শান্তি তবে কোথায়?

Shangri-La
শ্রীলঙ্কার নেগোম্বোর একটি গির্জায় যিশু খ্রিস্টের মূর্তিতে রক্তের ছোপ। ছবি: রয়টার্স

রক্তের হোলি খেলা চলছে বিশ্বজুড়ে। আজ ইউরোপ তো কাল এশিয়া, পরশু মধ্যপ্রাচ্য। দৃশ্যমানভাবে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন ছোট এক ধর্মান্ধ গোষ্ঠী দ্বারা। নেপথ্যে পরাশক্তিধর দেশগুলোর অনৈতিক দখলদারিত্বের প্রতিযোগিতা।যার পরিণতিতে বয়ে চলছে রক্তের ধারা। সন্ত্রাসীর রক্ত আর ভিকটিমের রক্তে একাকার হয়ে যেনো বইছে রক্তের বন্যা।

কিছুদিন আগে শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডে মসজিদে ভয়াবহ হামলা আর মৃত্যুর মিছিল সবাই দেখেছেন।

সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই শ্রীলঙ্কায় হামলা। মাত্র ৩৫ দিনের ব্যবধানে ঘটলো দুটি সন্ত্রাসী হামলা। দুই হামলাতেই প্রার্থনারত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডর মসজিদে মুসলমান আর শ্রীলঙ্কার গির্জায় খ্রিস্টান।

এই হামলার শিকার হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ দেশটির ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের তিনটি বড় গির্জা সেন্ট অ্যান্থনির চার্চ, সেন্ট সেবাস্তিয়ানের চার্চ আর জিয়ন চার্চে পবিত্র ইস্টার সানডের প্রার্থনায় সমবেত হয়েছিলেন হাজারো মানুষ।

হামলার অন্যতম লক্ষ্য ছিলো কলম্বোর পাঁচতারা হোটেল শানগ্রি-লা, কিংসবারি এবং সিনামন গ্র্যান্ডের বিদেশি পর্যটকরাও।

ইস্টার সানডে’কে সামনে রেখে সাতটি স্থানে হামলায় শ্রীলঙ্কায় প্রায় তিনশ মানুষ মারা গেছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন বিদেশি। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে এই ঘটনার পার্থক্য হলো ধর্মীয়স্থানের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কায় তিনটি হোটেলেও আক্রমণ চালানো হয়েছে।

স্বাধীন দেশের জন্য ২৬ বছর লড়াই করার পর তামিল টাইগারদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটলেও গৃহযুদ্ধ স্থায়ীভাবে অবসানের পর শ্রীলঙ্কায় এতো বড় রক্তপাত এই প্রথম।

সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিংহলী সম্প্রদায়ের আক্রমণের শিকার হয়েছে মসজিদ। এর জের ধরে ২০১৮ সালের মার্চে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিলো।

আবার একইভাবে শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায় গত বেশ কয়েক বছর ধরেই কোণঠাসা বা চাপের মুখে রয়েছে। শ্রীলঙ্কায় খ্রিস্টানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন এনসিইএএসএল এর মতে, গত বছর অন্তত ৮৬টি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে শ্রীলঙ্কার খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে। এবছর এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা এখন পর্যন্ত ২৬টি। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে মার্চের ২৫ তারিখ। সেদিন একজন বৌদ্ধ পুরোহিতকে প্রার্থনায় যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছিলো।

এবার তাহলে দেখা যাক শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যার দিকটি। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার ৭০.২% বৌদ্ধ, ১২.৬% হিন্দু, ৯.৭% মুসলিম ও ৭.৪% খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী।

সারাবিশ্বের দৃষ্টি এখন শ্রীলঙ্কায়। শান্ত দেশটিতে হঠাৎ কেনো এই অশান্তি? একদিন পার হয়ে গেলেও এখনো এই বর্বরোচিত হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। অধিকাংশ হামলাস্থলেই আত্মঘাতী আক্রমণ হয়েছে বলে প্রাথমিক প্রতিবেদনগুলোতে জানা গেছে।

ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কার কিছু সূত্র হামলার পেছনে ‘ন্যাশনাল তৌহিদি জামাত’ (এনটিজে) নামে স্থানীয় একটি মুসলমানপ্রধান সংগঠনের দিকে ইঙ্গিত করলে তারা বিষয়টি অস্বীকার করছে এবং হামলাকারীদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে। কিন্তু, শ্রীলঙ্কার সরকারের এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য এখনো পাওয়া যায়নি।

এই হামলার সঙ্গে কারা জড়িত, কেনো জড়িত সেটি হয়তো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তে বেড়িয়ে আসবে। তবে একথা বলাই যায় যে, যারাই হামলা চালিয়েছে তারা তাদের অস্তিত্বের জানান দিতে চেয়েছে এবং তারা সংখ্যালঘু। কারণ, স্বাভাবিকভাবে বলা যায়- যদি শুধু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ই হতো আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু তবে হোটেলে আক্রমণ হতো না।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই একটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। রাস্তায় মানুষ মরে, বেড়াতে গিয়ে মরে, নামাজ পড়তে গিয়ে মরে, গির্জায় উপাসনা করতে গিয়ে মরে। হত্যার যেনো মড়ক লাগছে।

কিসের আশায়, কিসের নেশায় এ রক্ত বন্যা? মসজিদ, মন্দির, গির্জা সবই আজ আক্রান্ত, শান্তি তবে কোথায়?

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank signals market-based exchange rate regime

The central bank will allow the exchange rate of the dollar to be determined by market forces

51m ago