দলকেই এখন বেশি সময় দেবো: মমতা

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এএফপি ফাইল ছবি

দলের খারাপ ফলাফল নিয়ে অনেকটাই ক্ষুব্ধ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতার কালীঘাটের দলীয় দপ্তরে আয়োজিত বৈঠকে মমতা মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে দলের অপ্রত্যাশিত ফল নিয়ে পর্যালোচনা করতেই এদিন বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ী ও পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন দলনেত্রী। তৃণমূলের প্রার্থীরা ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রীরা, জেলা সভাপতি ও দলের শীর্ষ নেতারা। বিকাল ৪টা নাগাদ শুরু হয় বৈঠক। তা চলে প্রায় একঘণ্টার বেশি সময় ধরে।

বৈঠকের পরই সংবাদ সম্মেলন করে মমতা নিজের এই ইচ্ছার কথা সামনে আনেন। অভিযোগের সুরে বলেন, “গত পাঁচ-ছয় মাস ধরে আমায় কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। জরুরি অবস্থার মধ্যে নির্বাচন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দয়ায় আমি মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম ঠিকই কিন্তু আমার হাতে কোনো ক্ষমতা ছিল না। বৈঠকের শুরুতেই আমি বলেছিলাম যে আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে থাকতে চাই না কিন্তু দলের সভাপতি হিসাবে কাজ চালিয়ে যাব। কারণ দলটা আমি নিজে তৈরি করেছি। আর আমি চেয়ারের লোভ করি না।”

মমতার অভিমত, “রুপি দিয়ে যেখানে গণতন্ত্র গড়া হয়, সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট সরকার চালায়-সেখানে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার কোনো ইচ্ছা নেই। আমি দলকেও বুঝিয়েছি কিন্তু ওরা কিছুতেই আমার এটাকে গ্রহণ করেনি। তাই দলের সর্বসম্মতিতেই আমাকে কাজ চালাতে হচ্ছে।”

রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে এবারের নির্বাচনে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল পেয়েছে ২২টি আসন, বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই তৃণমূলই ৩৪চটি আসনে জিতেছিল। বিজেপির দখলে ছিল মাত্র দুইটি আসন। যদিও তৃণমূল নেত্রী মনে করেন এবারও দলের প্রাপ্ত ভোট শতাংশের বিচারে কমেনি, ৪১ শতাংশই আছে। তবুও কেন ৩৪ থেকে এক ঝটকায় ২২-নেমে হল এই নিয়ে যারা পরাজিত তাদের কাছে পরাজয়ের কারণ এবং যারা জয়ী হয়েছেন তাদের কাছে জয়ের কারণ জানতে চান মমতা।

নির্বাচন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলিম ভোট ভাগাভাগির অভিযোগ আনেন মমতা। তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচনে একতরফা হিন্দু-মুসলমান ভাগাভাগি করা হয়েছে। কিন্তু আমি এই থিওরি মানি না। আমি ওদের (বিজেপি) অভিনন্দন জানিয়েও বলছি যে আমি ওদের এই থিওরি মানি না। এতে যদি আমাকে একা থাকতে হয় তবে তাতেও রাজি আছি। কিন্তু আমি হিন্দু-মুসলিম-শিখ-খ্রিস্টান ভোট ভাগাভাগিতে মানি না।”

তিনি আরও বলেন, “ওরা হিন্দু এলাকায় গিয়ে মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছে। দেশটা তো সবার। কোথাও হিন্দু থাকবে, আবার কোথাও মুসলমান, শিখ, খ্রিস্টান থাকবে। আমি নিজেও হিন্দু ঘরের মেয়ে। কিন্তু আমি এই থিওরি মানতে রাজি নই। উগ্র মৌলবাদী যেকোনো ধর্মের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি প্রতিটি ধর্মেরই সহনশীল হওয়া উচিত।”

বিজেপির বিরুদ্ধে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলার অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, “এই নির্বাচনে যে টাকার খেলা হয়েছে তা যেকোনো কেলেঙ্কারিকেও হার মানাবে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে এই টাকা বিলি করা হয়েছে। টাকা ঢোকানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল যেমন কলকাতা পুলিশের কমিশনার। কলকাতা বিমানবন্দর যে পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে সেটাও বদল করা হয়।”

তার অভিযোগ, “গোটা নির্বাচন কমিশনটা বিজেপির পার্টি হয়ে গেছে। আমাদের একটা কথাও শোনেনি। কেন্দ্রীয় বাহিনীও আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।”

তার আরও অভিযোগ, “বিজেপি যে ১৮ আসন পেয়েছে-সিপিআইএম সব ভোট দিয়েছে। প্রচুর টাকাও দিয়েছে সিপিআইএম-কে। অনেক মিডিয়া হাউজকেও দিয়েছে।”

দেশজুড়ে বিজেপির বিপুল জয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েও এই জয়ের পিছনে সন্দেহ দেখছেন মমতা। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নিজেই ৩০০ আসন জেতার কথা বলেছিল। তারা তা পেয়ে গেছে এজন্য মোদিজিকে অভিনন্দন। কিন্তু এই বিপুল জয়ের পিছনে সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীরা কিভাবে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেল তা নিয়ে সত্যিই অবাক হচ্ছি। এখানে নিশ্চয়ই কিছু সেটিং আছে এবং বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে।”

মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে বিরোধীদের তোষণের রাজনীতির অভিযোগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী ৩০ তারিখে আমি কলকাতা কর্পোরেশনে ইফতারে যাচ্ছি, আপনারাও আসবেন। আমি নাকি মুসলিমদের তোষণ করি, আমি একশ বার যাবো, হাজার বার যাবো। যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া উচিত। তাছাড়া আমি ইফতারে প্রতিবারই যাই। আমাকে যে ডাকবে সেখানেই যাব।”

Comments

The Daily Star  | English

Conspiracy rife to wipe out Tarique Rahman: Fakhrul

He also said the propaganda against BNP is part of a deliberate conspiracy to destroy nationalist forces

7m ago