রুটের সেঞ্চুরিতে উইন্ডিজকে উড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড
মার্ক উড-জোফরা আর্চার মিলে বল হাতে তোপ দেগে অল্প রানে বেঁধে ফেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে। এরপর ব্যাট হাতে জ্বলে ওঠেন জো রুট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেনিং করতে নেমেই হাঁকান ম্যাচ জয়ী সেঞ্চুরি। তার অসাধারণ ইনিংসে ভর করে বিশ্বকাপে তৃতীয় জয়ের দেখা পেয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড।
শুক্রবার (১৪ জুন) সাউদাম্পটনের রোজ বোলে উইন্ডিজের ছুঁড়ে দেওয়া ২১৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১০১ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখে জিতেছে ইংল্যান্ড। ৪ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে উঠে গেছে তারা। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে ক্যারিবিয়ানরা।
সহজ লক্ষ্য তাড়ায় উদ্বোধনী জুটিতে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গী হন জো রুট। কেননা উইন্ডিজের ইনিংস চলাকালে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন জেসন রয়। ইংলিশ অধিনায়ক ইয়ন মরগানও একই কারণে চলে যান মাঠের বাইরে।
রয়ের অনুপস্থিতি অবশ্য বোধ করেনি ইংল্যান্ড। দুই ওপেনার ছিলেন মারমুখী। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৯৫ রান। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে বেয়ারস্টো ৪৫ রান করে ফিরে গেলে ভাঙে জুটি। এরপর আরেক চমক দিয়ে পেস অলরাউন্ডার ক্রিস ওকসকে তিনে ব্যাটিং করতে পাঠায় ইংলিশরা।
দ্বিতীয় উইকেটে রুট-ওকস মিলে যোগ করেন ১০৪ রান। গ্যাব্রিয়েলের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ওকস ৪০ রান করেন। এরপর বেন স্টোকসকে নিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন রুট। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম সেঞ্চুরির স্বাদ নেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। অপরাজিত থাকেন ঠিক ১০০ রানে। তার ৯৪ বলের ইনিংসে ছিল ১১টি চার।
এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৪.৪ ওভারে ২১২ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইংলিশ পেসারদের বিপক্ষে শুরু থেকেই বিপাকে থাকা দলটি স্কোরবোর্ডে লড়াই করার মতো পুঁজি জমা করতে ব্যর্থ হয়।
উইন্ডিজ শিবিরে প্রথম আঘাতটি করেন ওকস। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে দারুণ এক ইয়র্কারে এভিন লুইসকে বোল্ড করেন তিনি। এই ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ক্রিস গেইল। শেই হোপকে সঙ্গে নিয়ে ইংলিশ বোলারদের পাল্টা জবাব দিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি।
তবে দলকে পথ দেখাতে থাকা বিপজ্জনক গেইল ও হোপ ফিরে যান তিন বলের মধ্যে। লিয়াম প্লাঙ্কেটের শর্ট বলে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে গেইল করেন ৩৬ রান। রিভিউ নিয়ে হোপকে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মার্ক উড। ফলে ১৪তম ওভারে দলীয় ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ চাপে পড়ে উইন্ডিজ।
ইংলিশ পেসে ধুঁকতে থাকা ক্যারিবিয়ানরা এরপর নিকোলাস পুরান ও শিমরন হেটমায়ারের ব্যাটিংয়ে দেখতে পায় আশার আলো-দেখতে থাকে বড় সংগ্রহের স্বপ্ন। তবে হেটমায়ারের বিদায়ে ৯৯ বলে ৮৯ রানের এই জুটিটি ভাঙলে খেই হারায় দলটি। ৩৯ রান করে হেটমায়ার ফিরতি ক্যাচ দেন জো রুটকে। এরপর একই কায়দায় উইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডারের উইকেটও তুলে নেন এই পার্টটাইম স্পিনার।
উইকেটে গিয়ে ঝড় তোলার প্রচেষ্টা ছিল আন্দ্রে রাসেলের। আদিল রশিদের বলে ব্যক্তিগত ৩ রানে জীবন পাওয়ার পর হাত খুলে খেলতে শুরুও করেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবীর সহায়তা পেয়েও খুব বেশিদূর যেতে পারেননি তিনি। ১৬ বলে ১ চার ও ২ ছয়ে ২১ রান করে উডের বলে ডিপ মিড-উইকেটে ওকসের হাতে ক্যাচ দেন রাসেল।
একপ্রান্ত আগলে ধরে রাখা পুরান ৭৮ বলে ৬৩ রান করে জোফরা আর্চারের শিকার হলে উইন্ডিজের সব আশা শেষ হয়ে যায়। পরের বলে শেলডন কটরেলের উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন বার্বাডোজে জন্ম নেওয়া এই পেসার। জন্মভূমির বিপক্ষে খেলতে নামা আর্চারের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস মুড়িয়ে দেওয়ার কাজটা সারেন উড। ফলে ৬৮ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট হারায় দলটি। উড ১৮ রানে নেন ৩ উইকেট। আর্চার সমান সংখ্যাক উইকেট পান ৩০ রানে। ২ উইকেট নেন রুট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২১২ (৪৪.৪ ওভারে) (গেইল ৩৬, লুইস ২, হোপ ১১, পুরান ৬৩, হেটমায়ার ৩৯, হোল্ডার ৯, রাসেল ২১, ব্র্যাথওয়েট ১৪, কটরেল ০, থমাস ০*, গ্যাব্রিয়েল ০; ওকস ১/১৬, আর্চার ৩/৩০, প্লাঙ্কেট ১/৩০, উড ৩/১৮, স্টোকস ০/২৫, রশিদ ০/৬১, রুট ২/২৭)।
ইংল্যান্ড: ২১৩/২ (৩৩.১ ওভারে) (বেয়ারস্টো ৪৫, রুট ১০০*, ওকস ৪০, স্টোকস ১০*; কটরেল ০/১৭, থমাস ০/৪৩, গ্যাব্রিয়েল ২/৪৯, রাসেল ০/১৪, হোল্ডার ০/৩১, ব্র্যাথওয়েট ০/৩৫, গেইল ০/২২)।
Comments