ইরান-সৌদি লড়াই: ৩০ মে মক্কা সম্মেলন
প্রতিবেশী অথচ চিরশত্রু ইরানকে আরও চাপে রাখার জন্যে সৌদি আরব পবিত্র মক্কা নগরীতে ডেকেছে উপসাগরীয়, আরব তথা মুসলিম দেশগুলোর জরুরি সম্মেলন। এটি ডাকা হয়েছে মূলত ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৈরি হওয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে।
প্রায় সব মুসলিম প্রধান দেশ যে সৌদি আরবের নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মক্কায় উপস্থিত হয়েছে- তা বোঝাতে ইরান-বিরোধী সম্মেলনটি ডাকা হয়েছে ৩০ মে। অর্থাৎ, ওআইসি সম্মেলনের একদিন আগে। ফলে, ওআইসির সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংস্থাটির নিয়মিত বৈঠকে যোগ দিতে এসে বাড়তি আরও একটি সম্মেলন করে যাবেন।
আজ (২৮ মে) বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মক্কা সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র সৌদি আরবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের বিরুদ্ধে উপসাগরীয়, আরব এবং মুসলিমবিশ্বকে একত্রিত করা।
এমন পরিস্থিতিতে মক্কায় আসন্ন ওআইসি সম্মেলনে ইরান যোগ দিবে কী না তা নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা বলেনি শিয়া প্রধান দেশটি।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত আরব গালফ স্টেটস ইনস্টিটিউট এর বিশেষজ্ঞ হুসেইন আইবিশ বার্তা সংস্থাটিকে বলেন, রিয়াদের লক্ষ্য হলো এই সম্মেলনের মাধ্যমে “আরব ও মুসলিম সমর্থনকে ঐক্যবদ্ধ রেখে (সৌদি আরব) সরাসরি যুদ্ধের পথে হাঁটবে, না কী কূটনীতির আশ্রয় নিবে” সেই পথ খুঁজে নেওয়া।
এদিকে, দিনে দিনে জটিল হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। ইরানের ওপর চলছে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোরতম অবরোধ। দেশটিকে আরও চাপে রাখতে আরও ১,৫০০ মার্কিন সৈন্য মধ্যপ্রাচ্যে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আরব সাগরে অবস্থান করছে বিমানবাহী রণতরী ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে ওমান উপসাগরে সৌদি ট্যাঙ্কারে রহস্যজনক বিস্ফোরণ এবং সৌদি আরবের ভেতরে অবস্থিত তেলের পাইপ ও একটি কথিত অস্ত্রাগারে ইয়েমেনের হুতিদের ড্রোন হামলা সেই সঙ্কটকে আরও জটিল করে তুলেছে। আর একারণেই মক্কায় ডাকা হয়েছে ‘ইরান-বিরোধী’ জরুরি বৈঠক।
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বাঁধলে দেশটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি আগে থেকেই দিয়ে রেখেছে। সেই হুমকিতে উদ্বিগ্ন পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের আরব দেশগেুলো। কেননা, এই প্রণালী দিয়েই বিশ্বের সাগরপথে পরিবহন করা মোট তেলের ৩৫ শতাংশ যায়।
মক্কা সম্মেলন উপসাগরীয় দেশগুলোকে আমন্ত্রিতদের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরবের অবরোধের শিকার এবং ইরানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা খনিজসমৃদ্ধ দেশ কাতার। তবে মোট কতোগুলো রাষ্ট্রের প্রতিনিধি ‘ইরান-বিরোধী’ সম্মেলনে যোগ দিবেন তা এখনো পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।
রিয়াদের সঙ্গে তেহরানের দীর্ঘদিনের শত্রুতা থাকলেও তাদের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয় ২০১৬ সালে। সে বছর সৌদি আরবের একজন শীর্ষ শিয়া নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলে তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা চালায় ইরানের প্রতিবাদকারীরা। এর পর পরই প্রতিবেশী অনুগত রাষ্ট্রগুলকে সঙ্গে নিয়ে তেহরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রিয়াদ।
সৌদি আরব ও এর অনুগত দেশগুলোর অভিযোগ- ইরান বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাচ্ছে এবং এসব আরব দেশে সশস্ত্র বাহিনি গড়ে তুলছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ গত সপ্তাহে এক টুইটার বার্তায় বলেন, “এই সঙ্কটময় মুহূর্তে প্রয়োজন একতা এবং সমন্বয়। সৌদি আরব সেই (নেতৃত্বের) ভূমিকা পালন করার যোগ্যতা রাখে।”
কিন্তু, ইরানের বিরুদ্ধে সব মুসলিম দেশকে একত্র করা সৌদি আরবের জন্যে খুবই কঠিন কাজ হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যেসব দেশ ইরানের তেলের ওপর নির্ভরশীল তারা সহসাই দেশটির বিপক্ষ অবস্থান নিতে চাইবে না।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা ওমান বলেছে, তারা “দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে” কাজ করছে।
ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির গবেষক সিমন হেন্ডারসন বলেন, “অনেক দেশ হয়তো ইরানকে পছন্দ নাও করতে পারে কিন্তু, তারাই আবার চেষ্টা করবেন ইরানের সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে চলতে।”
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “পরমাণু কার্যক্রম আবারও শুরু করে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়েছে। এছাড়াও, সৌদি বা আমিরাতের তেল রপ্তানিতে বাধা সৃষ্টি করে নিজের শক্তি প্রমাণ করেছে ইরান।”
এমন পরিস্থিতিতে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জাবের সম্প্রতি এক বার্তায় বলেছেন যে তার দেশও ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না। কিন্তু, তেহরানকে জানাতে চায় যে রিয়াদ তার স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে।
Comments