সৌম্য-মোসাদ্দেকে অবশেষে স্বপ্নের শিরোপা
![Bangladesh Cricket Team Bangladesh Cricket Team](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/000_1gl0ck.jpg?itok=W7LvcKcR×tamp=1558120309)
ফাইনালের গেরো খোলার সম্ভাব্য সবচেয়ে সহজ সুযোগ ছিল এটাই। এর আগে ছয়বার ফাইনাল হারার তীক্ততা ঝেড়ে বিশ্বকাপ মিশনে আলাদা বিশ্বাস নিতেও দরকার ছিল একটা শিরোপা। কিন্তু বৃষ্টি আর ডি/এল মেথডের হিসেব নিকেশ বড্ড গোলমেলে করে তুলেছিল পরিস্থিতি। সৌম্য সরকারের ঝড়ে উড়ন্ত শুরুর পর সেই গুমোট হাওয়া গায়েব, মিলছিল স্বস্তি। সৌম্য ঝড় ফুরোতেই জেগে উঠছিল তীরে এসে ফের তরী ডোবার শঙ্কাও। কিন্তু মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত নেমেছিলেন অন্য হিসেব মাথায় নিয়ে। তেড়েফুঁড়ে মেরে তিনি যা করলেন তা বাধিয়ে রাখার মতো। এই দুজনের ব্যাটে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল বাংলাদেশ।
ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ডি/এল মেথডে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবার কোন বহুজাতিক আসরে চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। ইতিহাস রচিত হলো ডাবলিনের ম্যালাহাইডের দ্য ভিলেজ পার্কে। শেষ ওভারে কেঁদে মরার সেই যন্ত্রণাদায়ক সময় ফুৎকারে উড়িয়ে দিল মাশরাফি মর্তুজার দল।
২৪ ওভারে ২১০ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ পেরিয়েছে ৭ বল হাতে রেখে। সৌম্য ৪১ বলে ৬৬ রানের তান্ডবীয় শুরুর পর ২৪ বলে ৫২ রান করা মধুর সমাপন টেনেছেন মোসাদ্দেক।
অথচ ম্যালাহাইডে আগে ব্যাটিং পেয়ে দারুণ শুরু করেছিল ক্যারিবিয়ানরাই। ২০.১ ওভারে ১৩১ রান তুলে ফেলেছিন বিনা উইকেটে। এরপরই নামে বৃষ্টি। তাতে যখন আবার খেলা শুরু হয় ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। উইন্ডিজ ১ উইকেটে ১৫২ রান নিয়ে শেষ করলে ডার্কওয়ার্থ-লুইস মেথডে বাংলাদেশের লক্ষ্যটা দাঁড়ায় কঠিন। তবে সেই কঠিন কাজটা বাংলাদেশ সেরেছে বুক চিতিয়ে। রোমাঞ্চ জাগিয়ে, চার-ছয়ের বৃষ্টি ঝরিয়ে।
২১০ রানের লক্ষ্যে নেমেই আগ্রাসী শুরু করেন সৌম্য সরকার। তামিম ইকবালকে এক পাশে শান্ত রেখে উত্তাল হয়ে উঠে তার ব্যাট। চার-ছয়ে মাতোয়ারা করে তুলেন এই বাঁহাতি। পাওয়ার প্লে কাজে লাগিয়ে তরতরিয়ে বাড়াতে থাকেন রান। ৫.৩ ওভার স্থায়ী ওপেনিং জুটিতেই আসে ৫৯ রান। তাতে তামিমের অবদান কেবল ১৮। একবার জীবন পেয়ে ১৩ বলের ইনিংস থামান তামিম।
ওয়ানডাউনে নেমে সাব্বির রহমান হতাশ করলেও চারে নামা মুশফিকুর রহিমও মারকাটারি ব্যাটিংয়ে মাত করছিলেন। সৌম্যের সঙ্গে গড়ে উঠে তার ৪৯ রানের জুটি। ৯ চার আর ৩ ছক্কায় ৬৬ করে সৌম্য থামার পর মুশফিকও টেকেননি। ২২ বলে ৩৬ রানে শেষ হয় তার ইনিংস। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন ১৪ বলে ১৭ করে ফিরে গেলে চাপেই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এর আগে বার কয়েক খুব কাছে গিয়ে গড়বড় করার তেতো স্মৃতিও ফিরে আসছিল। কিন্তু মোসাদ্দেকের ব্যাটে ক্যারিবিয়ান বোলারদের ‘খুন’ হওয়ার দিনে সব শঙ্কাই উড়ে গিয়েছে। মাত্র ২০ বলে ফিফটি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই ডানহাতি। ওয়ানডেতে এটাই কোন বাংলাদেশির দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড।
২৪ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ২ চারের সঙ্গে মোসাদ্দেক মেরেছেন পাঁচখানা বিশাল ছক্কা। এরমধ্যে তিনটাই ফ্যাবিয়ান অ্যালানের এক ওভারে। ওই ২২তম ওভারে ২৫ রান নিয়েই আসল কাজটা করে দেন মোসাদ্দেক। একেকটা ছয়ে মোসাদ্দেক যেন গুনে গুনে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন মিরপুর, কলম্বো, দুবাইতে জমা হওয়া সব যন্ত্রণা।
অথচ ফাইনালের এই বড় মঞ্চের দিন দলের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই নামতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। সাইড স্ট্রেনের চোটে সাকিব ছিলেন না। কিন্তু তার না থাকা আর প্রভাব ফেলল না। সাকিব থাকলে যিনি খেলারই সুযোগ পেলেন না সেই মোসাদ্দেক হিরো বনে দেখিয়ে দিলেন, দায়িত্ব নিতে তৈরি হয়ে উঠছেন জুনিয়ররাও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ১৫২/১ (হোপ ৭৪, আমব্রিস ৬৯*, ব্রাভো ৩*; মাশরাফি ০/২৮, সাইফ ০/২৯, মুস্তাফিজ ০/৫০, মোসাদ্দেক ০/৯, মিরাজ ১/২২, সাব্বির ০/১২)
বাংলাদেশ: ২২.৫ ওভারে ২১৩/৫ (লক্ষ্য ২১০) ( তামিম ১৮, সৌম্য ৬৬ , সাব্বির ০, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৯*, মোসাদ্দেক ৫২* ; নার্স ০/৩৫, হোল্ডার ০/৩১, রোচ ০/৫৭, গ্যাব্রিয়েল ২/৩২, রেইফার ২/২৩, অ্যালেন ১/৩৭)
ফল: বাংলাদেশ ডি/এল মেথডে ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত
Comments