৩০ পদের মিষ্টি মসলার পান বেচে লাখপতি বিল্লাল

কখনো মানুষের বাসায়, কখনো রাস্তাঘাটে কাজ করে জীবিকা নির্বাহকারী যুবক বিল্লাল আজ পান বিক্রি করে লাখপতি। কারণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে তিনি তার কাজকে কখনো ছোট করে দেখেননি। যখন যে কাজ পেয়েছেন তখনই তিনি সে কাজটিকে গুরুত্ব দিয়ে করেছেন।

কখনো মানুষের বাসায়, কখনো রাস্তাঘাটে কাজ করে জীবিকা নির্বাহকারী যুবক বিল্লাল আজ পান বিক্রি করে লাখপতি। কারণ জীবন বাঁচানোর তাগিদে তিনি তার কাজকে কখনো ছোট করে দেখেননি। যখন যে কাজ পেয়েছেন তখনই তিনি সে কাজটিকে গুরুত্ব দিয়ে করেছেন।

বিল্লাল এখন মতলব দক্ষিণ উপজেলার বরদিয়া আড়ং বাজারে একটি পান দোকান দিয়ে মিষ্টি মসলার পান বিক্রি করেন। তার দোকানে প্রতিদিন অন্তত ২০ হাজার টাকার মসলাদার পান বিক্রি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে তার গড়ে প্রতিদিন আয় হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা। এভাবে তিনি এখন লাখপতি।

মতলব দক্ষিণ উপজেলার বরদিয়া আড়ং বাজার এলাকার গরীব পরিবারে জন্ম নেওয়া বিল্লাল বর্তমানে ৩৮ বছরের যুবক। তিনি জানান, অভাবের তাড়নায় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা পড়া শেষ করে ১০ বছর বয়স থেকে মানুষের বাসাবাড়িতে ঝাড়ুদার ও আড়ং বাজারে কুলির কাজ করতেন। বয়স ১৫ বছর পার হওয়ার পর চাঁদপুর-মতলব সড়কে বেবি ট্যাক্সি চালাতেন। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে একই এলাকায় প্রাইভেট কার, ম্যাক্সি ও বাস চালকের কাজও করেছেন। কয়েক বছর এই কাজ করে কিছু টাকা সঞ্চয় করার পর  ড্রাইভিং ভিসা নিয়ে ২০০৮ সালে চলে যান দুবাই। সেখানে তাকে ড্রাইভিং এর পরিবর্তে কাজ দেওয়া হয় দুবাইয়ের মাজরা এলাকায় উট লালনপালনের। তিনমাস থেকে সেখানে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে শিখেন এই মিষ্টি মসলার পান বানানোর কৌশল। তিনমাস পরই দুবাই থেকে দেশে চলে আসেন বিল্লাল।

এরপর মতলব আড়ং বাজারে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি দোকান নিয়ে শুরু করেন মসলাদার পান বিক্রি।

তিনি জানান তার এই পানে যেসব মসলা দেওয়া হয় তার অধিকাংশ কিনে আনতে হয় চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার অথবা ঢাকার তাঁতী বাজার থেকে। তিনি জানান, প্রতিদিন অন্তত ৫০০ মিষ্টি মশলার পান আর মশলা ছাড়া আরও ২০০ থেকে ৩০০ পান বিক্রি হয় তার দোকানে। মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা ছাড়াও চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, হাইমচর, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর রামগঞ্জ এলাকার নিয়মিত গ্রাহক রয়েছে তার। অনেকেই ফোনে অর্ডার দিয়ে লোক পাঠিয়ে পান নিয়ে যান। অনেক সময় বিয়ে বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অনেকেই তার এই পান নিয়ে থাকেন। তার পান দুই তিন দিন ফ্রিজে রেখেও খাওয়া যায়।

মতলব বরদিয়া এলাকার নিয়মিত পানের গ্রাহক তারিক মাহমুদ জানান, বিল্লালের মিষ্টি মসলার পান খেতে এলাকার বাইরের দূর দূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। ভিড়ের কারণে অনেক সময় গ্রাহকদের ফিরেও যেতে হয়।

তার পানে ৩০ পদের মসলার মধ্যে যেসব মসলা দেওয়া হয় এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পান পরাগ, চমনবাহার, চেরিফল, কালোজিরা, বাদাম, কিসমিস, মোরব্বা, নারকেল, দুধ, খয়ের ইত্যাদি। তার আয় দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী মা, স্ত্রী দুই মেয়ে এক ছেলের সংসার চালিয়েও বাড়ি করার জন্য মতলবে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে চার শতাংশ জমি কিনেছেন। তিনি বলেন, সব খরচ চালিয়ে মাসে লাখ টাকার মতো সঞ্চয় থাকে। আমি আমার ছেলেমেয়েদের মানুষ করে যাব। কিন্তু এই পান বিক্রি ছাড়ব না।

Comments