ট্রাভেল পারমিট কখনো বন্ধ হতে পারে না

নিউজে দেখলাম যুদ্ধফেরত জঙ্গি ঠেকাতে ট্রাভেল পারমিট বন্ধ। জানি না আদৌ বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী না। আর আদৌ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব কী না। নিউজের হেডলাইনটা পড়ে পুরো হতভম্ভ হয়ে গিয়েছি।
terror
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

নিউজে দেখলাম যুদ্ধফেরত জঙ্গি ঠেকাতে ট্রাভেল পারমিট বন্ধ। জানি না আদৌ বাংলাদেশ সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কী না। আর আদৌ এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব কী না। নিউজের হেডলাইনটা পড়ে পুরো হতভম্ভ হয়ে গিয়েছি।

সবাই হয়তো জানেন, তারপরেও বলি- ট্রাভেল পারমিটকে সংক্ষেপে টিপি বলে। প্রবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকতার শুরুতেই এই টিপি শব্দটা শিখেছি। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে আর প্রবাসী শ্রমিক বিশেষ করে যাদের কাছে কাগজপত্র নেই তাদের কাছে টিপি শব্দটা ব্যাপক পরিচিত।

সাধারণত জরুরি প্রয়োজনে টিপি দেওয়া হয়। ধরুণ- আপনি প্রকৃতভাবে বাংলাদেশের একজন নাগরিক। কিন্তু, বিদেশে গিয়ে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেছেন, চুরি হয়েছে বা আগুনে পুড়ে গেছে বা পানিতে নষ্ট হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট করা সম্ভব নয়, কিন্তু আপনাকে দ্রুত দেশে ফিরতে হবে। কিংবা ধরুন আপনি যে দেশে রয়েছেন সেই দেশের কোনো আইন ভাঙার কারণে সেখানকার সরকার আপনাকে আটক করে আপনাকে নিজ দেশে দ্রুত ফেরত পাঠাতে চায়। কিংবা ধরুন মালয়েশিয়া বা সৌদি আরবে অবৈধদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। তখন সাধারণত টিপি দিয়ে একজনকে দেশে পাঠানো হয়।

এখানে মনে রাখতে হবে, দূতাবাস যখন শতভাগ নিশ্চিত হয় যে লোকটি বাংলাদেশের নাগরিক তখনই সাধারণত টিপি দেওয়া হয়। এজন্য পাসপোর্ট হারালে বা চুরি হলে অবশ্যই পুলিশ রিপোর্ট করতে হয়। নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য জন্মনিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং ভিসার কপি (যদি থাকে) জমা দিতে হয়। এসব না হলে টিপি দেওয়া সম্ভব নয়। আর সব পেলে দূতাবাস দেশে পাঠিয়ে বা সম্ভব হলে সেখান থেকে যাচাইবাছাই করে টিপি দেয়।

টিপি নিতে হলে একটি ফি দিতে হয়। যেমন ধরুন মালয়েশিয়ার জন্য ফি ৪৪ রিঙ্গিত। ব্যাংকের মাধ্যমে এই ফি দিতে হয়। আর  টিপি নিতে হলে নিজে আসতে হয়। সেখানে ছবি থাকে, স্বাক্ষর থাকে। এরপর চলে যাচাইবাছাই। দূতাবাস যখন নিশ্চিত হয় লোকটা বাংলাদেশের নাগরিক, তখুনি টিপি দেওয়া হয়। এরপর সেই টিপি নিয়ে তিনি দেশে আসেন।

আমার কাছে যে তথ্য আছে তাতে গত এক দশকে অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ লোক টিপি নিয়ে দেশে এসেছেন। বিমানবন্দরে প্রতিদিনই টিপিওয়ালাদের লাইন থাকে। মালয়েশিয়া, কাতার, আরব আমিরাত, মালদ্বীপ, বাহরাইনসহ বহু দেশে আমি দেখেছি বাংলাদেশিরা টিপি নিয়ে দেশে ফিরছেন। এটি একটা আন্তর্জাতিক পন্থা। আমি জানি না কী করে একটি দেশ টিপি বন্ধ করবে।

আমার যেটা মনে হয়, সিরিয়া এবং ইরাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠীর পক্ষে যুদ্ধ করতে যাওয়া জঙ্গিরা যেনো বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তবেই ট্রাভেল পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি যৌক্তিক। দেশের নিরাপত্তার স্বাথেই এটি করা উচিত। কিন্তু, এখন যদি বলা হয় টিপি বন্ধ তাহলে কিন্তু ভয়ঙ্কর ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হবে। লাখ লাখ প্রবাসী ভয়াবহ দুশ্চিন্তায় পড়বে।

এই যাচাই-বাছাই জরুরি। প্রয়োজনে তা ডিজিটাল করা যেতে পারে। আঙুলের ছাপসহ আধুনিক যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করা যেতে পারে। আশা করছি বিষয়টি নিয়ে কোনো ভুল বোঝাবুঝি হবে না।

আমার মনে হয়, পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান মনিরুল ইসলাম বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তিনি বলেছেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই জঙ্গিদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাই তারা যেকোনো দেশে ঢুকতে চাইলে ট্রাভেল পাস নিয়েই ঢোকার চেষ্টা করবে। অনেক সময় দেখা যায়, অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরাতে অনেকেই দ্রুত ট্রাভেল পাস চান। তাই শ্রমিক হিসেবে যাতে জঙ্গিদের কেউ ট্রাভেল পাস নিয়ে চলে আসতে না পারেন, সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই করে তবেই ট্রাভেল পাস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আশা করছি কোনো প্রবাসী বা কেউ বিষয়টি নিয়ে ভুল বুঝবেন না। বাংলাদেশ থাকুক জঙ্গিমুক্ত।

শরিফুল হাসান, কলামিস্ট

প্রোগ্রাম প্রধান, মাইগ্রেশন, ব্র্যাক

(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)

Comments

The Daily Star  | English

Yunus holds brief meeting with Malaysian PM at Dhaka airport

Following the meeting, they boarded the same car to travel to the bilateral venue

1h ago