ভোগান্তিতে হবিগঞ্জবাসী

পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেই পানিতে

কয়েক দিন থেকে প্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। এতে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী। এমনকী, হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেও পানির নিচে। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে এই বিপাকে বিরক্ত সবাই।
একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে হবিগঞ্জে। ছবি: স্টার

কয়েক দিন থেকে প্রায় বৃষ্টি হচ্ছে। এতে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন শহরবাসী। এমনকী, হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেও পানির নিচে। ঈদের ঠিক আগমুহূর্তে এই বিপাকে বিরক্ত সবাই।

গত ৩১ মে ভোর রাতে হবিগঞ্জ শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় তিন ঘণ্টার টানা বর্ষণ হয়। এরপর প্রায় কিছু শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় কাদা জমে যায়। এছাড়া শহরের নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ভোগান্তিতে পড়েন পৌরবাসী।

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখো যায়, শায়েস্তানগর, ইনাতাবাদ, চৌধুরীবাজার, সার্কিট হাউজ রোড, নোয়াহাটি, পুলিশ সুপারের বাসভবন, বগলবাজার, উত্তর শ্যামলী, নোয়াবাদ, মোহনপুর, শ্যামলী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও বাসভবন, পুরাতন হাসপাতাল সড়ক, কালিগাছ তলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে মানুষের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। অনেক বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান অনেকে।

পৌরবাসীর অভিযোগ, পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বছরের পর বছর পৌরবাসী জলাবদ্ধতার সাথে যুদ্ধ করে আসলেও সমস্যা সমাধানে উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ।

শায়েস্তানগর এলাকার পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ী চাচ্চু মিয়া জানান, “শায়েস্তানগর এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে আমরা ব্যবসায়ীরাসহ এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগে পোহাতে হয়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষ এই দুর্ভোগ নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।”

জলাবদ্ধতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বাসিন্দা শাহ্ আলম বলেন, “শহরের জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য অনেক টাকা খরচ করে নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু, তারপরও জলাবদ্ধতার হাত থেকে আমরা রক্ষা পাচ্ছি না।”

Habiganj
বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মন্দা চলছে হবিগঞ্জের ঈদের বাজারে। ছবি: স্টার

বৃষ্টিপাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড সড়ক, শায়েস্তানগর হকার্স মার্কেট, শায়েস্তাগঞ্জ আবাসিক এলাকা, শ্যামলী এলাকা, গরুর বাজার, অনন্তপুর, ঘাটিয়া এলাকাসহ শহরজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়। এতে হাজার হাজার টাকার আসবাবপত্রসহ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া জলাবদ্ধতার মাঝে শহরবাসী চলাচল করতেও পারছেন না।

ঈদের পোশাক কিনতে আসা কলেজছাত্রী হ্যাপি আক্তার নাজমা বলেন, “হবিগঞ্জ শহরের জলাবদ্ধতা নিত্য সঙ্গী। মার্কেটে যাওয়ার সময় রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে আসা-যাওয়া করতে কষ্ট হচ্ছে। যারা পোশাক কিনছেন, তারা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।”

একজন ভুক্তভোগী শেখ ফজলে এলাহী ফেইসবুকে লিখেছেন, পুরাতন খোয়াই নদী এবং ব্যাক রোডের খাল ভরাট এই জলাবদ্ধতার জন্য প্রধানত দায়ী। আজ হবিগঞ্জে এসে বাসায় ঢুকতেই জলাবদ্ধতার শিকার হলাম। ভাবছি আবার যখন আসব তখন হয়তো দেখবো ঘরের ভেতরেই পানি থৈ থৈ করছে।

হবিগঞ্জে কখনো জলাবদ্ধতা ছিলো না। পৌরসভা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাজকর্ম ও অবহেলা জলাবদ্ধতা ডেকে নিয়ে এসেছে বলে অনেকের অভিযোগ। তারা জানান, যে খালগুলো দিয়ে শহরের পানি নিষ্কাশিত হতো সেগুলি ভরাট করে বিভিন্ন নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। ফলে যে সম্পদ ছিলো জনগণের তা ব্যক্তি মালিকানায় পরিণত হয়েছে।

সামনে যিনি মেয়র হবেন তার প্রথম প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত এ জলাবদ্ধতা দূর করা। জলাবদ্ধতায় হবিগঞ্জ শহরের অন্যতম প্রধান উদ্বেগ বলেও মন্তব্য করেন অনেকে।

পরিবেশ আন্দোলন বাপার হবিগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, পুরাতন খোয়াই নদী দখল এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণেই হবিগঞ্জে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। হবিগঞ্জ শহর ও আশপাশে জলাবদ্ধতা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই শহরে দেখা দেয় কৃত্রিম বন্যা। শহরের উঁচু-নিচু এলাকা জলামগ্ন হচ্ছে অহরহ। ঘর-বাড়িতে ঢুকছে বৃষ্টির পানি। বৃষ্টির পানির প্রধান আধার পুরাতন খোয়াই নদী, বাইপাস সড়ক সংলগ্ন খাল, পুকুর, জলাশয় দখল-ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে হবিগঞ্জ জলাবদ্ধতার শহর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, নিয়মিত আন্দোলন এবং প্রশাসনের লোকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউই।

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি মাস্টার প্ল্যান গ্রহণ করতে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

হবিগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিলীপ দাস বলেন, হবিগঞ্জ পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে কাজ করে যাচ্ছি।

হবিগঞ্জের বাসিন্দা ব্যারিষ্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন ফেইসবুকে লিখেছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড নিজেই পানির নিচে- আমরা যাব কই।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago