আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

এক সাকিব আল হাসান ছাড়া টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের কেউই ইনিংস বড় করতে পারলেন না। তার বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ দিকে লোয়ার অর্ডারের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মারমুখী ব্যাটিংয়ে জাগালেন আশা। কিন্তু পেলেন না প্রয়োজনীয় সঙ্গ। ফলে সম্ভাবনা জাগিয়েও ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভাঙল বাংলাদেশের।
ছবি: রয়টার্স

এক সাকিব আল হাসান ছাড়া টপ অর্ডার বা মিডল অর্ডারের কেউই ইনিংস বড় করতে পারলেন না। তার বিদায়ের পর ইনিংসের শেষ দিকে লোয়ার অর্ডারের মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মারমুখী ব্যাটিংয়ে জাগালেন আশা। কিন্তু পেলেন না প্রয়োজনীয় সঙ্গ। ফলে সম্ভাবনা জাগিয়েও ভারতের কাছে হেরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন ভাঙল বাংলাদেশের।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বার্মিংহামের এজবাস্টনে ভারতের ছুঁড়ে দেওয়া ৩১৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১২ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশ থেমেছে ২৮৬ রানে। ২৮ রানের এই হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে টাইগারদের। আর আসরে ষষ্ঠ জয় তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত।

লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের শুরুটা হয় সাবধানী। বাড়তি ঝুঁকি না নিয়ে দেখেশুনে ব্যাট করতে থাকেন দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। সৌম্য স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে খোলসে ঢুকে থাকলেও তামিম ছিলেন সাবলীল। তবে প্রথম ১০ ওভারে উইকেট ধরে রাখার যে পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের, তা ভেস্তে যায় তামিমের বিদায়েই। ৩১ বলে ২২ রান করে মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তিনি। দলীয় ৩৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

সাকিব আল হাসানকে সঙ্গী হিসেবে পেয়ে ধীরে ধীরে খোলস ছাড়ার ইঙ্গিত দেন সৌম্য। তবে আচমকা একটি ভুল শট খেলার খেসারত দিয়ে বিদায় নেন এই বাঁহাতি। ফুটওয়ার্ক ছাড়া জায়গায় দাঁড়িয়ে মারতে গিয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার বলে এক্সট্রা কাভারে ভারতীয় দলনেতা বিরাট কোহলির হাতে ক্যাচ দেন তিনি। ৪ চারে ৩৮ বলে করেন ৩৩ রান সৌম্য।

এরপর সাকিবের সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যান মিলে এগিয়ে নিতে থাকেন বাংলাদেশকে। জমে উঠতে থাকে জুটি। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলতে থাকেন তারা। ভারতীয় বোলারদের ওপর বাড়তে থাকে চাপ। কিন্তু সর্বনাশটা হয় স্লগ সুইপে। যুজবেন্দ্র চাহালকে সুইপ করতে গিয়ে মিডউইকেটে মুশফিক ক্যাচ দেন শামির হাতে। ভাঙে ৪৭ বলে ৪৭ রানের জুটি। থিতু হয়ে বিদায় নেওয়া মুশি করেন ২৩ বলে ২৪ রান।

একই পরিণতি ঘটে পরের জুটিতেও। উইকেটে মানিয়ে নেওয়ার পর বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন লিটন দাস। আরেকটি সম্ভাবনাময় জুটি লম্বা করতে না পারার আক্ষেপে পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। সাকিবের সঙ্গে ৪০ বলে ৪১ রানের জুটি গড়ে হার্দিকের দ্বিতীয় শিকার হন লিটন। ২৪ বলে ২২ রান করেন তিনি।

মুশফিক-লিটনের আউটে ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়ে।এরপর দ্রুত আরও দুই উইকেট হারায় তারা। ৬ রানের ব্যবধানে সাজঘরে ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন ও সাকিব আল হাসান। জাসপ্রিত বুমরাহর স্লোয়ার বুঝতে না পেরে ব্যাটের ভেতরের কানায় লাগিয়ে বোল্ড হন ৭ বলে ৩ রান করা মোসাদ্দেক। আর লম্বা সময় একপ্রান্ত আগলে রাখা সাকিবকে দিনেশ কার্তিকের ক্যাচ বানিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেটের দেখা পান হার্দিক।

আসরে নিজের চতুর্থ হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়ে ৭৪ বলে ৬ চারে ৬৬ রান করেন সাকিব। এই ইনিংস খেলার পথে প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপের তথা ক্রিকেটের যে কোনো ফরম্যাটের একক আসরে বা সিরিজে পাঁচশো রান করার কীর্তি গড়েন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাত ইনিংসে তার সংগ্রহ ৫৪২ রান। এখন পর্যন্ত চলমান বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। ৫৪৪ রান নিয়ে শীর্ষে ভারতের রোহিত শর্মা।

