জিনিসপত্রের দাম ৩৮.৫ শতাংশ বাড়তে পারে: বিএনপি
জাতীয় সংসদে গতকাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এ নিয়ে আজ (১৪ জুন) বিকালে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরকৃত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লক্ষ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বড় করার চমক সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন যেনো অর্থমন্ত্রী। কিন্তু, বাজেট বৃদ্ধির এ প্রগলভতা বছর শেষে চুপসে যেতে দেখা যায়। বাজেটের আকার কত বড় এ নিয়ে আর জনমনে কোন উচ্ছ্বাস নেই। কেননা প্রত্যেক বছর বছরের শেষ দিকে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ যেভাবে কাট-ছাঁট করা হয়, তাতে বিরাটাকার বাজেটের অন্তঃসারশূন্যটাই প্রকাশ পায়।
চলতি বছর বাজেটের আকার ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের আকার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বর্তমান বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে, এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করের পরিমাণ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি, আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক উৎস থেকে ধরা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যার সিংহভাগই ধরা হয়েছে এনবিআর থেকে। অথচ চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় বেশ ঘাটতি রয়েছে। তার উপর এবার আরও বড় আকারের আদায়ের পরিকল্পনা। এটা রাতারাতি সম্ভব না। বর্তমানে যে ব্যবস্থাপনা রয়েছে তাতে ঘাটতি বরং আরও বাড়বে।
ঘোষিত বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ- সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। বর্তমান অর্থমন্ত্রী পরিকল্পনামন্ত্রী থাকাকালে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দেওয়ালে লেখা দেখা গেছে ‘সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’। আবার বছর খানেক আগে টিভির পর্দায় একটি পণ্যের অ্যাডভারটাইজমেনট হিসেবেও শোনা গেছে ‘সময় এখন আমাদের’। আসলে সময় এখন তাহাদের এবং একমাত্র তাহাদেরই। সেটা বাংলাদেশের মানুষের বুঝতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। বাজেটের শিরোনাম থেকেই উন্নয়নের ‘গীত’ প্রকৃষ্ট হয়ে উঠেছে। কিন্তু, এই তথাকথিত উন্নয়নের ‘গীত’ আর মানুষ শুনতে চায় না। কর আর দ্রব্যমূল্যের চাপে ভোক্তা সাধারণের এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। আয়-বৈষম্য, বেকারত্ব, অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতার মুখোমুখি জনগণ এখন আর উন্নয়নের মিষ্টি কথায় সন্তুষ্ট হতে পারছে না।
আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিপুল অংকের ব্যয়ের আকাঙ্ক্ষা থাকলেও সরকারের আয়ের সামর্থ্য কমে গেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণে ব্যর্থতা ও নাজুক আর্থিক খাত। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হলেও, সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। যদিও, অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এনবিআর আদায় করতে পেরেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩ মাসে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হয় কী-না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে যা নেতিবাচক বলেই মনে হয়।
তাছাড়া, মোট রাজস্বের মধ্যে বড় অংশ হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট। আগামী ১ জুলাই থেকে ভ্যাট ও সম্পূরক আইন ২০১২ কার্যকর করা হবে। নতুন আইনে ভ্যাটের স্তর থাকবে ৫টি। এই স্তরভিত্তিক ভ্যাট হার অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ। ব্যবসায়ীরা রেয়াত নিতে না পারলে এটি আবগারি শুল্কের মতো হয়ে যেতে পারে। রেয়াতের টাকা কীভাবে দেওয়া হবে, সেই বিষয়ে পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন আইনে ব্যবসায়ীরা রেয়াত চাইতে শুরু করলে সরকারকে নিজের পকেটের টাকা দিতে হবে। এজন্য বছরে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। এভাবে নতুন আইনটি কার্যকর হতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।
সরকারের পক্ষে যদি ভ্যাটের রেয়াতের টাকা ফেরত দেওয়া সম্ভব না হয়, তবে ভ্যাট কার্যত আবগারি শুল্কে পরিণত হবে। এতে করের ওপর আবার কর আরোপ হবে। এর ফলে, জিনিসপত্রের দাম সাড়ে ৩৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যার চাপ পড়বে সম্পূর্ণ ভোক্তার ওপর। ভ্যাট মূলত ভোক্তা পরিশোধ করে, যা বিভিন্ন স্তরে মূল্য সংযোজন এর প্রেক্ষিতে রেয়াতের মাধ্যমে সমন্বিত হয়ে ভ্যাট প্রদানকারীকে ফেরত দেওয়ার কথা। কিন্তু, এই রেয়াত দেওয়ার কোন সংস্কৃতি এ দেশে গড়ে উঠেনি। ফেরত পাওয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি আর হয়রানীর শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের।
সেখানে আরও বলা হয়েছে, এই বাজেটে পরিচালনা ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। আয়-ব্যয়ের বিশাল পার্থক্যের কারণে এবার বাজেট ঘাটতিও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ২০১৯ -২০ অর্থবছরে অনুদান ছাড়া বাজেট ঘাটতি দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা যা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ। এদিকে, চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা অর্থাৎ ঘোষিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বাড়লো ২০ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এই ঘাটতি মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থ বছরে বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া হবে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ খাতের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা থেকে নেওয়ার পরিকল্পনা কর হচ্ছে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ রয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। ঘোষিত অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বাজেটে ব্যয় বেড়েই চলছে। ব্যয় দুই প্রকার রাজস্ব ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয়। ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী মোট ব্যয় ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। বিগত ১০ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ ব্যয় মোট বরাদ্দের ৫৫ শতাংশের কোঠায় থাকলেও মে ও জুন মাসে ব্যয়ের তথাকথিত উল্লম্ফন ঘটবে। রাজস্ব ব্যয় মোটামুটি ঘোষিত বাজেট অনুযায়ী হবে। অর্থাৎ ঘাটতি মোকাবিলায় ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাবে।
ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে সুদ-আসল পরিশোধ করতেই বিশাল ব্যয় হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ খাতে রাজস্ব ব্যয়ের ১৮ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের গুণগত সার্বিক রূপান্তরে অত্যধিক প্রয়োজনীয় মানব পুঁজি বা দক্ষ শ্রমশক্তি বিনির্মাণে, তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না। উপরন্তু ঋণের পরিমাণ সুদসহ জমতে জমতে পাহাড়সম হলে পরিশোধের কোনো দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই। বলা বাহুল্য, এর দায়ভার কিন্তু চাপবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মেও ওপর।
বাজেট ঘাটতি মেনে নেওয়া যায়, যদি তা অর্থনীতিতে গুণক প্রভাব তৈরি করে। ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম বড় কারণ সরকারি চাকরিতে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি, গণহারে পদোন্নতির মাধ্যমে বেতন কাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি। এ অর্থবছরে বেতন-ভাতার জন্য রাজস্ব ব্যয়ের ২০ দশমিক ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা কোন অবস্থাতেই যুক্তিযুক্ত বলা যাবে না।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দকৃত ব্যয় কতোটা গুণসম্পন্ন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় বারবার সংশোধনের ফলে ঋণের পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে অস্বাভাবিক খরচও চোখে পড়ার মতো। পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চার লেন সড়ক তৈরিতে যেখানে ভারতে ১১ থেকে ১৩ লাখ ও চীনে ১৩ থেকে ১৬ লাখ মার্কিন ডলার খরচ হয়, সেখানে বাংলাদেশে ৫০ লাখের বেশি। সম্প্রতি রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে বালিশ দুর্নীতির যে খবর জনসম্মুখে এসেছে তাকে হিমবাহের চূড়া বলা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকল্পে কোন পর্যায়ের দুর্নীতি হচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়। এছাড়া অর্থবছর শেষে জোড়াতালি দিয়ে এডিপি বাস্তবায়নের হার ৯০-৯২ শতাংশ দেখানো হয়, যা প্রথম ১০ মাসের হিসাবের সঙ্গে কোনোভাবেই সংগতিপূর্ণ নয়।
বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮.২০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে আশা করা হয়েছে। যদিও বছরের শুরুতে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৭.১ শতাংশ। যা প্রশ্নবিদ্ধ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সামষ্টিক অর্থনীতির ইনডেক্সগুলোর কোন সামঞ্জস্য নেই। ৮.১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলে রপ্তানি বাণিজ্য, শিল্প প্রবৃদ্ধি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বেকারত্ব যে হারে হ্রাস পাওয়ার কথা, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে ভিন্ন। মানুষের প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো হাউস হোল্ড সার্ভে রিপোর্ট থেকে দেখা যায় যে, জনগণের মাথাপিছু কিলোক্যালরি কনজাম্পশন অনেক কমে গেছে। বেকারত্ব সংকট চরমে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারের হার প্রকট আকার ধারণ করেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮.১৩ হলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষ কেনো সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে সলিল সমাধি হচ্ছে। দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অবস্থান ইতোমধ্যে নেতিবাচক অবস্থায় চলে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্য নিদারুণ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শিক্ষা খাত প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। সংখ্যায় বাড়লেও শিক্ষার গুণগত মানে ধস নেমেছে। শিক্ষা খাতে ব্যয় মোট জিডিপির ৩.২ শতাংশেরও কম। স্বাস্থ্য খাতে ১ শতাংশেরও কম। মানবসম্পদ আশানুরূপভাবে উন্নত হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে করের টাকা দিয়ে ক্ষতির রাষ্ট্রীয়করণ করা হচ্ছে।
বাজেট শুধু আয়-ব্যয়ের হিসেব নয়, আয়ের পুনর্বন্টনও। প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়-বৈষম্য বৃদ্ধি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরের দিকের পাঁচ ও নিচের পাঁচের মধ্যে ২০১০ সালে পার্থক্য ছিল ৩২ গুণ, যা ২০১৬ সালে হয়েছে ১২১ গুণ। প্রকৃত অর্থে মানুষের জীবনমানের অনেক অবনতি হয়েছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের বিকল্প নেই। সরকার প্রত্যক্ষ করের তুলনায় পরোক্ষ কর আদায় করছে বেশি। আর পরোক্ষ করের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে বেশি। এদিকে, সাধারণ মানুষের অর্থে যে বাজেট তৈরি হয় তার ব্যয় থেকে ধনীদের ভর্তুকি দেওয়া হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে রাষ্ট্রীয় অর্থে তাদের বেইল আউট করা হচ্ছে। অপরদিকে প্রতি বছর ১০ থেকে ১১ লাখ লোককে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতার আওতায় এনে যে সাহায্য দেওয়া হয়, সেটা সমুদ্রের এক বিন্দু শিশিরের মতো। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ জিডিপির ৩ শতাংশের কথা বলা হলেও পেনশন বাদ দিলে তা ১.৭ শতাংশ মাত্র।
অনির্বাচিত সরকার একটি অনির্বাচিত সংসদে এই বাজেট দিয়েছে। গণতন্ত্র না থাকায় সুশাসন নেই দেশে। সু-শাসনের অভাবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত। ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগ বন্ধ, শেয়ার বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংকে তারল্য সংকট চলছে। সরকার দেশকে ঋণনির্ভর অর্থনীতির বৃত্তে আবদ্ধ করে রেখেছে। এই ঋণ শোধ দিতে দেশের মানুষের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। নাগরিকদের ভুগতে হবে চরমভাবে। রফতানির চেয়ে আমদানি বেশি হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকার বাংলাদেশে। প্রবৃদ্ধির যে কথা বলা হচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন আছে। দেশের অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা একটি শ্রেণীর কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে।
অনির্বাচিত সরকারের নৈতিক অধিকার নেই বাজেট দেওয়ার। সরকার জনগণকে বাইরে রেখে যেভাবে নির্বাচন করেছে, একইভাবে বাজেটও দিচ্ছে। যেভাবে জনগণ এই নির্বাচন গ্রহণ করেনি, তেমনি বাজেটও তারা গ্রহণ করবে না বলেও বিএনপির প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করা হয়।
Comments