গাজীপুরের বাগানগুলোতে লিচু নেই

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রবল শিলাবৃষ্টিতে অন্যান্য গাছের সাথে লিচু গাছের মুকুলসহ পাতা ঝড়ে যাওয়ায় গাজীপুরের বাগানগুলো এখন লিচুহীন। বিশেষ করে, জেলার শ্রীপুর পৌরসভা ও তেলিহাটী ইউনিয়নের বাগান মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।
Gazipur Lichiless tree
সম্প্রতি তোলা ছবিতে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার একটি লিচুবাগানের দৃশ্য। ছবি: স্টার

চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রবল শিলাবৃষ্টিতে অন্যান্য গাছের সাথে লিচু গাছের মুকুলসহ পাতা ঝড়ে যাওয়ায় গাজীপুরের বাগানগুলো এখন লিচুহীন। বিশেষ করে, জেলার শ্রীপুর পৌরসভা ও তেলিহাটী ইউনিয়নের বাগান মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি।

লিচুর মুকুল পরিপক্ব হওয়ার শুরুতেই শিলাবৃষ্টিতে গাজীপুরের শ্রীপুরের বাগান মালিকেরা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই হাজার হাজার মানুষ এবার লিচু-নির্ভর জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

শ্রীপুর পৌর শহরের কেওয়া গ্রামের মো. নূরুল হুদা আকন্দ জানান, প্রতি বছর তিনি এক লাখ টাকার বেশি দিয়ে লিচু বাগান বিক্রি করতেন। এবার ফেব্রুয়ারির শুরুতে লিচু বাগানে মুকুল দেখা দিয়েছিলো। আর ঠিক সে সময়েই আকস্মিক শিলা বৃষ্টিতে সব গাছের পাতা ঝড়ে যায়।

তেলিহাটী ইউনিয়নের টেপিরবাড়ী গ্রামের মো. ইকবাল হাসান কাজল জানান একই পরিস্থিতির কথা। বলেন, তিনি প্রতি বছর কমপক্ষে ১২ লাখ টাকায় লিচু বাগান বিক্রি করতেন। মৌসুমের শুরুতে আকস্মিক শিলাবর্ষণ তার লিচু বাগানের একটি পাতাও গাছে ঝুলে থাকতে দেখা যায়নি। আবার অনেক গাছ গোড়া থেকে উপড়ে গেছে বলেও উল্লেখ করেন।

একই গ্রামের নাসির উদ্দিন জর্জ বলেন, এমন অবস্থার শিকার হয়েছেন এলাকার সব বাগান মালিক। বছরের বেশিরভাগ আয় লিচু বিক্রির মাধ্যমে করে থাকেন শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকার লিচু বাগান মালিকেরা। স্বজন ও প্রতিবেশীদের বিলিয়ে লিচুর এ মৌসুমে এলাকাবাসী উৎসবও করতেন। কিন্তু, এবার প্রত্যেকটি বাগান মালিককে কাঁদতে হয়েছে। নিজের পরিবারের জন্য একটি লিচুর ফলনও তারা গাছ থেকে পাননি। তার ভাষায়, হাজার হাজার মানুষ এবার লিচু নির্ভর জীবিকা নির্বাহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার লিচু ব্যবসায়ী সাখাওয়াত ফকির বলেন, প্রতি বছর লিচুর মৌসুমে মুকুল অবস্থায় ব্যবসায়ীরা এক সাথে গাজীপুরের শ্রীপুরে এসে প্রায় কোটি টাকার বাগান কিনে রাখতেন। এবারও যথাসময়ে এলেও নাখোশ হয়ে ফিরে গেছেন তারা। যে শ্রীপুরে কোটি কোটি টাকার লিচু উৎপাদন হতো সে শ্রীপুরের অনেক বাগানই এবার লিচুশূন্য।

কেওয়া গ্রামের লিচু বাগান মালিক রাশেদুল ইসলাম আকন্দ বলেন, যারা লাখ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতেন এবার তারা নিজেরাই লিচু কিনে খাচ্ছেন। তার বাগানে ওষুধ স্প্রে করার কয়েকদিন পরেই শিলাবৃষ্টি লিচু গাছের পাতা পর্যন্ত ঝড়িয়ে দিয়ে গেছে। এখন কোনো গাছে একটি লিচুও নেই। আক্ষেপ করে বলেন, গাছের পাতা ঝরেছে একবার কিন্তু বাগান মালিকদের চোখের পানি এখনও ঝরছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, শিলাবৃষ্টির কারণে শ্রীপুর উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের নিচে লিচু ফলন হয়েছে। তবে বাগান মালিকদের দেয়া তথ্যমতে ৩০-৪০ শতাংশ। শ্রীপুরে ছোট বড় লিচু বাগানের সংখ্যা প্রায় তিন’শ। এ অঞ্চলে ৭২৫ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান জানান, লিচু গাছে কেবল মুকুল পরিপক্ব হচ্ছিল ঠিক সে সময়ই শিলাবৃষ্টির কবলে পড়ে লিচুবাগান। শ্রীপুরের উৎপাদিত লিচু স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হতো। এ অঞ্চলের লিচুর স্বাদ ও গন্ধ আলাদা। কিন্তু, এবার শিলাবৃষ্টির কারণে বাগান মালিকেরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

এ ক্ষতি এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে সাময়িকভাবে আঘাত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আবু বকর সিদ্দিক আকন্দ, দ্য ডেইলি স্টারের গাজীপুর প্রতিনিধি

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago