিত করেছেন। আশা, এবারে চা বাগানের শ্রমিকদের ভোট তাদের সঙ্গে থাকবে।

তাই এবারের লোকসভা নির্বাচনে এই আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রে চা বাগানগুলিতে তৃণমূল শক্তপোক্ত সংগঠন; অন্যদিকে, এই কেন্দ্রের শহরাঞ্চলে বিজেপির ‘মোদি হাওয়া’ এই দুইয়ের লড়াইয়ে আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের ভোট এবার বেশ জমবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank to rescue problem banks

The Bangladesh Bank is set to rescue problem banks including some Shariah-based banks controlled by S Alam Group by managing liquidity or merging a few.

2h ago