যা প্রাধান্য পেল বাংলাদেশ দল নির্বাচনে

Bangladesh
ছবি: স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

কোন পনেরোজন থাকছেন বাংলাদেশের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে তা অনেকটা অনুমিতই ছিল। যে দু'একটি জায়গা নিয়ে দোলাচল ছিল তাও জটিল কিছু নয়। আলোচনায় থাকলেও কেন ইয়াসির আলি রাব্বির নয়, বেছে নেওয়া হয়েছে মোসাদ্দেক হোসেনকে। আবার আলোচনায় না থেকেও কেন তাসকিন আহমেদকে হটিয়ে জায়গা করলেন আবু জায়েদ রাহী। কেন টপ অর্ডারে জায়গা হলো না ইমরুল কায়েসের। নির্বাচকদের সব ব্যাখ্যা আছে। দেখে নেওয়া যাক কোন বিচারে কেমন হলো দল।

অভিজ্ঞতায় সেরা বাংলাদেশ

এই বিশ্বকাপে অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। দলে আছেন সিনিয়র এমন পাঁচ ক্রিকেটার যারা প্রত্যেকেই দশ বছরের বেশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পার করে দিয়েছেন। মাশরাফি মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল আর মুশফিকুর রহিম খেলতে যাচ্ছেন চতুর্থ বিশ্বকাপ। মাহমুদউল্লাহ খেলবেন তার তৃতীয় বিশ্বকাপে।

এই পাঁচজনই যে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশনের মূল চালিকাশক্তি হবেন, তা বহু আগে থেকেই চূড়ান্ত।

বাউন্সি উইকেটের সাবলীলতা, স্ট্রাইকরেট বেশি রাখার সামর্থ্য

ধারণা করা হচ্ছে এবারের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে উইকেট থাকবে ব্যাটিং বান্ধব। আগে ব্যাট করলে বড় পূঁজি দাঁড় করাতে হবে, পরে ব্যাট করলে ডিঙাতে হবে রানের পাহাড়।

দ্রুত রান তুলতে হবে, এই চাহিদায় বাংলাদেশের টপ অর্ডারে এমন কিছু ব্যাটসম্যান দরকার ছিল যারা বল দ্রুত আসে এমন উইকেটে মেরে খেলতে পারেন। সাম্প্রতিক ফর্ম বাদ দিলেও এই জায়গায় সৌম্য সরকার (স্ট্রাইকরেট ৯৮.৬০) ও লিটন দাস (স্ট্রাইকরেট ৭৯.৭৪), ইমরুল কায়েস ( স্টাইকরেট ৭১.১০) থেকে এগিয়ে ছিলেন। সহজাত স্ট্রোক খেলার সামর্থ্য তাদের দুজনেরই বড় শক্তির জায়গা।

যেহেতু এক প্রান্তে তামিমের দায়িত্ব থাকবে ইনিংস ধরে রাখা। অন্য প্রান্তে দরকার চালিয়ে খেলার। তাই সৌম্য বা লিটন যেই খেলুন কিংবা দুজনেই খেললেও রানরেটের চাপ না বাড়িয়ে খেলার ভরসা তাদের উপর সঙ্গত কারণেই করছে টিম ম্যানেজমেন্ট। নির্বাচকরা অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন সাম্প্রতিক সময়ে বাজে ফর্মের কারণেই নেই ইমরুল।

