নিউইয়র্কেও আছে কৃষক লীগ, নেই দেশের কৃষকের পাশে

Bangladesh Krishak League
ছবি: সংগৃহীত

কৃষকের স্বার্থে কাজ করবে এমন প্রত্যাশায় ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আওয়ামী লীগের সাতটি অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে কৃষক লীগ অন্যতম। 

৪৭ বছর পার করা এই সংগঠনটি অতি সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্য সংগঠনগুলোর মতো কিছু করে নয়, বরং কিছু না করেই আলোচনায় এসেছে কৃষক লীগ। নিজেদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া প্রান্তিক কৃষকদের হাহাকারের সময়ে নীরব থেকে আলোচনায় এসেছে সংগঠনটি। গত একমাস ধরে কৃষকদের এই সমস্যা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি কৃষক লীগ, দেয়নি কোনো বিবৃতিও। তাদের কোনো নেতৃবৃন্দকেও দেখা যায়নি কৃষকদের পাশে।

বাম দলের কৃষক সংগঠনগুলো কৃষকদের পক্ষে মাঠে নেমেছে, কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি কৃষক লীগকে। তবে কৃষক লীগের অনেককে দেখা গেছে কৃষকের তালিকায় নাম উঠিয়ে সরকারকে ধান সরবরাহ করতে।

উৎপাদন খরচের অনেক কমে প্রতি মণ ৫০০-৬০০ টাকায় ধান বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। প্রতিবাদে নিজের পাকা ধানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া কিংবা প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় ধান ছড়িয়ে প্রতিবাদের মত কর্মসূচিও পালন করেছেন প্রান্তিক কৃষকরা।

প্রতিবাদে আসেনি কোনো ফল। এবারের ঈদে আনন্দ ছিলো না কৃষক পরিবারে।

খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী দফায় দফায় বৈঠক করেছেন, প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা এসেছে কৃষকের স্বার্থরক্ষায়। কিন্তু, কৃষকের স্বার্থরক্ষায় জন্ম নেওয়া কৃষক লীগ থেকেছে আশ্চর্য রকমের নীরব।

কৃষক লীগের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন আছে খোদ আওয়ামী লীগের ভেতরেই। গত বছর ৩০ এপ্রিল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কৃষক লীগের কমিটিতে কয়জন কৃষক এবং এই সংগঠনের বৈদেশিক শাখা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই অনুষ্ঠানে নিদিষ্ট কর্মসূচি প্রণয়ন করে ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের নিয়ে সমাবেশ করার অনুরোধ জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু, এমন কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি এখনও। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া ছাড়া কোনো কর্মসূচিই নেই এই সংগঠনের। 

তিন বছর মেয়াদের কৃষক লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই। সম্মেলনে মোতাহার হোসেন মোল্লা সভাপতি এবং খন্দকার শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

মোতাহার হোসেন মোল্লা কাপাসিয়া উপজেলার প্রাক্তন চেয়ারম্যান এবং একজন ঠিকাদার ব্যবসায়ী, অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী।

১১১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নামমাত্র সংখ্যক কৃষক আছেন এবং তাদের অধিকাংশের পেশা কৃষক উল্লেখ করা থাকলেও কৃষি কাজ করেন না।

এ বিষয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার নিজের সংগঠনকে ‘অটিস্টিক’ সংগঠন হিসাবে উল্লেখ করে বলেন কৃষকদের স্বার্থে কোনো কাজ নেই এই সংগঠনের। কমিটি বাণিজ্য নিয়ে নেতারা ব্যস্ত এমন অভিযোগ করে তিনি এই সংগঠনের বিদেশের শাখা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষক লীগের কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব, মালায়েশিয়া, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রে শাখা আছে, যেখানে কৃষক নেই। তাহলে কেনো এই শহর বা দেশগুলোতে কৃষক লীগের শাখা? এমন প্রশ্নে এই নেতার এক শব্দের উত্তর ‘অর্থ’। তিনি উত্তরা, ধানমন্ডি কিংবা মতিঝিল শাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনে নিউইয়র্ক-কেন্দ্রিক কৃষক লীগের যুক্তরাষ্ট্র কমিটি গঠিত হয়েছে। সেই কমিটির সভাপতি হয়েছেন হাজী নিজামউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হাজী এম আলী আক্কাস। নিউইয়র্ককে বলা হয় পৃথিবীর বাণিজ্যিক রাজধানী। সেখানেও আছে কৃষক লীগ, নেই দেশের কৃষকের পাশে।  

পার্থ প্রতীম ভট্টাচার্য্য, প্রধান প্রতিবেদক, দ্য ডেইলি স্টার

Comments