এ মৃত্যুর দায় কার

ছবি: প্রবীর দাশ

জীবন বাঁচাতে জীবন বাজী রেখেছিলেন সোহেল। মৃত্যুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন, লড়াইও করেছিলেন। এই লড়াইয়ে কি হেরে গেলেন? না হারেননি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কর্তব্য কী? জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন জীবন জীবনের জন্য, মানুষ মানুষের জন্য।

গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মানুষের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসে দমকল বাহিনী। ঘটনাস্থলে পৌঁছেই কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা উঁচু ল্যাডারে (মই) উঠে আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার করছিলেন। মইয়ের ওপরের পাটাতনে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় তিনি কিছুটা নেমে উদ্ধারকৃতদের জন্য জায়গা করে দেন।

কিন্তু নিয়তির অমোঘ পরিণতি সোহেলকে নিয়ে যায় অন্যদিকে। হঠাৎ সোহেলের শরীরে লাগানো নিরাপত্তা হুকটি মইয়ের সঙ্গে আটকে যায়। তিনি মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন। এ সময় তার একটি পা ভেঙে যায় এবং তিনি পেটে মারাত্মক আঘাত পান। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সেখানেই মারা যান সোহেল।

একটি জলজ্যান্ত প্রাণ, একটি দায়িত্বশীল প্রাণ ঝরে গেল অকালে।

ফায়ার ফাইটার হিসেবে যারা কাজ করেন তাদের বড় একটি অংশ আসে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে। যারা কখনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকেনা বরং অনিয়মের বলি হয়। আর অনিয়মকারীরা থেকে যান ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।

উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১৪ সালের শেষের দিকে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন সোহেল। তার রোজগারেই ভরণপোরষণ চলছিল পুরো পরিবারের। ছোট তিন ভাইয়ের পড়া-লেখার খরচও জোগাতেন সোহেল। সোহেলের মৃত্যুর পর তার পুরো পরিবার পড়েছে এক অন্ধকার অনিশ্চয়তার মধ্য। হয়তো কিছু ক্ষতিপূরণ পাবে সোহেলের পরিবার কিন্তু যারা এই আগুন লাগার সঙ্গে জড়িত, যারা অবৈধভাবে ভবন তৈরি করেছে, পুরো বাইশ তলা ভবনটিকে একটি মৃত্যুকুপ বানিয়েছে তারা কি বিচারের আওতায় আসবে? ক্ষতিপূরনের অংকটাও হাস্যকর । ফায়ার সার্ভিস অফিসে কথা বলে জানা গেলো সর্ব্বোচ্চ ৩-৪ লাখ টাকা পাবে। গত ১৫ বছরে দমকল বাহিনীর ৮ জন কর্মী নিহত ও প্রায় ৮০০ জন আহত হয়েছেন। কয়জনের কথা আমরা জানি।

সরকারি বিভিন্ন অফিসের বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি অনিয়ম তথ্য আমরা পত্রিকায় পড়ি। কিন্তু আপনারা কি বলতে পারেন ফায়ার সার্ভিসের দুর্নীতি বা অনিয়মের কথা। আমার চোখে অন্তত পড়েনি। রাত-দিন, ঝড়-বাদল প্রকৃতি যত বিরূপই থাকুক ৯৯৯ এর এক কলেই ফায়ার ফাইটাররা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। হয়ে ওঠেন মানুষের আশা ভরসার জায়গা। কিন্তু তাদের ভরসার জায়গায় কি আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরেও যেতে পেরেছি?

নায়ক-নায়িকা, মডেল, গায়ক-গায়িকা,খেলোয়াড়। এদের কেউ ভালো কিছু করলে আমরা প্রশংসায় ভাসিয়ে দেই, প্রেমে পড়ি৷ ব্যথা পেলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হই। প্রকৃতপক্ষে তারা কেউই ‘হিরো’ নন। তারা সবাই ‘এন্টারটেইনার’। অর্থের বিনিময়ে বিনোদন দেন। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়ত মানবিক কিছু কাজ করে থাকেন৷ কিন্তু আমরা কখনো মানুষের জন্য জীবন বাজি রাখি না। রাখতে পারিনা। অত বড় কলিজা সবার থাকে না। জীবন বাজি রেখে আগুনের সঙ্গে যুদ্ধ করে ফায়ারফাইটার রানা বাঁচিয়েছিলেন অনেককে। শুধু নিজেকেই বাঁচাতে পারলেন না।

আরও পড়ুন:

জীবনের সঙ্গে লড়াইয়ে হেরে গেলেন দমকলের লড়াকু সোহেল

Comments

The Daily Star  | English
Starlink satellite

How to order your Starlink device from Bangladesh

Bangladeshi customers can place orders directly through Starlink’s official website at starlink.com. 

56m ago