অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অসম্ভব নয়

shakib al hasan
ছবি: এএফপি

টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে কেবল অস্ট্রেলিয়াকেই ওয়ানডেতে একাধিকবার হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। একমাত্র জয়টা অবশ্য ঐতিহাসিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলার শুরুর দিকের সেই জয় নানা কারণেই স্মরণীয় হয়ে আছে বাংলাদেশের জন্য। ২০০৫ সালের ১৮ জুন ওয়েলসের কার্ডিফে যখন জয়ের আনন্দে মেতেছিলেন দলের ক্রিকেটাররা, তখন অসিরা ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল!

এরপর কেটে গেছে ১৪ বছর। অস্ট্রেলিয়াকে আর হারানো হয়নি বাংলাদেশের। তবে এটা সত্য যে, দ্বীপদেশটির বিপক্ষে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগও হয়নি টাইগারদের। ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পর সবমিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২০টি ম্যাচে অসিদের মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। সবশেষ সাত বছরে মাত্র দুবার মুখোমুখি হয়েছে দুদল। দুটি ম্যাচই পরিত্যক্ত হয় বৃষ্টির কারণে। তবে ওই দুই ম্যাচ থেকে পাওয়া একটি করে পয়েন্ট বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হয়েই এসেছিল। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল আর ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল মহামূল্যবান পয়েন্ট দুটো।

পরিসংখ্যানের হিসাবনিকাশ ঠেলে সরিয়ে বৃহস্পতিবারের (২০ জুন) ম্যাচের দিকে ফেরা যাক। নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে অস্ট্রেলিয়া নামক পরীক্ষা। মাশরাফি বিন মর্তুজার দল জয় না পেলেও প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা কাগজে-কলমে টিকে ঠিকই থাকবে। তবে বাস্তবতা বলছে, সেটা অসম্ভবেরই পর্যায়ে।

আসরে এখন পর্যন্ত দুদলই খেলেছে পাঁচটি করে ম্যাচ। চার জয় ও এক হারে ৮ পয়েন্ট নিয়ে নেট রান রেটে পিছিয়ে থেকে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে অ্যারন ফিঞ্চের দল। আর দুই জয়, এক পরিত্যক্ত ম্যাচ ও দুই হারে পাওয়া ৫ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। সেমিতে ওঠার পথটা তাই সহজ নয়। বাকি থাকা চার ম্যাচেই সেরা ফলটা আদায় করে নিতে হবে বাংলাদেশকে। সেই পথে প্রথম বাধা অস্ট্রেলিয়া।

শক্তিমত্তায় এগিয়ে স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নাররা। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সেই সঙ্গে তারা বড় মঞ্চের দল। পাঁচবার ঘরে তুলেছে বিশ্বকাপের শিরোপা। গেল আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি। তাছাড়া এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তাদের বিপক্ষে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয়খরা তো আছেই। অর্থাৎ, ভয় পাওয়ার মতো অনুষঙ্গের অভাব নেই টাইগারদের। এই ভয়কেই জয় করে পূর্ণ পয়েন্ট ছিনিয়ে নিতে হবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।

সেই লক্ষ্যে সফল হতে বাংলাদেশের মূল অস্ত্র সাকিব আল হাসানের চোখ ধাঁধানো ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। ব্যাট হাতে নিজের সেরাটা দিচ্ছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনি। বল হাতেও কম যাচ্ছেন না। কিন্তু ক্রিকেট তো আর একা হাতের খেলা নয়। দলীয় পারফরম্যান্স দেখিয়েই শেষ হাসি হাসতে হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সবশেষ ম্যাচে রেকর্ডগড়া জয়ের পর মাশরাফি প্রত্যাশা জানিয়েছিলেন সতীর্থদের প্রতি, সাকিবকে সহযোগিতা করতে বাকিরাও যেন এগিয়ে আসেন। গেল ম্যাচে যেমনটা পাওয়া গিয়েছিল লিটন দাসের কাছ থেকে।

মোস্তাফিজুর রহমানের গেল ম্যাচের বোলিং ফের আশা জাগাচ্ছে। রান বেশি দিলেও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট শিকার করে ম্যাচের মোড়ই ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। তবে অসিদের বিপক্ষে তার মাঠে নামাটা নিশ্চিত নয়। পিঠের চোটে থাকা এই পেস অলরাউন্ডারের জায়গায় খেলতে পারেন রুবেল হোসেন, যিনি গেল বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোয়ার্টার ফাইনালে তোলার অন্যতম নায়ক। উইন্ডিজের বিপক্ষে রানআউট হওয়ার আগে তামিম ইকবাল রানে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। মুশফিকুর রহিমের সেরাটা এখনও পাওনা বাংলাদেশের। এই তালিকায় আছেন অধিনায়ক মাশরাফি আর মাহমুদউল্লাহও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই যদি তারা একসঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেন, তবে ফিঞ্চের দলকে জোরালো চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিতে পারবে বাংলাদেশ।

একটি ভয়কে জয় করার কথা অবশ্য এরই মধ্যে জোরেশোরে উচ্চারণ করেছেন সাকিব-লিটনরা। অস্ট্রেলিয়া দলে গতিময় পেসারের অভাব নেই। মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স থেকে শুরু করে নাথান কোল্টার-নাইল, কেন রিচার্ডসনরা গতিকে কাজে লাগিয়ে শর্ট বল করতে ওস্তাদ। পেসবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কুপোকাত করতে এই শর্ট বলকেই বেছে নেয় প্রতিপক্ষ। আগের ম্যাচে উইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল-শেলডন কটরেল-ওশানে থমাসরা একই কৌশল নিয়েছিলেন। কিন্তু তার যোগ্য জবাব দিয়েছেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। তার আগে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকার গতি তারকাদেরও মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। উইন্ডিজকে হারানোর পর সেই আত্মবিশ্বাসকে পুঁজি করে সাকিব-লিটন দুজনই জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার পেসারদের গতিকে ভয় পাচ্ছেন না তারা।

এই একই ঝাঁঝালো মানসিকতা কাজে লাগাতে হবে বাকি সব ক্ষেত্রেও। র‍্যাঙ্কিং-দলীয় সামর্থ্য-পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকার ভয়কে করতে হবে জয়। ম্যাচটা যে বাংলাদেশের জন্য একরকম, ডু অর ডাই ( জয় অথবা বিদায় )! ম্যাচের আগের দিন সাংবাদিকদের কাছে বলা মাশরাফির কথার সুর ধরে সবশেষে বলতে হয়- অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জেতাটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়।

Comments

The Daily Star  | English

A transitional budget for troubled times

Govt signals people-centric priorities but faces tough trade-offs

3h ago