যেসব ভুলে হাতছাড়া সেমির স্বপ্ন

Mashrafe Mortaza
ছবি: রয়টার্স

ম্যাচের শুরুতে যে মহা ভুল করেছিলেন তামিম ইকবাল, তা পুষিয়ে দিতে পারেননি ব্যাট হাতে। একাই ব্যাট হাতে লড়ছিলেন সাকিব আল হাসান। পারেননি শেষ করতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচের মতো বড় কিছুর আভাস দিয়েও নিভেছেন লিটন দাস। আর মুশফিকুর রহিম? প্রতিপক্ষ ভারত বলেই তার কাছে দেনা শোধ করার অনেক দাবি ছিল দলের। থিতু হয়েও তালগোল পাকিয়ে করেছেন হতাশ। বোলিংয়ে মোস্তাফিজুর রহমানের জ্বলে উঠার দিনে জয়ের আভাস পেয়েও তাই আরো একবার তীরে তরি ভেড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।

চোট সমস্যা, ভুল কৌশল পেরিয়েও টুর্নামেন্টের শেষ দিকে এসে সেমিফাইনালের লড়াইয়ে টিকে থেকেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ভারতের কাছ হারে এই বিশ্বকাপকে অবিস্মরণীয় করে রাখা আরও বড় সুযোগ হয়েছে হাতছাড়া। এই ম্যাচে বাংলাদেশ আসলে কোথায় হেরেছে? খামতিটা ছিল কোথায়? কাছে এসেও কেন ধরা দিল না জয়। 

তামিমের ক্যাচ মিস

টস হেরে কিছুটা মন মরা দেখাচ্ছিল মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। ব্যবহৃত এই উইকেটে আগে ব্যাট করতে চেয়েছিলেন। ওই আক্ষেপ খানিক পরেই ভুলতে পারতেন তিনি। যদি না রোহিত শর্মার লোপ্পা ক্যাচটা ফেলে না দিতেন তামিম ইকবাল। মোস্তাফিজুর রহমের বলে ইনিংসের মাত্র পঞ্চম ওভারে পুল করতে গিয়েছিলেন। টাইমিং করতে না পারায় তার সহজ ক্যাচ যায় মিড উইকেটে। বা দিকে দৌড়ে এসে তামিম হাতে নিয়েও তা ফেলে দেন। তখন রোহিত ছিলেন মাত্র ৯ রানে। ভারতের রান ছিল ১৮। পরে অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকারের বলে রোহিত যখন ফেরেন তার নামের পাশে ১০৪ রান। ভারত পৌঁছে গেছে ১৮০ রানে।

এই ৯৫ রানের ঘাটতি কি দিয়ে মেটাতে পারত বাংলাদেশ? যিনি ক্যাচ ফেলেছিলেন ব্যাট হাতে তিনি যদি জ্বলে উঠতেন। কোথায় কি! ৩১৫ রান তাড়ায় নেমে ৩১ বলে ২২ করেই দায়িত্ব সারলেন তামিম। আউট হয়ে তামিমের মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়ার দৃশ্য কেবল এই ম্যাচ নয়, প্রতিবিম্ব হয়ে থাকল পুরো টুর্নামেন্টে তার ছবি। 

স্লোয়ার বলে কাবু

লিটন দাস আউট হওয়ার পর ভরসা ছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। সাকিবের সঙ্গে জুটি গড়তে ক্রিজে গিয়ে জাসপ্রিট বোমরাহর স্লোয়ার পড়তে পারেননি। গতির তারতম্যে নাকাল হয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন বল।

দারুণ খেলতে থাকা সাকিবও স্লোয়ারেই শিকার। তাকে আচমকা স্লোয়ার দিয়ে বোকা বানিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া। এরপরের উইকেটও গিয়েছে স্লোয়ারে। এবার বোমরাহর স্লোয়ারে শিকার সাব্বির রহমানও হয়েছেন বোল্ড। আগের ম্যাচে এই উইকেটে ভারতকে স্লোয়ার দিয়ে বেধে রেখেছিল ইংল্যান্ড। সেই ম্যাচ দেখেও স্লোয়ার পিক করতে পটু হতে পারেনি বাংলাদেশ। ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্লোয়ার বলে তিন আউট গড়েছে ব্যবধান।

