পাটুরিয়া ঘাটে বন্ধ হয়নি বাড়তি ভাড়া আদায়
মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড়ে পা ফেলার যায়গা নেই। আজ মঙ্গলবারও এই ঘাটে গণপরিবহন সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন বহু মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যাত্রীদের। আর এই ভোগান্তিকে পুঁজি করে তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাস ভাড়া আদায় চলছে অভিযোগ। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেও বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না।
যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানীমুখী যাত্রীদের ভিড় থাকায় পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকরা স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় গাড়ির কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে যাত্রীদের জিম্মি করে তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছে করছে।
এদিকে বাস সংকটের কারণে খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, রিক্সা-ভ্যানে করেও ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা। সেখানেও অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে তাদের। গণপরিবহন সংকটের কারণে একরকম বাধ্য হয়েই মালামাল পরিবহনের গাড়িতে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।
মঙ্গলবার সারাদিন পাটুরিয়া ঘাটে অবস্থান করে দেখা যায় ফেরি ও লঞ্চযোগে পাটুরিয়া ঘাটে আসছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা। ঘাটের পুরো এলাকা যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত। এদের মধ্যে অনেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কাজ করেন। তারা জানান, বুধবার (১২ জুন) গার্মেন্টস কর্মীদের কারখানা খোলায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই তারা ছুটছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে।
অভিযোগ করে অনেকেই বলেন, প্রতিটি গাড়িতেই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। বাসের সিট ভরে যাওয়ার পরও দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়া হচ্ছে।
গার্মেন্টস কর্মী কুষ্টিয়ার বাসিন্দা সাবিনা আক্তার বলেন, তিনি তার দিনমজুর স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে তিন ঘণ্টা ধরে পাটুরিয়া ঘাটে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকার ফিরছেন তারা। হাতে অতিরিক্ত টাকা নেই। তিনজনের ঢাকা যেতে তার হাতে আছে ৮০০ টাকা। কিন্তু বাস ভাড়াই চাইছে ১২০০ টাকা। এ কারণে তিনি কোনো গাড়িতেই উঠতে পারছেন না। বড় বিপদে আছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, পাটুরিয়া ঘাটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ করার পর সেখান থেকে দফায় দফায় পুলিশ গিয়েও বন্ধ করতে পারছেন না বাড়তি ভাড়া আদায়। পুলিশ গেলেই বাসের চালক-কন্ডাকটররা কেটে পড়েন। কিছুক্ষণ পর আবার তারা বাসে এসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছেন।
এ কথা স্বীকার করে করে পাটুরিয়া ঘাটের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রাসেল আরাফাত বলেন, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম। এ কারণে সমস্যা হচ্ছে। পাটুরিয়া থেকে ঢাকামুখী যাত্রী আছে কিন্তু পাটুরিয়ামুখী যাত্রী কম। ঢাকা বা অন্যান্য জায়গা থেকে এ কারণে গাড়িগুলোকে খালি আসতে হচ্ছে। তাই তারা বেশি ভাড়া আদায় করছে। তবে, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার রিফাত রহমান শামীম বলেন, গাড়ি সংকটের কারণে যাত্রী পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় তিনি নিজ উদ্যোগে ঢাকার পরিবহন নেতাদের মাধ্যমে কিছু অতিরিক্ত গাড়ি এই রুটে এনে যাত্রীদের দুর্ভোগ কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করেছেন।
তিনি বলেন, যাত্রীর তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম। এ কারণে বাস মালিক-শ্রমিকরা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা বন্ধে পুলিশ তৎপর আছে বলে জানান তিনি।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস বলেন, অতিরিক্ত বাড়া আদায় ঠেকাতে পাটুরিয়া ঘাটে এবং মহাসড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়েছে। তারা কাজ করছেন। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় গত কয়েকদিনে বেশ কিছু পরিবহনকে জরিমানাও করা হয়েছে।
তবে, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে পর্যাপ্ত ফেরি ও লঞ্চ থাকায় যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে বলেই জানান বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান।
Comments