ট্রায়াঙ্গল থেকে রানা প্লাজা: প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ

বাংলাদেশের ৪৪ লাখ তরুণ প্রাণের জীবন আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে মেশিন-কারখানা আর মালিক-সরকারের সঙ্গে। শান্তনা, সমাপ্তি, মারথা, ব্রজেশ্বর, সাগরিকা, হৃদয়সহ রানা প্লাজার হাজারো শ্রমিকের শুধু জীবন নয়, মরণও জড়িয়ে ছিলো একইভাবে। মেশিন ভবন, রড-ইট-সুরকি; বড় বড় বিম, ধুলোবালি; রক্ত-মাংস; অন্ধকার সব একাকার হয়ে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে তাদের প্রাণ কেড়ে নেয়।
rana plaza collapsed
২০১৩ সালে সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজার দৃশ্য। এএফপি ফাইল ফটো

বাংলাদেশের ৪৪ লাখ তরুণ প্রাণের জীবন আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে মেশিন-কারখানা আর মালিক-সরকারের সঙ্গে। শান্তনা, সমাপ্তি, মারথা, ব্রজেশ্বর, সাগরিকা, হৃদয়সহ রানা প্লাজার হাজারো শ্রমিকের শুধু জীবন নয়, মরণও জড়িয়ে ছিলো একইভাবে। মেশিন ভবন, রড-ইট-সুরকি; বড় বড় বিম, ধুলোবালি; রক্ত-মাংস; অন্ধকার সব একাকার হয়ে অক্টোপাসের মতো জড়িয়ে তাদের প্রাণ কেড়ে নেয়। ভবন ধসের ১০ দিন আগেই ছিলো বাংলা নববর্ষ। রানা প্লাজার অনেকেই পহেলা বৈশাখে নতুন জামা কিনেছেন। ঘুরতে গেছেন কেউ। এলাকার আশে-পাশে দল বেঁধে বন্ধু কিংবা পরিবার পরিজন নিয়ে স্টুডিওতে গিয়ে ছবিও তুলেছেন। মেলা থেকে কেউ কিনেছেন ছোট-খাটো জিনিস। বাড়িতে একটু ভালো কিছু রান্নাও করেছেন। দিনগুলো এভাবেই দুর্ভোগে ও নানা স্বপ্নে কেটেছে। নতুন বছরের মাত্র ১০ দিনে জীবনের সব বদলে যাবে কে জানতো?

ওই দিন ছিলো ২৪ এপ্রিল, বুধবার, বৈশাখের প্রখর রৌদ্রতপ্ত একটি দিন। নয়তলা ভবনের তৃতীয়তলা থেকে অষ্টমতলা পর্যন্ত পাঁচটি কারখানা। ফাটলের খবর একটু একটু জানলেও কারও ধারণা ছিলো না- কী হতে যাচ্ছে। ভয়ে ছিলো মাসের শেষে কাজে না গেলে কী পরিণতি হতে পারে তাই নিয়ে। হাজিরা-বোনাস হারানোসহ নানা দুশ্চিন্তা কাজ করেছে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল রংপুর বিভাগ এবং বরেন্দ্র ও খরাপীড়িত রাজশাহী বিভাগের নানা জেলা এবং ঢাকার আশ-পাশসহ মোট ৫৯ জেলার শ্রমিকরা সেদিনও সময় মতো কাজ শুরু করে। দিনের শুরু হয় মেশিনের পরিচিত শব্দে। জীবন-মরণের সন্ধিক্ষণ তারা পার করছে কে জানতো? কদিন বাদেই মাস ফুরোবে। মাসের শুরুতে হাতে কিছু টাকা আসবে। সেই টাকায় দোকানের দেনা পরিশোধ, বাসা ভাড়া; মাস চালানো; শখের কিছু কেনা; বাড়িতে টাকা পাঠানো এমনই ভাবনা ছিলো কাজের ফাঁকে ফাঁকে। একদিন বাদেই শুক্রবার। কেউ ভাবছিলো, শুক্রবারে যদি জেনারেল না খাটিয়ে ছুটি দেয় তাহলে কোথাও ঘুরতে যাবে, সারাদিন ঘরে কাজ করবে; কিংবা বৃহস্পতিবার রাতেই সপ্তাহের কিছু কাজ সেরে পরদিন একটু দেরি করেই না হয় ঘুম থেকে উঠবে… ইত্যাদি।

সব কিছুর অবসান হয় মাত্র এক ঘণ্টারও কম সময়ে। সকাল পৌনে ৯টার দিকে জেনারেটর ছাড়ার পরপরই বিকট আওয়াজে সব ধসে পড়ে। এরপরের ঘটনা সবার জানা। ভবন মালিক, কারখানার মালিক এবং সরকারের অবহেলায় প্রাণ হারায় হাজারো শ্রমিক। যাদের বড় অংশের বয়স ছিলো ১৩ থেকে ৩০ এর মধ্যে। আর শতকরা ৫৮ ভাগ ছিলো ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্যে। বেতন ছিলো ৩,০০০ টাকা। দেখতে দেখতে ছয় বছর পার হলো। এখনো দায়ী ও দোষীদের বিচার ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনা হয়নি। তাহলে এতো প্রাণের বিনিময়ে কী অর্জিত হলো, জীবিত শ্রমিকরা কী পেলো? শ্রমিক আন্দোলন কতোটা জোরদার হলো?

এসব ভাবনায় ইতিহাসের শরণাপন্ন হই। পোশাক কারখানার সূত্রপাত যে আমেরিকা শহরে সেখানে চোখ ফেরাই। তাগিদ বোধ করি আমেরিকা-ইউরোপ থেকে এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা ও আফ্রিকার মতো মহাদেশে পোশাক কারখানা স্থানান্তরের কারণ বোঝার। উৎসুক হই, মহাসমুদ্রের ওপার থেকে এপারে কারখানা স্থানান্তর আমাদের দেশের তরুণদের জীবনে কী প্রাপ্তিযোগ ঘটিয়েছে তা অনুসন্ধানে। ইতিহাসের পথ ধরে তাই ট্রায়াঙ্গল কারখানার আগুন লাগা এবং প্রাণহানির ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকাই।

প্রায় শত বছরেরও আগে আমেরিকা শহরের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ওয়াশিংটন স্কয়ার পার্ক এবং নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গা ঘেঁষেই ছিলো ১০তলা ভবন, ট্রায়াঙ্গল শার্টওয়েস্ট কোম্পানি। যেটি এখন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ভবন। ওই সময় ভবন মালিকরা ছিলো ইউনিয়ন এবং শ্রমিক স্বার্থের নীতির বিরোধী। আইসাক হ্যারিস এবং ম্যাক্স ব্ল্যাংকের মালিকানায় এই কারখানায় কাজ করতো পাঁচ-ছয়শ শ্রমিক। যাদের বড় অংশই ছিলো অভিবাসী। ১৮৯০ এর প্রথম দিক থেকে ইতালি এবং পূর্ব ইউরোপের নানা দেশ থেকে উন্নত ভবিষ্যতের আশায় যারা নানান সময়ে অভিবাসী হিসেবে আমেরিকায় গিয়েছিলো। সে সময় তারা চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করত ট্রায়াঙ্গলে। সপ্তাহে গড়ে ৭ থেকে ১২ ডলারের মতো পেতো, আর কাজ করতে হতো ১২ ঘণ্টারও বেশি। কারখানায় আগুন লাগার ঘটনার আগে থেকেই আন্দোলন চলছিলো। মজুরি বাড়ানো, কম সময় কাজ, উন্নত কর্ম পরিবেশের দাবিতে।

১৯০৯ সালে ইন্টারন্যাশনাল লেডিস গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন (ILGWU) একটি ধর্মঘটের নেতৃত্ব দেয় নিউইয়র্কে। এই সংগঠনটি প্রায় বিশ হাজার সদস্য নিয়ে তখন উদীয়মান ছিলো। যাদের বেশকিছু সদস্য ছিলো ট্রায়াঙ্গল কারখানায়। ধর্মঘটের পর বেশকিছু কারখানার মালিক শ্রমিকদের সাথে আপস-রফা করলেও, ট্রায়াঙ্গলের মালিকরা কোনো মীমাংসায় না গিয়ে শ্রমিকদের ছাঁটাই এবং পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তার করে।

ওই শ্রমিক আন্দোলনের দুই বছরের মাথায় ট্রায়ঙ্গলে আগুন লাগে। ২৫ এপ্রিল ১৯১১ এর সেদিন ছিলো শনিবার। চারপাশে বসন্তের হাওয়া। বিকাল পৌনে ৫টার মতো বাজে। শ্রমিকরা অপেক্ষায় ছিলো আসছে রবিবারে ছুটি আর পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর আশায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে সব চুরমার হয়ে আগুনে মারা যায় ১৪৬ জন। এরা ছিলো সব ইতালীয় এবং রুশ ইহুদি ধর্মাবলম্বী। এর মধ্যে ১২৩ জনই ছিলো নারী। সবচেয়ে কমবয়সী কেট লিওন এবং রোসারিয়া ম্যালটেস ছিলো ১৪ বছরের। মোট মৃত ১৪৬ জনের ৬২ জন বাঁচার আশায় কারখানা ভবন থেকে ঝাঁপিয়ে পরে মরে। ওই সময় ভবনের বাইরে বের হওয়ার পথ ছিলো বন্ধ। অন্যান্য সময়ও মূল গেট বন্ধ থাকত যাতে শ্রমিকরা কাজের সময় বের হতে না পারে। সেদিন আর আগুন নেভানোর ব্যবস্থা করা যায়নি। এলিভেটর ভেঙ্গে পড়েছিলো মাত্র চারবার ওঠানামার পরই। মালিকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে কারখানায় থাকলেও তারা ওপরের তলায় থাকায় ছাদে উঠে বেরিয়ে যায়। আমেরিকার শ্রমিক আন্দোলনে ট্রায়াঙ্গলে আগুন বিরাট ভূমিকা রাখে। দুঃসহ সেই স্মৃতি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ওই বছরই ৫ এপ্রিল শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর নেতৃত্বে প্রতিবাদ র‌্যালিতে প্রায় ৮০,০০০ হাজার মানুষ জড়ো হয়। শ্রমিকদের জন্য শোক র‌্যালিতে জড়ো হয়েছিলো ৩ লাখেরও বেশি মানুষ।

রানা প্লাজার মতো ট্রায়াঙ্গলের শ্রমিক হত্যার ঘটনা পত্র-পত্রিকা, টিভিতে ফলাও করে আসতে থাকে। এটি পরিণত হয় আন্তর্জাতিক সংবাদে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে বহু লেখা ছাপা হয়। বহু ফটো সাংবাদিক ছবি তুলতে থাকে। এসবে শ্রমিকদের জন্য এক ধরনের সচেতনতা ও আবেগীয় মমতা বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়। মধ্যবিত্ত নাগরিকদের মধ্যে সহানুভূতি তৈরি হয় শ্রমিকদের জন্য। তারা নানা সংগঠন গড়ে ও নানাভাবে শ্রমিকদেরও সাহায্য করে।

কিন্তু, দোষীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হলেও তা থেকে নিজেদের মুক্ত করে মালিকরা। আহতদের ৭৫ আর নিহতদের পরিবারকে ৪০০ ডলারের খুব অল্প ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারা পার পেয়ে যায়।

এমনিভাবেই আমাদের দেশেও মুক্ত হয়েছে তাজরীনের মালিক দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকে। ট্রায়াঙ্গলের মালিকদের এভাবে রক্ষা পাওয়ায় জনমনে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে শ্রমিক আন্দোলন এবং জনসমর্থনের কারণে ১৯১১ সালে নিউইয়র্ক ফ্যাক্টরি ইনভেস্টিগেশন কমিশন গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৫৩ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়। ১৯১৫ সালে প্রণয়ন করা হয় সেফটি কোড।

এছাড়াও, ঘটনার এক বছরের মধ্যে নিরাপত্তা, ফ্যাক্টরি ইন্সপেকশনসহ নানা বিষয়ে প্রায় ৩৬টি নতুন আইন পাস হয়। ১৯১১ থেকে ২০০১ এই নব্বই বছরে কর্মস্থলে এতোবড় সংখ্যায় মানুষের মৃত্যুর এটাই ছিলো রেকর্ড। কেবল ২০০১ এর টুইন টাওয়ার হামলায় তার থেকে বেশি মানুষ প্রাণ হারায়। আমেরিকার ইতিহাসে এই মৃত্যু আমেরিকায় নতুন সচেতনতা তৈরি করে।