সম্ভাব্য সেরাদের নিয়েই পেস আক্রমণ

অন্যদলের তুলনায় বাংলাদেশ পেস আক্রমণকে বলা যায় বেশ গড়পড়তা। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে রসদ বের করে মাশরাফি তার শেষ বিশ্বকাপে বড় কিছু করতে চাইবেন। রুবেল হোসেন গতি, শর্ট বল আর রিভার্স স্যুয়িং করানোর সামর্থ্য দিয়ে প্রভাব ফেলতে পারেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যাকে নিয়ে আশা সেই মোস্তাফিজুর রহমান কেমন করবেন তা নিয়ে আছে সংশয়। ইংলিশ কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ছিলেন সাদামাটা। কারণ তার বল গ্রিপ করাতে যেমন উইকেট দরকার ইংল্যান্ডে শুরুর দিকে তা থাকবে না। কাজেই মোস্তাফিজের কাটার ভোঁতা হওয়ার শঙ্কা থেকেই যায়। তাকে হয়ত উইকেট নেওয়ার চেয়ে রান আটকানোতে বেশি মন দিতে দেখা যেতে পারে। যতটুকুই কার্যকর হোন, ফিজের বিকল্প বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেই।

পেস অলরাউন্ডার হিসেবে শুরু করলেও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের বোলিং এখন আগে চেয়ে বেশি ধারালো। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে তাকে আউটস্যুয়িং করাতে দেখা গেছে। বিশ্বকাপেও তিনি তা করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য হবে বিশাল পাওয়া। সেই সঙ্গে শেষ দিকে তার ব্যাটিং তো বাড়তি পাওনা

চোট সেরে নেমে পুরো ছন্দ দেখাতে না পারলেও তাসকিন আহমেদ ছিলেন আলোচনায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা পেসার আবু জায়েদ রাহীকে বেছে নিয়েছেন নির্বাচকরা।

রাহী এগিয়ে গিয়েছেন কন্ডিশনের কারণে। দুই দিকে বল স্যুয়িং করানোর সহজাত সামর্থ্য আছে তার। ইংলিশ কন্ডিশনে রাহীর স্যুয়িং কাজে লাগাতে চায় দল। তবে নির্বাচকদের কথা ম্যাচ ফিটনেস থাকলে হয়ত তাসকিনই পেতেন জায়গা।

স্পিনাররা সবাই ব্যাটিংয়েও পটু

মূল স্পিনার হিসেবে সাকিবের সঙ্গে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইংল্যান্ডের কন্ডিশন যাই থাকুক, বাংলাদেশের বোলিংয়ে তাদের থাকবে বড় ভূমিকা। এছাড়া বিশ্বকাপের শেষ দিকে উইকেট শুষ্ক হয়ে গেল স্পিনাররাও নিয়ামক হয়ে যাবেন।  ওয়ানডে দলে যেকোন বিচারে এই দুজনই বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণের মূল শক্তি। যেহেতু টুর্নামেন্ট অনেক লম্বা, প্রতিপক্ষ আর পরিস্থিতি বিবেচনায় মিরাজের বিকল্প হতে পারেন মোসাদ্দেক। কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যাটিং সামর্থ্যে এগিয়ে থাকবেন তিনি। বাংলাদেশের বড় সুবিধা স্পিনারদের সবাই ব্যাটিংয়েও পারদর্শী। কাজেই একজন ব্যাটসম্যান কম খেলিয়ে বোলিংয়ে অপশন বেশি রাখার জায়গাও খোলা থাকল। এই জায়গায় মোসাদ্দেকের চেয়ে পিছিয়ে যান ইয়াসির। গত বেশ কিছু দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফর্ম করার পুরস্কার অবশ্য ইয়াসির পেয়েছেন আয়ারল্যান্ড ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে সু্যোগ পেয়ে।

লেগ স্পিনারের অভাব

মোটামুটি মানের একজন লেগ স্পিনার পেলেও নিঃসংকোচে বোধহয় তাকে দলে নিয়ে নিতেন নির্বাচকরা। ইংলিশ কন্ডিশনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন  এমন রিস্ট স্পিনার আছে সব দলেই। কেবল বাংলাদেশ খুঁজে পায়নি কাউকে। মাশরাফি মর্তুজার দলের বোলিং বৈচিত্র্য, শক্তির গভীরতায় বড় এক ঘাটতি হয়ে থাকবে এই জায়গা।

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

13m ago