স্বপ্ন পূরণের পথে বাংলাদেশের প্রথম পদক্ষেপ

bangladesh cricket team
ছবি: আইসিসি

ব্যাটসম্যানরা পথ দেখিয়ে গিয়েছিলেন। কেবল তাই নয়, যথাসম্ভব মসৃণ করেই রেখে গিয়েছিলেন। তাদের অনুসরণ করে বোলাররাও নিজেদের কাজটা করলেন ঠিক ঠিক। তাতে রোমাঞ্চ ছড়ানো ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ জিতে শুভ সূচনা করল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল।

রবিবার (২ জুন) ওভালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২১ রানে জিতল বাংলাদেশ। ৩৩১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় প্রোটিয়ারা থামে ৮ উইকেটে ৩০৯ রানে। তাতে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলার যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেছে টাইগাররা, সেই স্বপ্ন পূরণের পথে পড়ল প্রথম পদক্ষেপ। অন্যদিকে, টানা দুই হারে আসরের শুরুতেই ভীষণ চাপে পড়ে গেল প্রোটিয়ারা।

বাংলাদেশের পুঁজিটা ছিল বিশাল। সেটাকে শক্তি হিসেবে নিয়ে শুরু থেকেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে চেপে ধরেন বাংলাদেশের বোলাররা। করেন আঁটসাঁট বোলিং। তাই কুইন্টন ডি কক ও এইডেন মার্করামের উদ্বোধনী জুটি দশম ওভার পর্যন্ত টিকলেও বিধ্বংসী হতে পারেনি। এই জুটি ভাঙেন মুশফিকুর রহিম। দক্ষিণ আফ্রিকার দলীয় ৪৯ রানের মাথায় ডি কককে রানআউট করে।

এরপর প্রায় একই অঙ্কের আরও তিনটি জুটি পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৩, তৃতীয় উইকেটে ৪৫ ও চতুর্থ উইকেটে ৫৫ রানের জুটি। মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন ফ্যাফ ডু প্লেসি, ডেভিড মিলার, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, জেপি ডুমিনিরা।

কিন্তু সাকিব আল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনরা নিজেদের লক্ষ্য চিনে নিতে ভুল করেননি। বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই একে একে সবাইকে সাজঘরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন তারা।

এক পর্যায়ে, ৩৫ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২০২ রান। বাংলাদেশ শিবিরে দুশ্চিন্তার ভাবটা ফুটে উঠছিল খেলোয়াড়দের চোখেমুখে। তবে মোস্তাফিজের ভাবনা ছিল আলাদা। দুবার জীবন পাওয়া মিলারকে ঠিক পরের ওভারের প্রথম বলেই ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। ঘুরে যায় ম্যাচের চিত্র।

এরপর দ্বিতীয় স্পেলে নিজের পরপর দুই ওভারে ভ্যান ডার ডুসেন ও ফেলুকওয়ায়োকে ফিরিয়ে দেন সাইফুদ্দিন। তাতে ম্যাচের পাল্লা হেলে পড়ে বাংলাদেশের দিকে। আর ৪৮তম ওভারে ডুমিনিকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার টিমটিম করে জ্বলতে থাকা শেষ সম্ভাবনাটাকেও নিভিয়ে দেন কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ।

ফলে ২০০৭ আসরের পর দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বমঞ্চে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্বাদ নিল বাংলাদেশ। মোস্তাফিজ ৬৭ রানে ৩ উইকেট নিয়ে এদিন দলের হয়ে সবচেয়ে সফল। ৫৭ রান খরচায় সাইফুদ্দিনের শিকার ২ উইকেট। সাকিব ও মিরাজ পান ১টি করে উইকেট।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পুরো ৫০ ওভার ব্যাট করে ৩৩০ রান তোলে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে তো বটেই, এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩২২ রান করেছিল মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। আর এশিয়া কাপে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩২৯ করেছিল বাংলাদেশ।

এই রান তাড়া করে জিততে হলে বিশ্বরেকর্ড গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কারণ বিশ্বকাপে এত রান তাড়া করে জেতেনি আর কেউ। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের তোলা ৩২৭ রান তাড়া করে জিতে রেকর্ড গড়েছিল আয়ারল্যান্ড। তবে ইতিহাসের পাতা ওলট-পালট করতে পারেনি প্রোটিয়ারা।

রেকর্ড পুঁজি এনে দিতে শুরুতে ঝড় তুলে সুর ধরিয়ে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকার। সেই সুর ধরেই দারুণ জুটিতে ভিত গড়ে দেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ-মোসাদ্দেক হোসেন মিলে শেষটা যেমন হওয়া দরকার ঠিক যেন সেটাই করেন।

দলের হয়ে ৮০ বলে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন মুশফিক, সাকিব করেন ৮৫ বলে ৭৫। দুজনে মিলে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪২ রানের জুটি গড়েন। তার আগে ইনিংসের শুরুতে সৌম্য ৩০ বলে ৪২ রানের ঝড় তুলে ফেরেন। শেষ দিকে রান বাড়ানোর কাজ করেন মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক। ২০ বলে ২৬ করে ফেরেন মোসাদ্দেক। ৩৩ বলে ৪৬ করে অপরাজিত থেকে যান মাহমুদউল্লাহ।

বাংলাদেশের ইনিংসটা এগিয়েছে ওঠা-নামার মধ্য দিয়ে। প্রথম দশ ওভারে আসে ৬৫ রান। কিন্তু শুরুর ৫ ওভারে রান ছিল মাত্র ১৪। পরের ৫ ওভার সৌম্যের ঝড়ে আসে ৫১ রান। এই সময়ে সৌম্যের ৩০ বলে ৪২ রানের ইনিংসটাই গড়ে দেয় ভিত।

তামিমের পর সৌম্য ফিরে গেলেও সেই সুর নিয়েই দলকে টানেন মুশফিক ও সাকিব। এগারো থেকে বিশ ওভারে আসে ৫৯ রান, একুশ থেকে ত্রিশ ওভারে ৬৬। তবে সাকিব-মুশফিক রেকর্ড জুটি ভাঙায় ৩১ থেকে ৪০ ওভারের ধাপে রান আসে একটু কম, ৫৪। শেষ দশ ওভারে গতি বাড়ায় বাংলাদেশ। তোলে ৮৬ রান। বিশেষ করে শেষ ৫ ওভারে তাণ্ডব চালান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যোগ করেন ৫৯ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩৩০/৬  (তামিম ১৬, সৌম্য ৪২, সাকিব ৭৫, মুশফিক ৭৮, মিঠুন ২১, মাহমুদউল্লাহ ৪৬*, মোসাদ্দেক ২৬, মিরাজ ৫*; এনগিদি ০/৩৪, রাবাদা ০/৫৭, ফেলুকওয়ায়ো ২/৫২, মরিস ২/৭৩, মার্করাম ০/৩৮, তাহির ২/৫৭, ডুমিনি ০/১০)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩০৯/৮ (ডি কক ২৩, মার্করাম ৪৫, দু প্লেসি ৬২, মিলার ৩৮, ভ্যান ডার ডুসেন ৪১, ডুমিনি ৪৫, ফেলুকওয়ায়ো ৮, মরিস ১০, রাবাদা ১৩*, তাহির ১০*; মোস্তাফিজুর ৩/৬৭, মিরাজ ১/৪৪, সাইফুদ্দিন ২/৫৭, সাকিব ১/৫০, মাশরাফি ০/৪৯, মোসাদ্দেক ০/৩৮)।

Comments

The Daily Star  | English

Wrap up polls preparations by December

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday ordered the authorities concerned to complete, by December, the preparations for the upcoming national election.

5h ago