কেউই যখন যুদ্ধ চান না, তখন কেনো মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের সাজ?
ইরান প্রশ্নে মধ্যপ্রাচ্যে বিবাদমান সব পক্ষই দাবি করছেন যে তারা যুদ্ধ চান না। তারপরও উপসাগরীয় অঞ্চলে চলছে যুদ্ধের সাজ।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স গতকাল (১৯ মে) জানায়, সৌদি আরব বলেছে- তারা যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে। এক সংবাদ সম্মেলনে তেলসমৃদ্ধ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের এ কথা বলেছেন।
তার পরামর্শ- উপসাগরীয় অঞ্চল যেনো নতুন করে কোনো যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্যে ইরানকেও সজাগ থাকতে হবে। “বল এখন ইরানের কোর্টে,” এমন মন্তব্য করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এদিকে আজ ইরানের ফারস নিউজ এজেন্সি জানায়, ইরানের বিপ্লব প্রতিরক্ষা বাহিনী (রেভল্যুশনারি গার্ড) বলেছে- ইরানও যুদ্ধ চায় না। সংস্থাটির প্রধান মেজর জেনারেল হোসেন সালামি বলেন, “তাদের আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য হলো যে তারা (সৌদি জোট) যুদ্ধকে ভয় পায় এবং আমাদের যুদ্ধ করার মানসিকতা নেই।”
এছাড়াও, গত ১৬ মে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনিও যুদ্ধ চান না। সেসময় তিনি আশা প্রকাশ করেন যে তার দেশ ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না। তার কাছে যখন সাংবাদিকরা জানতে চান যে সত্যি সত্যিই ওয়াশিংটন এবং তেহরান যুদ্ধে জড়াচ্ছে কী না তখন এর উত্তরে ‘যুদ্ধংদেহী রাষ্ট্রনেতা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ট্রাম্প বলেন, “আশা করি, তেমনটি হবে না।”
এই যখন পরিস্থিতি তখন সৌদি আরবের সরকারি সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি জানায়, উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনার জন্যে আগামী ৩০ মে মক্কায় আঞ্চলিক উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ এবং আরব লীগের জরুরি বৈঠক ডেকেছে সৌদি সরকার।
খবরে প্রকাশ, বাদশাহ সালমান মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে ‘আগ্রাসন ও তার পরিণাম’ সম্পর্কে আলোচনার জন্যে দুটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তিনি সে বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
তাহলে প্রশ্ন জাগে, কোনো পক্ষই যখন যুদ্ধ চান না তখন পারস্য উপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ, বোমারু বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আনা হলো কেনো? কেনোই বা সৌদি আরব তার অনুগত রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে ডেকেছে জরুরি বৈঠক?
বিশ্লেষকদের মতে, গত ১২ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজাইরাহ উপকূলে নাশকতামূলক হামলায় সৌদি আরবের দুটি তেলবাহী টেঙ্কারসহ চারটি জাহাজের ক্ষতি হয়। এ ঘটনার দুদিন পর সৌদি আরবের প্রধান একটি তেলের পাইপলাইনে ড্রোন হামলা চালায় ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা।
ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে আর ইরান কৌশলগত হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিলে সৌদি আরবের সেই পাইপলাইনটিই হবে তেল রপ্তানির বিকল্প পথ। কিন্তু, সেই সেটি হুতিদের নাগালের মধ্যে চলে আসায় নতুন করে সঙ্কটের মুখে পড়েছে সৌদি আরব।
শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে যখন ঘোলা পরিস্থিতি তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরম ডান এবং বামপন্থিরা রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের বর্তমান ইরান-নীতি জন্যে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে অভিযুক্ত করেছে। এতে নতুন করে মুখ পুড়ছে ইরানবিরোধী সৌদি জোটের।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন, জেরাল্ড ফোর্ড এবং রোনাল্ড রিগ্যানের সাবেক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা প্যাট্রিক জোসেফ বুচাননের ওয়েবসাইটে গত ১৭ মে লেখা হয়, ‘প্রশ্ন: ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চান কারা? উত্তর: (যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী) মাইক পম্পেও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন, (ইসরাইলের) নেতানিয়াহু এবং সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।
এসব দেখে সবার মনে হতে পারে- জোটবদ্ধ দেশগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ‘সৌদি অ্যন্ড কোং’ মুখে যুদ্ধ এড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছে আর, ইরানকে চাপে রাখতেই হয়তো নিজেদের গায়ে চাপিয়ে রাখছে ‘নতুন যুদ্ধের’ সাজ?
আরও পড়ুন:
Comments