আস্তে আস্তে শ্রমিক আন্দোলন জোরদার হয় আমেরিকায়। দীর্ঘ সময় জুড়ে শ্রমিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে আমেরিকা-ইউরোপে। আমেরিকাসহ উন্নত দেশে ট্রেড ইউনিয়ন শক্তিশালী হয়। নারী দিবস, মে দিবসের সূত্রপাত ঘটে আমেরিকাতেই। শ্রমিকদের মজুরিসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়তে থাকে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পোশাক শিল্প সস্তা মজুরের খোঁজে ছুটতে থাকে ইউরোপ-আমেরিকা থেকে ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা-এশিয়ায় বাংলাদেশের মতো দেশে। এভাবেই উন্নত দেশের বদলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে অনিরাপদ পরিবেশে, কম মজুরিতে শ্রমিকরা বিশেষভাবে নারী শ্রমিকরা উন্নত দেশের জন্য পোশাক তৈরি শুরু করে। এই পুরো প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকরা হয়ে পড়ে গ্লোবালাইজেশনের অংশ।

লক্ষ্য করলে রানা প্লাজা আর ট্রায়াঙ্গেলের অনেক কিছুতে মিল পাওয়া যায়। আগুনে পোড়া শ্রমিকদের জীবন বৃত্তান্ত শুনলে মনে হবে আমার দেশের শ্রমিককেই দেখছি। শ্রমিক স্বার্থ এবং আন্দোলনবিরোধী মনোভাব দেখলে একই কথা মনে হবে। ১০৮ বছর আগে ট্রায়াঙ্গলে অবস্থা যেনো আমার দেশের শ্রমিকদের মতোই। দুই জায়গাতেই জাগরণী ডাক হিসেবে শ্রমিকদের মানবিক জীবন ও মর্যাদার জন্য আওয়াজ উঠে। আর অন্যদিকে ইউরোপ-আমেরিকায় কিছু গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধলেও আমাদের দেশে শ্রমিকদের কথা বলার সব পথ বন্ধ করা হয়েছে। শ্রমিকরা মজুরি, নিরাপত্তা কিংবা ছাঁটাইবিরোধী কথা বললেই তাদের বিরুদ্ধে নানা হামলা-মামলা গ্রেপ্তার নির্যাতন নেমে আসে। ফলে শ্রমিক আন্দোলন এখনো শক্তভাবে দাঁড়াতে পারেনি। সরকার এবং মালিকদের মদদপুষ্ট দালাল ইউনিয়ন এবং শ্রমিকস্বার্থবিরোধী তৎপরতা শ্রমিক আন্দোলনকেও কলুষিত করেছে। আন্দোলন যাতে সৎ-নিষ্ঠাবান সংগঠকের নেতৃত্বে গড়ে উঠতে না পারে তার জন্য সরকার, মালিকপক্ষ, পুলিশ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং তাদের মদদপুষ্টদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে শ্রমিক এলাকা। সর্বত্র ভীতির পরিবেশ বিরাজমান।

প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলন উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু, বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। আন্দোলন বন্ধ করাই যেনো মালিক-সরকারের লক্ষ্য। চলতি বছর নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মজুরি বৈষম্যের প্রতিবাদে শামিল হওয়ার কারণে শ্রমিকের বুকে গুলি তারই দৃষ্টান্ত।

রানা প্লাজার ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলার মধ্যে মাত্র একটি মামলার চার্জশিট হয় ২০১৬ সালে। যেখানে লোক দেখানো কায়দায় পুলিশ নিজে বাদী হয়ে হত্যা মামলা করে। সাক্ষী করা হয় ৫৯৪ জন এবং আসামি হয় ৪১ জন। সাক্ষী একজনের সাক্ষ্যও এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়নি। মোট ৪১ জন আসামির মধ্যে ৩২ জন জামিনে, দুজন মারা গেছে, ছয়জন নিখোঁজ; কেবল সোহেল রানা জেলে। বিচার প্রক্রিয়ার এই ধীর গতি শ্রমিকদের প্রতি সরকার ও মালিকদের অবহেলাকেই আবারও সামনে এনেছে। গত ছয় বছরে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি- ক্ষতিপূরণ কিংবা ভবন আইনের। তৈরি হয়নি কোনো আন্তর্জাতিক আইন যাতে পুরো সাপ্লাই চেইনকে দায়বদ্ধ করা যায়। ফ্রান্সের পার্লামেন্টে ইতিমধ্যে এরকম একটি ‘ডিউ ডেলিজেন্স’ আইন অনুমোদিত হয়েছে।

একদিকে রানা প্লাজায় প্রাণ হারাল হাজারো শ্রমিক। অন্যদিকে ২০১৪ সালে বিজিএমইএ ঢাকা সামিটে স্বাধীনতার ৫০ বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের শিল্পে পরিণত করার ঘোষণা আসে। ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষার আওয়াজও ওঠে ওই সামিটে। অর্থনীতির উন্নতি উৎপাদনের বিকাশ, ভাবমূর্তি রক্ষা কোনটাই অমঙ্গলজনক চাওয়া নয়। কিন্তু, এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের মানসম্মত জীবন, নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন নিশ্চিত হয়নি। তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রাণ যারা, তাদের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে, ৮,০০০ টাকার এই মজুরদের প্রাণ-পুষ্টি ও শক্তি-সামর্থ্য বৃদ্ধির সুযোগ না দিয়ে উৎপাদনের বিকাশ কী সম্ভব? কিংবা ‘ভাবমূর্তি’ রক্ষা সম্ভব? উৎপাদন-শিল্প ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা বাঞ্ছনীয়। আন্দোলন ছাড়া সেই অধিকার কোনোভাবেই অর্জন সম্ভব না। ইতিহাস সেই সাক্ষ্যই দেয়। প্রকৃত আন্দোলনই পারে পরিবর্তন আনতে এবং বাংলাদেশর চেহারা বদলে দিতে। ইতিহাস সাক্ষী শ্রমিক আন্দোলনসহ জাতীয় ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে মেহনতিরাই অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে।

তথ্যসূত্র:

১.     তাসলিমা আখতার: ২০১৫, চব্বিশে এপ্রিল : হাজারো স্বপ্ন খুন এবং জাগরণী ডাক, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি: হাজার প্রাণের চিৎকার।

২.     শ্যামলী শীল: ২০১৭, দক্ষতার লিঙ্গীয় রাজনীতি এবং সস্তা মজুরির ‘সোনালী মেয়েরা’, অপ্রকাশিত

৩.     এ্যালবার্ট মাররিন: ২০১১, ফ্ল্যাশ এন্ড ব্লাড সো চীপ, র‌্যান্ডম হাউজ চিলড্রেনস বুক

৪. James Jasper and Ruth Milkman, 2015, Rana Plaza and the Triangle Shirtwaist Company: Shifting Blame and Cutting Corners:

5. Taslima Akhter: 2015, ‘Tarnished image’ v 44 lakh young lives, Daily Star

6. History.com Editors: 2019, Triangle Shirtwaist Fire Kills 146 in New York City

7. Keith Mestrich, 2014, Why the Triangle Shirtwaist Factory Fire Is Important Today

8. Peter Liebhold, 2018, Why the Triangle Shirtwaist Factory Fire Makes for a Complicated History

9. PATRICK J. KIGER:2019, How the Horrific Tragedy of the Triangle Shirtwaist Fire Led to Workplace Safety Laws

10. Jone Johnson Lewis , 20191911 Conditions at the Triangle Shirtwaist Factory

11. Robin Berson:2019: In an interview with Taslima Akhter

তাসলিমা আখতার: সভাপ্রধান গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি ও আলোকচিত্রী

 [email protected]

Comments

The Daily Star  | English
government changed office hours

Govt office hours 9am-3pm from Sunday to Tuesday

The government offices will be open from 9:00am to 3:00pm for the next three days -- from Sunday to Tuesday -- this week, Public Administration Minister Farhad Hossain said today

1h ago