প্রথম ২০ ওভারের বোলিং-ফিল্ডিং

পঞ্চম ওভারে রোহিত শর্মার ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর শরীরী ভাষাতেই নেতিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। বোলিং হয় আলগা, ফিল্ডিং যাচ্ছেতাই। এই সময়ে ঝটপট ১২০ রান তুলে নেয় ভারত। শেষ দিকে ঘুরে আসার দারুণ গল্প লিখতে পারলেও শুরুর এই ছন্নছাড়া বোলিং ম্যাচ শেষে ক্ষত হয়ে থাকবে দলের জন্য।

জুটি জমেও জমল না, সাকিব রইলেন একা, সাইফুদ্দিনে বাড়ল আক্ষেপ

তামিমের ক্যাচ মিসের পরও কি দারুণভাবেই না খেলায় ফিরেছিল বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের বোলিংয়ে এই টুর্নামেন্টে ভারতের নড়বড়ে মিডল অর্ডারে খোলাসা হয়ে পড়েছিল। শেষটাতেও তারা ঝড় তুলতে না পারায় লক্ষ্যটা থাকল নাগালে। এমন লক্ষ্যে জেতা তো যায়ই।  শুরুটা ধীরলয়ে। তবু ৩৯ রান গিয়ে তামিম ফেরার পরও বুকে কাঁপন ধরেনি। সাবলীল খেলা সৌম্য সরকার ফেরার পরও না। ছন্দে থাকা সাকিব এসেও থিতু হতে সময় নিলেন না। মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে এমন পরিস্থিতিতে কতবারই তো বড় জুটি গড়েছেন। জুটি হলোও বটে। কিন্তু বড় হলো না। ৪৭ রানের জুটি ভাঙল ২৩ বলে ২৪ করা মুশফিকের আউটে। এই জায়গাতেই প্রথম ব্যাকফুটে পড়ে বাংলাদেশ। 

যুজবেন্দ্র চেহেলের বলটাতে প্রিয় স্লগ সুইপ করতে গেলেন মুশফিক। কিন্তু চেষ্টাটা হলো না প্রাণখোলা। দ্বিধা থাকল বলেই পার করতে পারলেন আন ত্রিশ গজও।

এবার বিশ্বকাপে একবারই কোন দল তিনশোর বেশি তাড়া করে জিতেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে সেটা করে দেখিয়েছিল বাংলাদেশই। সেদিনের দুই হিরো সাকিব আর লিটন দাসের জুটিও জমে উঠেছিল। এগিয়ে যাচ্ছিল পরিণতির দিকে। দলের পরিকল্পনা তখন কি ছিল বোঝা মুশফিল। চনমনে খেলতে থাকা লিটন হার্দিক পান্ডিয়াকে এক ছক্কা মারার পর গেলেন আরেকটি মারতে। ৪১ রানের জুটি ভাঙল। লিটন ফিরলেন ২২ করে। এই জায়গাতেই ম্যাচের মোড় যায় ঘুরে।  

তখন চলছিল ত্রিশ ওভার। আস্কিং রানরেট ছিল সাড়ে সাত করে। ওইসময় তেড়েফুঁড়ে না মেরে আরও ওভার দশেক হিসেবি ক্রিকেট খেললে ফল হতে পারত ভিন্ন। লিটনের আউটের পর দ্রুতই ফেরেন মোসাদ্দেক হোসেন আর সাকিব। শেষ দিকে সাব্বির রহমানকে নিয়ে আফসোস বাড়িয়েছেন সাইফুদ্দিন। সপ্তম উইকেটে ৬৬ রানের জুটিতে নড়েচড়ে বসার অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিলেন।

হাতে উইকেট না থাকায় পারেননি সাইফুদ্দিন। দুই ওভার আগেই অলআউট হয়ে ২৮ রানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে।



ম্যাচ রিপোর্ট-  আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh women's football team qualifies for Asian Cup

Bangladesh women's football team made history as they qualified for the AFC Women's Asian Cup for the first time. 

15m ago