বৈশাখ হোক প্রতিবাদের

বৈশাখী আমেজ চারিদিকে। আসমান থেকে জমিনে, হাটে, মাঠে, ঘাঁটে, বাঁটে, মার্কেট, শপিংমল, মিষ্টির দোকানে কোথায় নেই। মোবাইল ফোনে কিছুক্ষণ পরপরই টুংটাং মেসেজের এলার্ট, তাও বৈশাখী শুভেচ্ছা। ফেসবুকের ওয়াল যতক্ষণ স্ক্রল করে নিচে নামা যায়, তাতেও বৈশাখী শুভেচ্ছা। সর্বত্রই একটা উৎসবের আমেজ। কারণ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখ সবচেয়ে বড় উৎসব।
pahela baishakh
১৪ এপ্রিল ২০১৮, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে সকাল নয়টায় বের করা হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। ছবি: প্রবীর দাশ

বৈশাখী আমেজ চারিদিকে। আসমান থেকে জমিনে, হাটে, মাঠে, ঘাঁটে, বাঁটে, মার্কেট, শপিংমল, মিষ্টির দোকানে কোথায় নেই। মোবাইল ফোনে কিছুক্ষণ পরপরই টুংটাং মেসেজের এলার্ট, তাও বৈশাখী শুভেচ্ছা। ফেসবুকের ওয়াল যতক্ষণ স্ক্রল করে নিচে নামা যায়, তাতেও বৈশাখী শুভেচ্ছা। সর্বত্রই একটা উৎসবের আমেজ। কারণ ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল বাঙালির কাছে পহেলা বৈশাখ সবচেয়ে বড় উৎসব।

সবাই যখন আনন্দে মাতোয়ারা নতুন বছরকে নেচে গেয়ে স্বাগত জানানোর জন্য। আমার মন কাঁদছে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আবরার কিংবা আগুনে পুড়িয়ে মারা নুসরাতের জন্য। আপনাদের কি কাঁদছে? নাকি এরই মধ্য ভুলে গেছেন?

৬ এপ্রিল ফেনীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি পরীক্ষা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা তার গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। গুরুতর অবস্থায় ওই দিন রাতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত বুধবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান।

নুসরাত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বইছে ক্ষোভের ঝড়। নুসরাতের মারা যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ, হতাশা প্রকাশের পাশাপাশি হত্যার সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন সবাই। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন কয়েকদিন পরেই হয়তো আলোচিত নতুন কোনো ঘটনা ঘটলে সবাই আবরারের মতো নুসরাতকেও ভুলে যাবে। ঘটলোও তাই। বৈশাখী আমেজে নুসরাত হারিয়ে গিয়ে এখন সবার আলোচনায় বৈশাখী উৎসব।

বৈশাখের কিছু চিরায়ত চরিত্র রয়েছে। বৈশাখ মানেই তীব্র দাবদাহ, ঝড়-তুফান, ঈশান কোণে খণ্ড খণ্ড মেঘের খেলা, মাতাল হাওয়া, থেমে থেমে মেঘের গর্জনের সাথে বিদ্যুতের ঝলকানি।

বৈশাখের এই রূপটাই সবার কাছে পরিচিত। বৈশাখের অন্যরূপও আছে।

বৈশাখ মানেই মুক্তির জয়গান। এই বৈশাখেই প্রকৃতি নতুনভাবে জেগে ওঠে তেজদীপ্ত টগবগে ঘোড়ার মতো। সব জঞ্জাল, সব জড়া, সব দুখ, সব হতাশা ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করে গড়ে তোলার অঙ্গীকারের সময় হলো এই বৈশাখ।

বৈশাখ আপসহীন, তার প্রবহমানতা সর্বব্যাপী এবং সর্বগ্রাসী। ইংরেজ কবি শেলির ‘ওয়েস্ট উইন্ড’ এর মতোই অপ্রতিরোধ্য। কবি তার কবিতায় ‘ওয়েস্ট উইন্ড’কে সম্বোধন করেছেন ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট উইন্ড’ বলে। তিনি ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট উইন্ড’কে আহ্বান করেছেন অনাচার, ব্যভিচার ও অত্যাচারীদের ধ্বংস করে এক সুন্দর পার্বণমুখর মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠা করতে।

ঠিক তেমনিভাবে পহেলা বৈশাখ আমাদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানায়। পুরাতনকে মুছে ফেলে নতুন উল্লাসে, নতুন জীবন শুরু করার।

এ বছর পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা হোক প্রতিবাদের। নুসরাত, আবরাররা থাকুক বৈশাখের শোভাযাত্রার অগ্রভাগে, থাকুক আমাদের মনে, চিন্তা চেতনায় প্রতিবাদের এক বিমূর্ত প্রতীক হয়ে। নুসরাত বা আবরারের জন্য সকলের চোখের জল হয়ে উঠুক আগুনের গোলার মতো মহাপরাক্রমশালী, মহাসবল।

Comments