অতীত ভুলে গেছেন সুজন!

২০০৩ সালের কথা। তখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই টেস্টে সহজেই জয় পায় পাকিস্তান। কিন্তু তৃতীয় টেস্টে অবিশ্বাস্য লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। বলা যায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল টাইগাররা। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন ইমজামাম উল হক। হৃদয় ভাঙার গল্প তো সেই থেকে শুরু।
ছবি: সংগ্রহীত

২০০৩ সালের কথা। তখন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। প্রথমবারের মতো  পাকিস্তানে টেস্ট সিরিজ খেলতে যায় বাংলাদেশ। প্রথম দুই টেস্টে সহজেই জয় পায় পাকিস্তান। কিন্তু তৃতীয় টেস্টে অবিশ্বাস্য লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। বলা যায় জয়ের দ্বারপ্রান্তে ছিল টাইগাররা। কিন্তু সেখান থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন ইমজামাম উল হক। হৃদয় ভাঙার গল্প তো সেই থেকে শুরু।

এরপর আরও অনেকবারই হৃদয় ভেঙেছে বাংলাদেশ দলের। এই পাকিস্তানের সঙ্গেই ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনালে মাত্র ২ রানে হারে টাইগাররা। হারের পর সেদিন অনেকটা হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন মুশফিকুর রহিম। কেঁদেছিলেন তৎকালীন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেনের মতো শক্ত ধাঁচের মানুষও। যে ছবি বাংলাদেশের সমর্থকদের হৃদয়ে গাঁথা।

তবে প্রসঙ্গ বর্তমান নয়, সুদূর ২০০৩ সালেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর এক ভদ্রলোক প্যান্টের পেছনে ঝুলিয়ে রাখা সাদা রুমালে চোখ মুছতে মুছতে মাঠ ছাড়ছিলেন। যে ছবিও টাইগার সমর্থকদের হৃদয়ে গাঁথা। সে ভদ্রলোক আর কেউ নয়। অধিনায়ক সুজন। ২৬১ রানের লক্ষ্য দিয়ে ১৬৪ রানেই ৭ উইকেট ফেলে দিয়ে ছিল তার দল। কি দুর্দান্ত বোলিংই না করেছিলেন সুজন। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩টি।

কিন্তু সুজনের বোলিং তোপ যথেষ্ট হয়নি ইনজামামের ঐতিহাসিক এক ইনিংসে। কেড়ে নেয় টাইগারদের স্বপ্ন। অন্যথায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ের নায়ক হতে পারতেন সুজন। হয়নি। হৃদয় ভেঙেছে। তাই কান্না লুকাতে পারেননি সুজন। না পারাটাই স্বাভাবিক।

এবার আসি বর্তমানে। গত মঙ্গলবার ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় দলের বিশ্বকাপ স্কোয়াড। সে দলে জায়গা হয়নি তাসকিন আহমেদের। এমনকি হয়নি আয়ারল্যান্ড সিরিজেও। দল ঘোষণার মিনিট ৩০ পর তার কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রতিক্রিয়া। কেঁদে দিয়েছেন তাসকিন। হৃদয় ভাঙার ধাক্কাটা কি এতো অল্প সময়ে ভোলা যায়? ২০১১ সালে কান্না লুকাতে পারেননি যে মাশরাফি বিন মুর্তজাও।

কিন্তু তাসকিনের কান্না ভালো লাগেনি সুজনের। রীতিমতো তোপ দাগিয়েছেন, ‘একটা খেলোয়াড়ের মন খারাপ থাকবে? আমি খুব কাছের মানুষের সাথে বিষয় গুলো শেয়ার করব। কাছের মানুষ বলতে আমার বাবা, মা, বন্ধু, পরিবার যারা খুব কাছের। কিন্তু এটা জনসম্মুখে আসা ঠিক না। আমি সবসময় তাসকিনকে অন্য চোখে দেখি, খুব ছোট থেকে তাসকিনকে দেখে এসেছি। আমার কাছে ভালো লাগেনি।’

ভালো না লাগাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি সুজন। প্রশ্ন তুলেছেন তার বড় হওয়া নিয়েও, ‘সে বড় হচ্ছে। সে ১৯ বছরের ছোট নয়। খেলোয়াড়দের খারাপ সময় যাবে, ভালো হবে।’ বিশেষকরে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে আলোচনা পছন্দ হয়নি সুজনের, ‘যেভাবে এটা মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসেছে আমি মনে করি এটা যে কোনো জাতীয় দলের খেলোয়াড়ের জন্য অসম্মানের। এটা শিশুসুলভ আচরণ। মানসিক দিক থেকে আমাদের শক্তিশালী হতে হবে।’

অথচ সেদিন ম্যাচ হেরে কান্না নিজেই লুকাতে পারেননি সুজন। বলতেই পারেন, ম্যাচ হারা আর দল বাদ পড়া কি এক? হয়তো বাংলাদেশের জন্য মুলতান টেস্ট জিতলে ঐতিহাসিক কিছু হয়ে যেত। দিনশেষে একটা ম্যাচই। আর একজন খেলোয়াড়ের অন্যরকম স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ নিয়ে। এমন নয় যে তার সাম্প্রতিক সময়ে অফ ফর্মে ছিলেন। বিপিএলে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন। বাদ পড়েন ইনজুরির কারণে। সে ইনজুরি থেকে ফিরতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। ফিরেছেনও। এক ম্যাচ বাদে দ্বিতীয় ম্যাচেই ছন্দ পেলেন। বিশ্বকাপে না হোক আয়ারল্যান্ড সিরিজে দলে থাকতেই পারতেন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। হৃদয় তো ভেঙেছে এ গতিতারকার। তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় কান্না কি খুব অস্বাভাবিক?

আর সব কথাই বাদ। সুজন তো ম্যাচ থেকে হারার পরও কান্না পছন্দ করেন না। এদিন বললেনও অকপটে, ‘আমরা শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলি। এখানে তো অনেক কঠিন অবস্থা আসবে, এখানে যদি আপনি হেরে কাঁদেন তাহলে কঠিন। কঠিন অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’ অথচ মাত্র ১৬ বছরেই মুলতানের স্মৃতি ভুলে গেছেন সুজন।

লেখক: ক্রীড়া প্রতিবেদক, দ্য ডেইলি স্টার। 

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

7h ago