আক্ষেপ, হতাশা অবশেষে আশা

ব্যবহৃত উইকেটে খেলা বলেই টস জেতাটা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ফের সেই ভাগ্য সহায় হয়নি বাংলাদেশের। এই আক্ষেপে শুরু হওয়া ম্যাচে নড়েচড়ে বসার আগেই বড় সর্বনাশ। রোহিত শর্মার মহামূল্যবান সহজ ক্যাচ পড়ে গেল তামিম ইকবালের হাত থেকে। এর জেরেই পরের ঘণ্টা দেড়েক কেবল হতাশার গল্প। জীবন পেয়ে সেঞ্চুরি তুলে ফিরলেন রোহিত, ভারতের মিডল অর্ডারও বাড়তে না দিয়ে চাপ রাখল বাংলাদেশ। শেষ দিকে দারুণ বল মোস্তাফিজুর রহমানের ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ। বেঁচে রইল রানতাড়ার আশাও।

৫০ ওভারে  ৯ উইকেটে ৩১৪ রান করেছে ভারত।  বিশ্বকাপে টিকে থাকতে তাই  রান তাড়ার কোন রেকর্ড গড়তে হবে না বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপেই তো ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩২২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। উইকেট মন্থর হয়ে পড়ছে, ভারতের বোলিংও ধারালো। তবু  এই রান তাড়া করে জেতাটা খুবই সম্ভব।

পুরো ইনিংসের পরিস্থিতি উঠানামা করল বারকয়েক। শুরুর হতাশা কাটিয়ে শেষ দিকে আলো ছড়ালেন মোস্তাফিজুর রহমান। ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বার ৫ উইকেট তুলে নিয়ে তিনিই বাংলাদেশের নায়ক। রুবেল হোসেন দেখালেন নিজের কার্যকারিতা। অধিনায়ক মাশরাফি মর্তুজার পাঁচ ওভার পুষিয়ে দিতে জুতসই বোলিং করলেন সৌম্য সরকারও। এবং আরও একবার সাকিব আল হাসান ছিলেন আঁটসাঁটও।

কিন্তু শেষ দিকের এই আলোর শুরুর আক্ষেপ যে মনে করাচ্ছে আরও বেশি। রোহিতের ক্যাচটা নিতে পারলে যে তিনশোও করতে পারে না ভারত!

নতুন বল কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উইকেট ফেলা যাচ্ছে না শুরুতে। এই নিয়ে টুর্নামেন্ট জুড়েই বিস্তর হ্যাপা পোহাতে হচ্ছিল বাংলাদেশকে। ভারতের বিপক্ষে বড় কিছু করতে সবচেয়ে জরুরী শুরুতে উইকেট ফেলা। দ্রুত যদি ভারতের টপ অর্ডার আলগা করা যায় তাহলেই বিশ্বকাপে ওদের নড়বড়ে থাকা ওদের মিডল অর্ডারকে চেপে ধরা যাবে। এই চিন্তাতেই নেমেছিল বাংলাদেশ।

মোস্তাফিজ চিন্তাটা বাস্তবায়নও করে ফেলেছিলেন প্রায়। পঞ্চম ওভারে তার বলে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিড উইকেটে লোপ্পা ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। তামিম ইকবাল মহামূল্যবান সেই ক্যাচ কি করে যেন ফেলে দিলেন। ভারতকে ধাক্কা দিতে গিয়ে নিজেরা এই যে ধাক্কা খেল তারপরের ঘন্টা দেড়েক সেই রেশেই বদলে গেল শরীরী ভাষা।

ফিল্ডিংয়ে মিলল না তেজ। জীবন পেয়ে ক্ষ্যাপে গেলেন রোহিত। ছড়ি ঘুরিয়ে তছনছ  করতে থাকলেন বাংলাদেশের বোলিং। মন্থর উইকেটে সাকিব আল হাসান এসে লাগাম টেনেছিলেন। তবু উইকেট ফেলা যাচ্ছিল না বলে বাড়ছিল চিন্তার স্রোত। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের মতই এদিন ‘গোল্ডেন আর্ম’ হয়ে আসেন সৌম্য সরকার। সেদিনও ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ শুরুতে ফেলে ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। ওই সৌম্যই এসে লাগাম টানেন। অনিয়মিত সৌম্য এবারও ফেরান রোহিতকে। কিন্তু ৯ রানে জীবন পাওয়া রোহিত যে ততক্ষণে যোগ করে ফেলেছেন আরও ৯৫ রান। সেঞ্চুরি তুলে বিস্ফোরক আরও কোন কিছু করে ফেলেন কিনা সেই শঙ্কা চেপে বসতে যাচ্ছিল। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি করার মঞ্চও ছিল রোহিতের। সৌম্যের অফকাটারে লিটন দাসের ক্যাচ সেই সম্ভাবনা মেরে ফেলে। এবারের আসরের সবচেয়ে বড় (১৮০ রান) উদ্বোধনী জুটিরও  হয় অবসান।  খানিকপর আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলকে ফেরান রুবেল হোসেন।

কিছুটা থই পায় বাংলাদেশ। কিন্তু বিরাট কোহলি থাকলে স্বস্তির উপায় কি। স্লগ ওভারের দিকে এগিয়ে যাওয়া ভারতের ইনিংসে যখনই দরকার ছিল জোর একটা ধাক্কা, তখনই কব্জির ঝাঁকুনি নিয়ে হাজির মোস্তাফিজ। ৩৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেট ধরা কোহলি। এক বল পরই হার্দিক পান্ডিয়াকে স্লিপে সৌম্যের অসাধারণ ক্যাচ। ডাবল উইকেট মেডেন নিয়ে খেলার ফেরার আভাস দেন ‘দ্যা ফিজ’।

তবে চারে নামা ঋষভ পান্ত  দ্রুত রান তুলতে থাকলে আরও চেপে বসা হয়নি ওইসময়। সাকিব তার শেষ ওভারে এসে পান্তকে ফেরান। শেষ স্পেলে মাত্র ৯ রান দিয়ে ওই উইকেটে আবার স্বস্তি পায় বাংলাদেশ। কেবল মহেন্দ্র সিং ধোনি কি করেন দেখার ছিল। কিন্তু সেরা সময় যে অনেক পেছনে ফেলে এসেছেন, তা দেখিয়ে ধোনি পূরণ করতে পারেননি দলের চাহিদা। তাকে নাচিয়ে শেষ ওভারে আউট করেছেন মোস্তাফিজ।

মোস্তাফিজ মাঝে যেমন ফেরালেন দলকে, শেষটাও করলেন তিনি। শেষ ওভারে আরও দুই উইকেট তুলে নিলেন ৫৯ রানে ৫ উইকেট। শেষের ১০ ওভারে মোস্তাফিজের এমন বোলিংয়ে মাত্র ৬১ করতে পারল ভারত।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত:  ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রাহুল ৭৭, রোহিত ১০৪, কোহলি ২৬ , পান্ত ৪৮ , হার্দিক ০, ধোনি ৩৫ , ভুবনেশ্বর ২ , শামি ১  , বোমরাহ ০* ; মাশরাফি ০/৩৬, সাইফুদ্দিন ০/৫৯ , মোস্তাফিজ ৫/৫৯, সাকিব ১/৪১, মোসাদ্দেক ০/৩২, রুবেল ১/৪৮ , সৌম্য ১/৩৩ )

Comments

The Daily Star  | English

Reforms, justice must come before election: Nahid

He also said, "This generation promises a new democratic constitution for Bangladesh."

7h ago