আমিরাতকে হারিয়ে শুভ সূচনা বাংলাদেশের মেয়েদের
গোল করেছেন সিরাত জাহান স্বপ্না। গোল করেছেন কৃষ্ণা রানি সরকারও। তাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় বাংলাদেশের। কিন্তু এ দুই তারকা মিলেই মিস করেছেন কমপক্ষে দুই হালি গোল। ফাঁকা বার পোস্টে কিংবা গোলরক্ষককে একা পেয়েও বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে পারেননি তারা। এমনকি ফাঁকায় দাঁড়ানো সতীর্থদেরও পাস দেননি। ফলে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৯ আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপে বড় জয় মেলেনি লাল-সবুজ জার্সিধারীদের।
র্যাংকিংয়ে অবশ্য বাংলাদেশের চেয়ে ২৯ ধাপ এগিয়ে আমিরাত। তবে সেটা বিবেচনা করা হয় জাতীয় দলের ক্ষেত্রেই। বয়সভিত্তিক দলে বাংলাদেশের মেয়েরা গত কয়েক বছর ধরে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসছে। শেষ তিনটি টুর্নামেন্টে তো চ্যাম্পিয়নই তারা। ফেবারিট তকমাটা ছিল মৌসুমিদের গায়েই। মাঠের তার প্রতিফলনও স্পষ্ট। কিন্তু অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে খেই হারিয়েছে দলটি। অন্যথায় ব্যবধানটা হতে পারতো আরও অনেক বড়। ৩৩টি শট নিয়েও মাত্র দুই গোল। যারমধ্যে লক্ষ্যে ছিল ২২টি।
আগের দিনই গোলাম রব্বানি ছোটন বলেছিলেন রক্ষণাত্মক ফুটবল না খেলে এবার আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলবে বাংলাদেশ। তাই একাদশে জায়গা হয়নি নিয়মিত ডিফেন্ডার মাশুরা পারভিন। তাতে মাঝ মাঠের নিয়ন্ত্রণ ছিল বাংলাদেশেরই। ম্যাচের প্রথম ১০ মিনিট গোছানো ফুটবল খেলতে পারেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। বারবার পড়েছেন আরব আমিরাতের পাতানো অফসাইডে। তবে প্রথম গোল পায় তাদের পাতানো অফসাইডের ফাঁদ ভেঙেই। ১২তম মিনিটে নিজেদের অর্ধ থেকে লম্বা করে বাড়ানো মৌসুমির ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দারুণ শটে বল জালে পাঠান স্বপ্না।
পরের মিনিটে আবারো গোল পেতে পারতো বাংলাদেশ। ডান প্রান্ত থেকে আড়াআড়ি দারুণ ক্রস করেছিলেন মৌসুমি। কিন্তু গোলমুখে ঠিকভাবে পা লাগাতে ব্যর্থ হন কৃষ্ণা। এর দুই মিনিট পর তো অবিশ্বাস্য এক মিস করেন স্বপ্না। সতীর্থের বাড়ানো বলে আমিরাত গোলরক্ষক আয়া ওয়ালিদ মালালাকে একা পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি তিনি। গোলরক্ষক বরাবর ভলি নিলে তা সহজেই ফিরিয়ে দেন মালালা।
২০ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় ভালো পেয়েছিলেন সামসুন্নাহার। গোলমুখে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে নিজেই শট নিতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন তিনি। অথচ সামনে ফাঁকায় দাঁড়িয়েছিলেন তিন বাংলাদেশি খেলোয়াড়। ১০ মিনিট পর ব্যবধান বাড়ায় বাংলাদেশ। কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে লাফিয়ে দারুণ হেড নেন কৃষ্ণা। ফলে বল জড়ায় জালে। শেষ মুহূর্তে অবশ্য হেড দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মৌসুমি। তবে তার আগেই লক্ষ্যভেদ হয়।
৩৪ মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর দুই দফা সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমে ডান প্রান্ত থেকে দারুণ ক্রস করেছিলেন মৌসুমি। ফাঁকা বাড়ে অল্পের জন্য লাফিয়ে নাগাল পাননি কৃষ্ণা। পেছন থেকে সে বল ধরে সামসুন্নাহারও ভালো ক্রস করেছিলেন। কিন্তু গোলমুখে ঠিকভাবে পা লাগাতে ব্যর্থ হন মৌসুমি। ম্যাচের যোগ করা সময়ে প্রায় ৩৫ গজ দূর থেকে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন আঁখি খাতুন। কিন্তু গোলবারে লেগে বাইরে চলে যায় বল।
৪৮ মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর দারুণ সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। ডি বক্সের মধ্যে ডান প্রান্ত থেকে আড়াআড়ি ক্রস করেছিলেন সানজিদা আক্তার। ফাঁকায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন সামসুন্নাহার। কিন্তু গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি। পরের মিনিটে তো অবিশ্বাস্য আরও একটি মিস করেন স্বপ্না। কৃষ্ণার বাড়ানো বলে গোলরক্ষককে একেবারে ফাঁকায় পেয়েও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি। গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি।
৫৯ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় তিন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে মালালাকে একা পেয়েও গোলমুখে গিয়ে দুর্বল শট নেন স্বপ্না। পরের মিনিটে আরও একটি সহজ সুযোগ মিস। বাঁপ্রান্ত থেকে স্বপ্নার ক্রসে ঠিকভাবে পা লাগাতে পারেননি কৃষ্ণা। ৭০ মিনিটে মৌসুমির হেড থেকে ফাঁকায় হেড দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন স্বপ্না। কিন্তু মাথা ছোঁয়াতে পারেননি। সুযোগ ছিল কৃষ্ণারও। কিন্তু লক্ষে শট নিতে পারেননি। পরের মিনিটে আবারো অবিশ্বাস্য মিস। এবার কৃষ্ণা। বাঁপ্রান্ত থেকে মারিয়া মান্ডার ক্রসে ফাঁকা পোস্টে হেড দিতে পারেননি তিনি।
৭৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে মার্জিয়ার জোরালো শট সহজেই লুফে নেন গোলরক্ষক মালালা। তিন মিনিট পর মার্জিয়ার ক্রস থেকে স্বপ্না বুদ্ধিদীপ্ত শট নিতে পারলে ব্যবধান বাড়ত বাংলাদেশের। তবে তার দুর্বল শট লুফে নেন গোলরক্ষক মালালা। ৭৮ মিনিটে মিনিটে সতীর্থের পাস থেকে একেবারে ফাঁকায় বল পান মৌসুমি। সময় নিয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি। পরের মিনিটে আমিরাত গোলরক্ষক মালালার ভুলে প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে শেষ মুহূর্তে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন মালালা। যোগ করা সময়ে মার্জিয়ার শট বারপোস্টের অনেক উপর দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
Comments