ছয়জন আসছেন, একজন যাচ্ছেন?

হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠে এসেছে একটি আলোচনা। শোনা যাচ্ছে যে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবাসের অবসান হতে যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে।
Khaleda Zia
গত ১ এপ্রিল ২০১৯ বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। ছবি: আমরান হোসেন

হঠাৎ করেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উঠে এসেছে একটি আলোচনা। শোনা যাচ্ছে যে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবাসের অবসান হতে যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে।

৭৪ বছর বয়সী অসুস্থ খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া এবং তাকে ‘চিকিৎসার’ জন্যে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা গোপনে আলোচনা করছেন। দুই দলের নেতাদের মধ্যে ‘সমঝোতা’ হওয়ার প্রেক্ষিতে এখন এই বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে।

‘সমঝোতা’ অনুযায়ী, দুর্নীতির দায়ে ১৪ মাস থেকে কারাভোগ করা খালেদাকে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যেই লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শীর্ষ বিএনপি নেতা গতকাল (১৫ এপ্রিল) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “ছয়জন আসছেন, একজন চলে যাচ্ছেন।” ছয় নবনির্বাচিত সদস্য সংসদে যোগ দিচ্ছেন এবং দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া বিদেশে যাচ্ছেন-এমনই ইঙ্গিত তার।

তিনি আরও বলেন, “খালেদা জিয়া আগামী ২৫ বা ২৬ এপ্রিল লন্ডনের ফ্লাইটে উঠবেন। তার চলে যাওয়ার পর নির্বাচিত এমপিরা শপথ নিতে পারেন।”

বিএনপির নির্বাচিত ছয় এমপির শপথ নেওয়া শেষ তারিখ আগামী ২৯ এপ্রিল।

কিন্তু, পত্রিকার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে চাওয়া হলে কেউ কিছু বলতে রাজি হননি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং নির্বাচিত ছয়জনের একজন গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “এগুলো ভিত্তিহীন, গুঞ্জন। আমি প্যারোল সম্পর্কে কিছুই জানি না। তার (খালেদা) সঙ্গে প্যারোলের বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। এটি আমাদের দলের ইস্যুও নয়।”

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। তার বিরুদ্ধে আরও ৩৪টি মামলা থাকায় তিনি জামিন নিশ্চিত করতে পারেননি।

খালেদা জিয়া বর্তমানে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা এই সংবাদদাতাকে বলেন, খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি এবং তার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা করতে সরকারের একজন উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়েছে।

পর্দার আড়ালে বিষয়টি নিয়ে সরকার এবং বিএনপির নেতাদের মধ্যে দেনদরবার চলছে। বিএনপি যদি ছয় নির্বাচিত সদস্যের সংসদে যোগদানের ব্যাপারে রাজি হয় তাহলে তাদের দলপ্রধানকে প্যারোলে মুক্তি দিতে সরকার রাজি হতে পারে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতরাতে ডেইলি স্টারকে বলেন, নিয়ম মেনে আবেদন করলে সরকার যে কোনো অভিযুক্ত বা সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারে।

তার মতে, “যদি কেউ প্যারোলে মুক্তি পেতে চান তাহলে তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। তারপর, মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে।”

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

৬ এপ্রিল তিনি বলেছিলেন যে চিকিৎসার জন্যে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে খালেদা জিয়া আবেদন করলে সরকার তা বিবেচনা করে দেখতে পারে।

গতকাল মির্জা ফখরুল বলেন, প্যারোলের জন্যে আবেদন করা হবে কী না সে বিষয়টি দলপ্রধান এবং তার পরিবারের ওপর নির্ভর করছে।

গত ১৪ এপ্রিল দুজন দলীয় নেতাকে নিয়ে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছিলেন ফখরুল। পরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “যেহেতু খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি দলের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, তাই সে বিষয়ে তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি।”

তারা দলপ্রধানের চিকিৎসা এবং বিভিন্ন মামলার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।

দলের নির্বাচিত ছয়জনের শপথ নেওয়ার বিষয়ে দলপ্রধানের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কী না জানতে চাওয়া হলে তিনি নেতিবাচক উত্তর দেন।

বলেন, “আমরা মনে করি না, বর্তমান সংসদ নির্বাচিত সংসদ। আমরা এই তথাকথিত নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি।”

গতরাতে ফখরুলসহ নির্বাচিত বিএনপির ছয় সদস্য দলপ্রধানের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। কিন্তু, সেই বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা করা হয় তা জানা যায়নি।

চিকিৎসকদের মতে, খালেদা জিয়া হাতে-পায়ের জয়েন্টে ব্যথা, নিদ্রাহীনতা এবং উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে খালেদা লন্ডনে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বড় ছেলে তারেক রহমান, ছেলের স্ত্রী এবং মেয়েদের সঙ্গে প্রায় এক মাস কাটিয়েছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

10h ago