চলে গেলেন সুবীর নন্দী

বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। আজ (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে তিনি মারা যান বলে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন তার জামাতা রাজেশ শিকদার।
Subir Nandi
সুবীর নন্দী। স্টার ফাইল ছবি

বরেণ্য সংগীতশিল্পী সুবীর নন্দী আর নেই। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের এমআইসিইউতে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। আজ (৭ মে) বাংলাদেশ সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে তিনি মারা যান বলে দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন তার জামাতা রাজেশ শিকদার।

এর আগে, গত ৫ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ শিল্পীর হার্ট অ্যাটাক হয়। তখন হার্টে চারটি স্টেন্টও পরানো হয়। এরপর ৬ মে সকালেও আরেক দফা তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল।

সুবীর নন্দীর চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয় করেছেন শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন। তিনি ৬ মে দুপুর দেড়টার দিকে জানান, সুবীর নন্দীর শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন এই শিল্পী। 

সামন্ত লাল সেন জানান, ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায়ও সুবীর নন্দীর আরও একবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল। ১৮ দিন রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ৩০ এপ্রিল সিঙ্গাপুর নেওয়া হয় সুবীর নন্দীকে।

৬৬ বছর বয়সী সুবীর নন্দী দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস রোগে ভুগছিলেন। তার হার্টে বাইপাস অপারেশন করা হয়েছিল। কিডনিতেও সমস্যা ছিল।

গত পহেলা বৈশাখের রাতে সিলেট থেকে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুবীর নন্দী। এরপরই তাকে ঢাকার সিএমএইচে নেওয়া হয়। পরে সিএমএইচের জরুরি বিভাগেই হার্ট অ্যাটাক হয় তার। এরপরই সুবীর নন্দীকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখানে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. তৌফিক এলাহির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

সংগীত অঙ্গনে চার দশকের ক্যারিয়ারে সুবীর নন্দী ৪০ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে আড়াই হাজারেরও বেশি গান গেয়েছেন। স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত ওইসব চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে- মহানায়ক (১৯৮৪), শুভদা (১৯৮৬), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪) এবং মহুয়া সুন্দরী (২০১৫)।

১৯৫৩ সালের ১৯ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার নন্দীপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত সঙ্গীত পরিবারে সুবীর নন্দীর জন্ম। বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব কেটেছে চা বাগানে। পরিণত বয়সে গানের পাশাপাশি চাকরি করেছেন ব্যাংকে।

প্রাইমারিতে পড়ার সময় মা পুতুল রানীর কাছে সংগীতের হাতেখড়ির পর ওস্তাদ বাবর আলী খানের কাছে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন সুবীর নন্দী। সিলেট বেতারে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৬৭ সালে। এরপর ঢাকা রেডিওতে সুযোগ পান ১৯৭০ সালে।

১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদ পরিচালিত ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্লেব্যাকে আসেন সুবীর । ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় আজিজুর রহমানের ‘অশিক্ষিত’। সেই সিনেমায় সাবিনা ইয়াসমিন আর সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘মাস্টার সাব আমি নাম দস্তখত শিখতে চাই’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

ধীরে ধীরে সুবীর নন্দীর দরদী কণ্ঠের রোমান্টিক আধুনিক গান ছড়িয়ে পড়ে মানুষের মুখে মুখে। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

বেতার থেকে টেলিভিশন, তারপর চলচ্চিত্রে গান গেয়েছেন সুবীর নন্দী। ১৯৮১ সালে তার প্রথম একক অ্যালবাম ‘সুবীর নন্দীর গান’ প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম গান করেন ১৯৭৬ সালে ‘সূর্যগ্রহণ’ চলচ্চিত্রে।

সুবীর নন্দীর কণ্ঠে ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই’, ‘আশা ছিল মনে মনে’, ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘বন্ধু তোর বরাত নিয়া’, ‘বন্ধু হতে চেয়ে তোমার’, ‘কতো যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘পাহাড়ের কান্না দেখে’, ‘আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি’, ‘একটা ছিল সোনার কইন্যা’, ‘ও আমার উড়াল পঙ্খীরে’ শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago