১৯০ কোটি টাকার ৩১ কিলোমিটার সড়ক

নির্মাণ কাজের পাশাপাশি ভাঙছেও

Kushtia-Rajbari highway in Kumarkhali upazila
কুমারখালী উপজেলায় কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের দৃশ্য। ছবি: আমানুর আমান

এ গল্প কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের। এটি একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। এটি গিয়েছে কুষ্টিয়া থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়াঘাট পর্যন্ত। এর মধ্যে কুষ্টিয়া অংশে রয়েছে ৩১ কিলোমিটার। যার মধ্যে নির্মাণ কাজ হয়েছে ১১ কিলোমিটারের। বাকিটা শেষ হতে এ বছর লাগবে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এদিকে এরই মধ্যে নির্মিত সড়কের দুপাশে দেখা দিয়েছে ভাঙন।

এ নিয়ে সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। এ সড়কের কাজ শেষে কতোটুকু টিকবে তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় এমন অনেকেই কাজের মান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তুলেছেন প্রশ্ন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় ইতোমধ্যে শেষ হওয়া ১১ কিলোমিটার রাস্তার দু’পাশ ভেঙেছে কমছে কম ৫০ এর বেশি জায়গায়। বিশেষজ্ঞগণ বলছেন রাস্তার দুপাশে প্যারাসাইট না দেওয়ায় এর পাশ থেকে মাটি সড়ে গেছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাত। অরক্ষিত হয়ে পড়েছে মূল সড়কের পিচ।

সূত্র জানায়, ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয় গত বছরের মার্চ মাসে। যদিও কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিলো ২০১৭ সালে। বর্তমানে ১৮ ফুট প্রশস্ত সড়কটি দুপাশে আরও ৩ ফুট করে ৬ ফুট প্রশস্ত করার পাশাপাশি মাঝের ১৮ ফুট শুধু উপরের অংশ সিলকোট করা হচ্ছে।

কাজ হয়েছে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস থেকে কুমারখালী উপজেলা পর্যন্ত। চৌড়হাস থেকে কুমারখালী উপজেলা দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। মাঝখানে ২ কিলোমিটার পড়ে রয়েছে কাজ ছাড়াই।

এই প্রতিবেদক গত ৬ জুন চৌড়হাস থেকে কুষ্টিয়া শেষ সীমা খোকসা উপজেলা পর্যন্ত মোট ৩১ কিলোমিটার ভ্রমণ করেন। দেখা যায়, কুমারখালী থেকে খোকসা পর্যন্ত রাস্তায় দৃশ্যত কোনো কাজই হয়নি। কাজের অগ্রগতি ৪০ ভাগও নয়। অথচ এ বছরের নভেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। রাস্তার উপর যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ইট-খোয়া-বালি। খানাখন্দে ভরা পুরো রাস্তা। এভাবেই শেষ হয়েছে জনগণের ঈদযাত্রা।

কাজের এ অবস্থার জন্য দায়ী করা হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর গাফিলতিকে। এখানে কাগজপত্রে কাজ করছে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে, একটি প্রতিষ্ঠান প্রথম দরদাতা হিসেবে কাজটি পেলেও বাস্তবায়ন করছে তৃতীয় দরদাতা। যার নাম হলো জহুরুল ইসলাম কনস্ট্রাকশন। যে প্রতিষ্ঠানের বড় কোনো কাজ বাস্তবায়নের সামর্থ্যই নেই বলে নাম প্রকাশ না করে অভিমত দিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে এই একই প্রতিষ্ঠানের করা কুষ্টিয়া মেডিকেলের ছাদ ধ্বসে শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

যা হোক নির্মাণাধীন রাস্তার দুপাশ ভেঙে পড়া নিয়ে কথা বলেছেন কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, এমনটি হয়েছে মূল রাস্তার বাইরে দিয়ে। সেখানে নতুন তোলা কাঁচা মাটি ধসে গেছে বৃষ্টির কারণে। এটা ঠিক করা হবে।

কেনো প্যারাসাইট দেওয়া হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন এ ধরনের রাস্তায় পুরো প্যারাসাইট দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

এদিকে, কোনো কথাই বলেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও এর কোনো প্রতিনিধি। ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক জহুরুল ইসলামের ফোন। জানা যায়, তিনি দেশের বাইরে আছেন।

এদিকে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে রাস্তা নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানাভাবে কাজে অনিয়ম করে আসছে। এরা দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজের নামে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছে।

কুমারখালীর নন্দলালপুরের বাসিন্দা ও পেশায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলী আজমল হোসেন কাজ করেন একটি বেসরকারি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। ঈদে বাড়িতে এসে জানালেন রাস্তার কাজ মানসম্মত হয়নি।

তার মতে, “একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তায় গর্ত সৃষ্টি হবে। কারণ পিচ অনেক জায়গাতেই আলগা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে।”

আমানুর আমান, দ্য ডেইলি স্টারের কুষ্টিয়া সংবাদদাতা

Comments

The Daily Star  | English
NCP will not accept delay in Teesta master plan

Won’t accept any implementation delay: Nahid

National Citizen Party Convener Nahid Islam yesterday said his party would not accept any delay or political maneuver over implementing the Teesta master plan.

3h ago