ওয়াসার পানি ‘বিশুদ্ধ’ বলা প্রকৌশলীর কক্ষে ‘মাম’ পানির বোতল
ওয়াসা ‘সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে’ বলে দাবি করেছেন ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মড্স জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর আবুল হাশেম। তবে তারই টেবিলের পাশে খাওয়ার জন্য রাখা হয়েছে মাম পানির বোতল। আর সেই বোতল দেখিয়ে প্রশ্ন তোলায় বললেন, আমি আমার পছন্দ মতো যেকোনো পানি খেতেই পারি। সেটা আমার ইচ্ছা।
আর একথা বলেই সামাজিক সংগঠন ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ ও ‘ওয়াসা হটাও সংগ্রাম কমিটি’ নেতাদের তোপের মুখে পড়েন নির্বাহী প্রকৌশলী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের খানপুর এলাকায় ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ মড্স জোন ও রাজস্ব জোন কার্যালয়ের সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের দাবি এবং গভীর নলকূপের ওপর করারোপের প্রতিবাদে ওই দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে গেলে ওই ঘটনা ঘটে। সংগঠনদুটির সঙ্গে যুক্তরা বলেছেন, আগামী রোজার মধ্যে সুপেয় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না করা হলে ঈদের পর এই পানি কর্মকর্তাদের খাওয়ানো হবে।
‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদ হোসেন বলেন, “নির্বাহী প্রকৌশলী থেকে শুরু করে ওয়াসার কর্মকর্তাদের প্রত্যেকের কক্ষে ‘মাম’ ও ‘ফ্রেশ’ পানির বোতল আছে। এমন কোন কক্ষ নেই যে দুই থেকে পাঁচ লিটারের পানির বোতল নেই। এতেই বোঝা যায় যে পানি আমাদের জন্য সরবরাহ করা হয় খোদ ওয়াসার কর্মকর্তারাই সে পানি পান করেন না। আমরা মরে যাই কিন্তু তারা আমাদের টাকা দিয়ে বিশুদ্ধ পানি কিনে খাবে।”
নিজের চেয়ারের পিছনে পাঁচ লিটারের ‘মাম’ পানির বোতল রেখেছেন উপ সহকারী প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম। তবে তিনি পানির বোতল নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
পানির বোতল রাখার বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ রাজস্ব জোনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো.আবু জাফর মসিউর রহমান বলেন, “পাশের মসজিদ থেকে গভীর নলকূপের পানি এনে বোতলে ভরা হয়েছে।”
জগ কিংবা অন্য কোনো পাত্রের বদলে বাজারের পানির বোতল কেন জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ। পান করা তো দূরের কথা নামাজের জন্য অজু পর্যন্ত করা যায় না। ময়লা, নোংরা কালো পানি কেউ ব্যবহার করতেও চায় না। তারপরও সবাই বিল পরিশোধ করে যাচ্ছে। সামনে রমজান তাই ভালো পানির জন্য আমি দাবি জানিয়েছি। তারা বলে বিশুদ্ধ পানি। কিন্তু তারা সেই পানি পান করেন না। তাই আগামী রোজার মধ্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না করা হলে তাদের এই পানি খাওয়ানো হবে।
ওয়াসা হটাও সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, ওয়াসা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে। তাই আমরা জীবন বাঁচাতে নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ বসিয়ে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করছি। কিন্তু এখন সেই পানির জন্য কর বসিয়েছে ওয়াসা। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি না হতেই ওয়াসার কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে হুমকি ও ভয় দেখাচ্ছে। যেহেতু ওয়াসা বিশুদ্ধ পানি দিতে ব্যর্থ ও মানুষকে হুমকি দিচ্ছে তাই আমরা এ ওয়াসাকে নারায়ণগঞ্জে চাই না।
ঢাকা ওয়াসার নারায়ণগঞ্জ রাজস্ব জোনের রাজস্ব কর্মকর্তা সেকান্দার আলী বলেন, কয়েক মাস আগেই আমি নারায়ণগঞ্জের দায়িত্ব পেয়েছি। সেহেতু হুমকি বা ভয় দেখানোর বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এ ধরনের কিছু হবে না। আর হলে আমি ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, গভীর নলকূপের ওপর অনুমোদন ফি, নবায়ন ফি বাতিলসহ অন্য দাবির বিষয়ে ঊর্ধ্বতনদের জানানো হবে। তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
Comments