১৭৯ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবের বিদায়ে ফিকে হয়ে যায় বাংলাদেশের জয়ের আশা। তবে সপ্তম উইকেট জুটিতে সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মিলে ফের আশা জাগান। শামির করা ৩৮তম ওভারে ১৭ রান নেন দুজনে। চাহালের পরের ওভারে আসে ১১ রান। বলের চেয়ে দ্রুতগতিতে রান বাড়ান তারা। শেষ ১০ ওভারে বাংলাদেশের দরকার দাঁড়ায় ৯০ রান।

বুমরাহর স্লোয়ারে বোল্ড হয়ে সাব্বির সাজঘরের পথ ধরলে ভাঙে বাংলাদেশের সেরা জুটিটি। ৫৬ বলে ৬৬ রানের। সাব্বির ৫ চারে ৩৬ বলে করেন ৩৬ রান। এরপর ১ ছক্কায় ৫ বলে ৮ রান করা মাশরাফি বিন মর্তুজাকে উইকেটের পেছনে মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্যাচ বানান ভুবনেশ্বর।

বাকি গল্পটা সাইফউদ্দিনের। দারুণ ব্যাটিংয়ে একাই বাংলাদেশকে লক্ষ্যের কাছাকাছি নিয়ে যান তিনি। জেতার জন্য শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৫১ রানের। কিন্তু ৪৮তম ওভারে বুমরাহর দুর্দান্ত দুটি ইয়র্কার গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশের ইনিংস। রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে ৫৫ রান খরচায় ৪ উইকেট তার ঝুলিতে যায়। অন্যপ্রান্তে ৯ চারের সাহায্যে সাইফউদ্দিন অপরাজিত থাকেন ৩৮ বলে ৫১ রানে।

এর আগে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত বেছে নেন ভারতের দলনেতা কোহলি। টস হারলেও দিনের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য হতে পারতো দারুণ। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা রোহিত শর্মাকে ফেরানো যেত ব্যক্তিগত ৯ রানেই। হয়নি তামিম ইকবাল সহজ ক্যাচ ফেলেন বলে। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি করেন এবারের বিশ্বকাপে নিজের চতুর্থ সেঞ্চুরি। সঙ্গে আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলের ফিফটি। তাদের ১৮০ রানের উদ্বোধনী জুটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় ভারত।

শেষে রিশভ পান্ত ও মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩১৪ রানের বড় সংগ্রহই পায় ভারত। তবে বাংলাদেশ এই রানে ভারতকে আটকে দিয়ে খুশিই ছিল বলতে হবে। কারণ এক পর্যায়ে সাড়ে তিনশো ছোঁয়া বিরাট কোহলিদের নাগালের মধ্যেই ছিল।

মূলত বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান মোস্তাফিজুর রহমান। ৩৯তম ওভারে বিরাট কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়াকে তিন বলের মধ্যে আউট করে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন তিনি। এরপর তুলে নেন আরও তিনটি উইকেট। বিশ্বকাপে দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান তিনি। দারুণ বোলিং করেন সাকিবও। মাত্র একটি উইকেট পেলেও নিয়ন্ত্রিত বল করেন তিনি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রাহুল ৭৭, রোহিত ১০৪, কোহলি ২৬, পান্ত ৪৮, হার্দিক ০, ধোনি ৩৫, কার্তিক ৮, ভুবনেশ্বর ২, শামি ১, বুমরাহ ০*; মাশরাফি ০/৩৬, সাইফউদ্দিন ০/৫৯, মোস্তাফিজ ৫/৫৯, সাকিব ১/৪১, মোসাদ্দেক ০/৩২, রুবেল ১/৪৮, সৌম্য ১/৩৩)।

বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ২৮৬ (তামিম ২২, সৌম্য ৩৩, সাকিব ৬৬,  মুশফিক ২৪, লিটন ২২, মোসাদ্দেক ৩, সাব্বির ৩৬, সাইফউদ্দিন ৫১*, মাশরাফি ৮, রুবেল ৯, মোস্তাফিজ ০; ভুবনেশ্বর ১/৫১, বুমরাহ ৪/৫৫, শামি ১/৬৮, চাহাল ৫০/১, হার্দিক ৬০/৩)।

ফলাফল: ভারত ২৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রোহিত শর্মা (ভারত)।

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

13h ago