ফেরদৌস, গাজী নূরের প্রচারণায় পশ্চিমবঙ্গের দুই আসনের যা ফল
ভারতের লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে বেশি সহিংসতা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ তার একটি। এর মধ্যেই বাংলাদেশের দুজন অভিনেতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের (টিএমসি) পক্ষে উত্তর ২৪ পরগণার দমদম ও উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে প্রচারণায় অংশ নিয়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দেন।
পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যাওয়ায় দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ফেরদৌসের ভিসা বাতিল করে কালো তালিকাভুক্ত করে। অনুরূপ ব্যবস্থা নেওয়া হয় টিভি অভিনেতা গাজী আবদুন নূরের বিরুদ্ধেও। সেই সঙ্গে ফেরদৌসকে দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়ারও নির্দেশ দেয় ভারত সরকার।
ফেরদৌস রায়গঞ্জে কানাইলাল আগারওয়াল ও গাজী নূর দমদমে সৌগত রায়ের পক্ষে ভোটের প্রচারণায় গিয়েছিলেন। ফেরদৌসের সঙ্গে ছিলেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী অঙ্কুশ ও পায়েল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বাগযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তৃণমূল ও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গে এক জনসভায় দাঁড়িয়ে জনগণের কাছে এর বিচার চেয়েছিলেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই দুই আসনের ভোটের ফল কী দাঁড়াল?
দুটি আসনের মধ্যে টিএমসি দমদম আঁকড়ে রাখতে সক্ষম হলেও রায়গঞ্জ আসনে হার মানতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরের কাছে। দমদমে সৌগত রায় বিজেপির প্রার্থী সমিক ভট্টাচার্যকে ৫৩,০০২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে পুনর্নির্বাচিত হলেও ২০১৪ সালের তুলনায় ভোটের ব্যবধান অনেকটাই কমে গেছে। সেবার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ১,৫৪,৯৩৪ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন ঘাসফুলের এই প্রার্থী।
অন্যদিকে রায়গঞ্জে পদ্মফুলের প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরীর কাছে ৬০,৫৭৪ ভোটে হার মেনেছেন টিএমসির প্রার্থী কানাইলাল আগারওয়াল। ২০১৪ সালে এই আসন থেকে এমপি হয়েছিলেন সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম। সেবার অবশ্য খুব সামান্য ব্যবধানে মাত্র ১৬৩৪ ভোটের এগিয়ে থেকে জিতেছিলেন তিনি। এবার সেলিমের দলের কোনো প্রার্থীই পশ্চিমবঙ্গে জয়ের মুখ দেখতে পাননি।
তবে বিদেশি তারকাদের দিয়ে প্রচারণা শুধু তৃণমূল একাই চালায়নি। বিজেপির বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল তৃণমূল। তাদের অভিযোগ ছিল, রেসলার ‘দ্য গ্রেট খালি’কে সামনে রেখে যাদবপুরে চেয়েছে বিজেপির প্রার্থী অনুপম হাজরা। তৃণমূলের যুক্তি ছিল, ফেরদৌসদের প্রচারণায় অংশ নেওয়া যদি অপরাধ হয়ে থাকে তবে বিজেপিও একই দোষে দুষ্ট। কারণ দলিপ সিং রানা যিনি গ্রেট খালি নামে বিখ্যাত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
তবে শেষ পর্যন্ত তাদের এই অভিযোগ ধোপে টেকেনি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, গ্রেট খালি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তার ‘ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া’ কার্ড রয়েছে। এই কার্ড থাকায় তাকে ভারতে ভ্রমণ বা বসবাসের জন্য ভিসার মতো কোনো অনুমতি নিতে হয় না। ফলে তাকে সেই অর্থে পুরোপুরি বিদেশি বলা যায় না।
এই আসনে শেষ পর্যন্ত রেসলার খালির কোনো শক্তি প্রভাব ফেলতে পারেনি। বিজেপির প্রার্থী অনুপম হাজরা এখানে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর কাছে প্রায় তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।
Comments