সাউদাম্পটনে প্রতিপক্ষ যে কেবল আফগানিস্তানই নয়

Bangladesh Practice

ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো বিলেতের আকাশের সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের মেজাজ-মর্জির যেন উঠা-নামা। এক ম্যাচ জিতলে ফুরফুরে রোদের দিন, পরের ম্যাচে হারের পর সেখানেই ঘন কালো মেঘের গর্জন। জেতার পর বন্দনা চারপাশে, হারের পর তেতো কথায় কিলবিল। দল হারলে অন্দর থেকেও আবার বেরিয়ে যাচ্ছে এমন কিছু খবর, এমন কিছু গুঞ্জন যা বেশ অস্বস্তিরই কারণ।

বিশ্বকাপে ক্রমাগত হারতে থাকা আফগানিস্তানের বিপক্ষে আর কী এমন চ্যালেঞ্জ? ‘খেলতে নামব, খেলব এবং জিতব’, এমনটাই তো হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব আসলে বলছে, পরের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কেবলই আফগানিস্তান নয়।

নটিংহ্যামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ খারাপ খেলেনি। হারের পর সেমিফাইনালে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ায় হতাশা জমেছে তীব্র। তবে খেলার ধরনে গোটা দুনিয়ারই বাহবা পেয়েছে বাংলাদেশ দল। শুক্রবার (২১ জুন) নটিংহ্যাম থেকে দল পৌঁছেছে সাউদাম্পটনে। কিন্তু নটিংহ্যামে তৈরির হওয়া অস্বস্তিকে হুট-হাট পথে ফেলা আসা যায়নি।

সাইফউদ্দিন বিতর্ক

একটি জাতীয় দৈনিকের খবর ঘিরেই যত উত্তাপ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে না-কী ‘চোটের ভান’ করে নামেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সফলতম বোলার তিনি। ৪ ম্যাচে নিয়েছেন ৯ উইকেট। ডেথ ওভারে দারুণ বল করেন বলে রুবেল হোসেনকে বসিয়ে তাকে খেলিয়ে যাচ্ছিল দল। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের আগের দিন আচমকা জানা যায়, পিঠের চোটে পড়েছেন এই পেস অলরাউন্ডার।

টন্টনে ম্যাচ খেলে আসার পরও যে চোট কারও নজরে আসেনি, নটিংহ্যামে আসার পর তা কোথা থেকে এলো! তা নিয়েই সংশয়। কিন্তু একজন খেলোয়াড়ের যে কোনো সময় চোট অনুভব হতেই পারে। যার শরীর, কেবল মাত্র তিনিই বলতে পারবেন সেখানে ব্যথা কত। এই ধরনের পরিস্থিতিতে খেলোয়াড়দের উপরই ছাড়া হয় সিদ্ধান্তের ভার। তবে সাইফউদ্দিনের উপর সে সিদ্ধান্তের ভার দিয়েও টিম ম্যানেজমেন্ট যে সন্দেহমুক্ত নয়, একটি সূত্রে আগেই জানা গেছে তা।

সাইফউদ্দিনের ঘটনা সত্য-মিথ্যা যাই হোক। বিশ্বকাপের এই পর্যায়ে তা বাংলাদেশ দলের জন্য কোনো ভাল খবর নয়। বিশ্বকাপে এখন সব ম্যাচই বাংলাদেশের বাঁচা-মরার।

ফিল্ডিং বাড়চ্ছে চিন্তার স্রোত

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ব্যাটসম্যানরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েছেন। অতো বিশাল লক্ষ্য হওয়ায় কেউ তাদের খামতি দেখছে না। বোলিংয়ের হতশ্রী দশা নিয়ে আগেই সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু যেটা এড়িয়ে গেছে, সেটা হলো ফিল্ডিং। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে সবচেয়ে বাজে ফিল্ডিং দল বাংলাদেশ কী-না, এই প্রশ্নেরই আসল জোগাড়।

একদম শুরুর ম্যাচ থেকে ফিল্ডিং ছিল না ধারাবাহিক। ক্যাচ পড়েছে হর-হামেশা। ফিল্ডিংয়ে ক্ষিপ্রতার অভাব দেখা গেছে ভীষণ। বল গড়িয়ে যাচ্ছে, আরেকটু বাড়তি তাগিদ নিয়ে ডাইভ দিচ্ছেন না কেউ। বল ধরে থ্রো করতে দেরি হচ্ছে, দুইয়ের জায়গায় হয়ে যাচ্ছে তিন রান। ঠিকঠাক জাজমেন্টেরও ঘাটতি চোখে লাগার মতো। সেদিন ডেভিড ওয়ার্নার যেমন দুবার পান জীবন। মাত্র ১০ রানে তার ক্যাচ ফেলেন সাব্বির রহমান। ফিফটি পেরুনোর পর সেই সাব্বিরই রান আউট করতে পারেননি তাকে।

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা সেদিন ম্যাচ শেষে স্বীকার করেছেন, দলের অনেকের ছোটখাটো চোট সমস্যা থাকাতে ফিল্ডিংয়েও তার প্রভাব পড়ছে। আফগানিস্তান ম্যাচে তাই বাংলাদেশের ফিল্ডিং আর শরীরী ভাষা থাকবে উদ্বেগের কারণ হয়ে।

প্রতিপক্ষের শক্তি আর রোজ বোলের মাঠ

বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের যা পারফরম্যান্স। বিশেষ করে যে শক্তিতে তারা আলোচিত, সেই স্পিনারদের যা হাল, তাতে ভয় অতো পাওয়ার কথা না বাংলাদেশের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ৩৯৭ রান ছুটেছে তাদের হাত থেকে। তুরুপের তাস রশিদ খান ৯ ওভারেই ১১ ছক্কা খেয়ে দিয়েছেন ১১০ রান।

কিন্তু রশিদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যটসম্যানদের অমন দাপটের নজির নেই। রশিদ যে মানের লেগ স্পিনার, তাতে তার খারাপ দিন চলতেই থাকবে, এমনটা ভাবাও বাড়াবাড়ি। সাউদাম্পটনের রোজ বোলের মাঠের আকারও আসলে আফগান স্পিনারদের সুবিধা দেবে। ইংল্যান্ডের মাঠগুলোর মধ্যে বড়মাঠগুলোর একটি রোজ বোল। বড় মাঠে স্পিনাররা তুলনামূলক বেশি কার্যকর হন। তবে এখানে সুবিধা পেতে পারে বাংলাদেশও। সাকিব আল হাসান আর মেহেদী হাসান মিরাজ হতে পারেন দলের বোলিংয়ের মূল ভরসা।

প্রতিপক্ষের বাইরে এতগুলো প্রতিপক্ষ থাকার পরও আফগানদের বিপক্ষে আসলে অনেকখানি এগিয়ে বাংলাদেশ। সব বিভাগ মিলিয়ে শক্তিতে এগিয়ে, র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে তো বটেই। ব্যাটিং নিয়ে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপ মাত করা বাংলাদেশের তুলনায় ব্যাটিং শক্তিতে বেশ পিছিয়ে আফগানরা।

Comments

The Daily Star  | English

Awami League should be punished as a party: Fakhrul

He made the remarks after visiting a BNP man undergoing treatment at National Institute of Neurosciences and Hospital

1h ago