৭০ শতাংশ মুসলমান শিক্ষার্থী থাকলে ডাইনিং হল বাধ্যতামূলক: পশ্চিমবঙ্গ সরকার
এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭০ শতাংশ বা এর বেশি শিক্ষার্থী সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের থাকবে সেখানে ডাইনিং হল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দুদিন আগেই রাজ্য সরকারের সংখ্যালঘুবিষয়ক দপ্তর থেকে রাজ্যের সব সরকারি বিদ্যালয়ে এমন নির্দেশিকা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, রাজ্যের যেসব বিদ্যালয়ে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু শিক্ষার্থী থাকবে সেখানে ডাইনিং হল তৈরি করতে হবে।
সংখ্যালঘু ছাত্র-ছাত্রী বেশি পরিমাণে রয়েছে এরকম বিদ্যালয়ের তালিকা প্রস্তুত করে আজকের (২৮ জুন) মধ্যে সরকারকে পাঠিয়ে দিতে হবে বলেও নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়।
এতে বলা হয়, যেসব সরকারি বিদ্যালয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী সংখ্যালঘু সেসব বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে এর নাম, শিক্ষার্থী এবং সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের সংখ্যাসহ বিস্তারিত তথ্য সরকারকে পাঠাতে হবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশিক্ষা অভিযান প্রকল্প অনুযায়ী দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়, বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মিড ডে মিলের (মধ্যাহ্ন ভোজ) ব্যবস্থা রয়েছে। সেই নিয়মে রাজ্যের সব সরকারি বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন দপ্তর বাস্তবায়ন করবে। এই দপ্তর এর আগেও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী অধ্যুষিত বিদ্যালয়গুলির উন্নয়নে নানা ধরনের সাহায্য করেছে। সেভাবেই মাইনরিটি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড মাদ্রাসা এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট এর বিশেষ সচিব গত ১৪ জুন জারি করেন নতুন নির্দেশিকাটি।
জানা গিয়েছে, নতুন নির্দেশিকার সূত্র ধরে সব জেলার প্রশাসক এবং জেলার স্কুল দপ্তরের আধিকারিকদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট বয়ানে তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেখানে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী থাকা বিদ্যালয়গুলিকে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। সেসব বিদ্যালয়ে তৈরি করা হবে ডাইনিং হল।
তবে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু শিক্ষার্থী বেশি পরিমাণে রয়েছে এরকম প্রতিষ্ঠানগুলিকে আলাদা করে বেছে নিয়ে মমতার সরকার ডাইনিং হলের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে কেনো, সেই প্রশ্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তুলতে শুরু করেছে।
ইতোমধ্যে মমতার সরকারের এই নির্দেশিকায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের এই নির্দেশের পিছনে কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোযের প্রশ্ন, ধর্মের ভিত্তিতে রাজ্যের মধ্যে কেনো বিভাজন তৈরি করতে চাচ্ছে তৃণমূল সরকার? নির্দেশিকায় আলাদা করে এই ধরনের স্কুল কোন এলাকায় অবস্থিত তা জানতে চাওয়ার মধ্যে মমতার সরকারের কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে।
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, নির্বাচনে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের জয়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিশেষ সুবিধার সিদ্ধান্ত নিলেন কি? এবারের নির্বাচনে মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ভোট তৃণমূলের গিয়েছে পক্ষে।
নির্বাচন পরবর্তী বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, যে গরু দুধ দেয় তার লাথি খাওয়া উচিত। অর্থাৎ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, তিনি মুসলিম সম্প্রদায়ের ভোটের কথা বলতে চেয়েছেন।
মমতার সেই বক্তব্য নিয়েও যথেষ্ট সমালোচনা হয়েছে। এবার তার সরকারের এই সিদ্ধান্ত আগামী দিনে তার দল এবং সরকারকে কোন পর্যায়ে নিয়ে যায়, সেটিই দেখার বিষয়।
Comments