‘প্রতিশোধ’ নিতে সুজনকে হন্যে হয়ে খুঁজেছিলেন ওয়াসিম
বোলিং করার সময় প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানকে গা হিম করা শীতল দৃষ্টি ছুঁড়ে দেওয়া। প্রত্যুত্তরে এলো মেরে ফেলার হুমকি! সেখানেই শেষ নয়। পরের দেখায় ওই ব্যাটসম্যানই বল হাতে নিয়ে হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলেন সেই বোলারকে। ব্যাটিংয়ে নামলেই গতির আগুনে ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। কারণ তার ‘প্রতিশোধ’ জ্বালা তো মেটেনি।
কোনো নাটক বা সিনেমার গল্প বলা হচ্ছে না। ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসরে নিজের মজার অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে এমনই এক রোমাঞ্চকর ঘটনা স্মৃতি হাতড়ে বের করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজন। বিশ্বমঞ্চে তিনি দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি বোলার ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে। ২২ গজে দুজনের পরের দেখাতেও সেই দ্বৈরথের রেশ ছিল।
দুটি বিশ্বকাপ খেলা (১৯৯৯ ও ২০০৩) সুজন বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছেন। আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও এই দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে সাবেক এই টাইগার অলরাউন্ডারকে। কর্মকর্তার পরিচয়ে বিশ্বকাপে পা রাখার আগে দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপচারিতায় সুজন বর্ণনা করেছেন নিজের চমকপ্রদ অভিজ্ঞতার।
ঘটনার মঞ্চায়ন হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তানের। ওই ম্যাচের আগে সুজনকে বোলার হিসেবে আরও বেশি আগ্রাসী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের তৎকালীন বোলিং কোচ। তিনিও গুরুর উপদেশ পালন করেছিলেন অক্ষরে অক্ষরে। শুরুটা সেখান থেকেই।
সুজন বোলিং করার সময় ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইকে ছিলেন ওয়াসিম। তখন পাকিস্তানের অধিনায়কও ছিলেন এই 'সুইং বিস্ময়'। প্রতিটি ডেলিভারি করার পর সুজন তেড়েফুঁড়ে যাচ্ছিলেন ওয়াসিমের দিকে। চোখে চোখ রেখে ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন তির্যক বাক্য। সেই দৃষ্টি আর বাক্যবাণকে সহজভাবে নেননি ওয়াসিম। বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন পা রাখা একটি দলের একজন বোলারের কাছ থেকে এমন আগ্রাসী আচরণ তিনি নিশ্চয়ই প্রত্যাশা করছিলেন না! আর ততদিনে দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খেলাটার হাবভাব ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিলেন বাঁহাতি তারকা।
তাই পাল্টা স্লেজিং করেন ওয়াসিম। খুবই ভয়ঙ্করভাবে। কভারে ফিল্ডিং করতে দাঁড়ানো আকরাম খানকে ডেকে সুজনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, 'তোমাদের ছোটুকে (উচ্চতায় দীর্ঘ না হওয়ায়) বলো, ওকে আমি মেরে ফেলব।'
ওয়াসিমের এই হুঙ্কার অবশ্য টলাতে পারেনি সুজনকে। প্রতিপক্ষ দলনেতাকে চমকে দিয়ে তিনি তার কাজ করেই চলেন। ওয়াসিমের উইকেটটা অবশ্য নিজের ঝুলিতে পুরতে পারেননি। তাকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। আর বাংলাদেশও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রানে ম্যাচ জিতে নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে।
লড়াই থামতে পারতো সেখানেই। তবে উদীয়মান একটি দলের কাছে ধরাশায়ী হওয়ার কারণেই হয়তো ওয়াসিম মনে রাগ পুষে রেখেছিলেন। তাই 'প্রতিশোধ' গল্পের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন পরের বছরের এশিয়া কাপের আসরকে। কিন্তু বাউন্সার আর ইয়র্কার দিয়ে সুজনকে নাস্তানাবুদ করার সুযোগ তিনি পাননি। তার আগেই সুজন আউট হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন।
তবে মজার ব্যাপার হলো, ওয়াসিমের চোখ এড়িয়ে গিয়েছিল ব্যাপারটা! তাই অপেক্ষায় থেকেও লাভ হয়নি। তবে টাইগারদের যে ব্যাটসম্যানই উইকেটে যাচ্ছিলেন ব্যাটিং করতে, তার কাছেই সুজনের ব্যাপার জিজ্ঞেস করছিলেন তিনি।
চমকপ্রদ পরিস্থিতিটা শুনুন সুজনের ভাষ্যেই, 'সে সময় আমাদের সবার উচ্চতা প্রায় সমান ছিল। আমি ব্যাটিংয়ে নামার পর দ্রুতই আব্দুল রাজ্জাকের (আসলে আজহার মাহমুদ) বলে আউট হয়ে যাই। কিন্তু ওয়াসিম তা হয়তো খেয়াল করেননি। তাই বাকিদের কাছে জিজ্ঞেস করছিলেন, "ছোটু কোথায়? ও কি ব্যাটিংয়ে নামবে না?" ভাগ্যিস, আমি দ্রুতই আউট হয়ে গিয়েছিলাম! নইলে বাউন্সারে জর্জরিত হতে হতো।'
তবে মাঠের বাইরে ওয়াসিম যে কতটা অমায়িক তা জানাতেও ভোলেননি সুজন। তার কাছে থেকে বোলিং বিষয়ে নানা টিপস ও সাহায্য পেয়েছেন বলে জানান সুজন।
Comments