বরগুনার অপরাধ চক্র ০০৭ বন্ড গ্রুপ

বরগুনা শহরে মাদক ও মোটরসাইকেল চোরাচালানের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ছিলো তারা। সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ১০০ জনের বেশি সদস্য নিয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ ‘০০৭’ এর মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত।

বরগুনা শহরে মাদক ও মোটরসাইকেল চোরাচালানের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র ছিলো তারা। সাব্বির হোসেন নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ১০০ জনের বেশি সদস্য নিয়ে ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপ ‘০০৭’ এর মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাত।

নয়নেরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো রিফাত শরীফ। নয়নের গ্রুপ থেকে বের হয়ে এসে, মানজারুল আলম জনের গ্রুপে যোগ দেওয়ার কয়েক মাস পর গত ২৬ জুন বন্ড গ্রুপের সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে রিফাতকে।

গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ২৫ বছর বয়সী নয়ন নিহত হওয়ার পরপরই জন সেই নেটওয়ার্কের কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়। স্থানীয় লোকজন, নিহতের পরিবার-স্বজন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে দ্য ডেইলি স্টার এসব তথ্য নিশ্চিত হয়েছে।

বরগুনার মতো একটি ছোট শহরে কেমন করে গড়ে উঠলো এই গ্যাং সংস্কৃতি? কারাই বা তাদের পৃষ্ঠপোষক?

বরগুনায় আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। একাংশের নেতৃত্বে রয়েছেন বরগুনা শাখার দলের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং অন্যদিকে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর।

স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি কয়েকজন দলীয় নেতার সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরের ছেলে জুবায়ের আদনান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ায় জেলায় ছাত্র রাজনীতিতে শম্ভুর কোনো প্রভাব নেই। বরগুনা ছাত্রলীগের বিপরীতে শম্ভুর ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান-প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক সুনাম দেবনাথ কিছু সংখ্যক সন্ত্রাসী মাদক চোরাকারবারীকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতো।

সুনামের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদে নয়ন মাদক চোরাকারবার এবং মোটরসাইকেল চোরাচালানে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলো। অন্যদিকে, জন ক্যাবল টিভি নেটওয়ার্ক এবং বাস-ট্রাক ও কার্গো টার্মিনালে চাঁদাবাজী চালাত অবাধে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “মাদক চোরাকারবার, চোরাচালান ও আরো ক্ষমতা লাভের আশায় সুনাম সেই গ্যাং গঠন করে।” এর আগেও সুনামের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছিলেন জুবায়ের।

ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে সুনামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। দলীয় কার্যালয়ে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি।

তবে যোগাযোগ করা হলে সুনামের বাবা ধীরেন্দ্রনাথ এই প্রতিবেদকদের বলেন যে তার ছেলে খুবই ভদ্র ও উচ্চশিক্ষিত। একজন আইনজীবী হিসেবে তার ছেলে গত ১০ বছর থেকে বরগুনা আদালতে কাজ করছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

একটি পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমার পরিবারের কেউই কোনো রকমের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত নয়। মাদকের সঙ্গে আমার ছেলে সুনামের কোনো সম্পর্ক নেই।”

২০০৮ সালে বাবা সিদ্দিকুর রহমানের মৃত্যুর পর ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে নয়ন। শুরু করে মাদক সেবনও। ২০১৫ সালের শেষের দিকে সে মাদক চোরালান শুরু করে। জড়িয়ে পড়ে চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গেও।

তার পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, নয়নকে প্রথম গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয় একজন কাউন্সিলের সঙ্গে বিবাদের কারণে। এরপর তাকে বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হলেও কয়েক ঘণ্টায় সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে যেতো। সব সময় একজন প্রভাবশালী নেতার আশীর্বাদ লাভ করতো নয়ন।

হলিউডের জেমস বন্ড সিরিজের ছবির ভক্ত নয়ন এবং রিফাত ফারাজী ‘০০৭’ নামে ম্যাসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খোলে ২০১৭ সালের ২৭ মার্চ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই গ্রুপের সদস্য ছিলো ৩৬৬ জন, যাদের অধিকাংশই উঠতি বয়সের। তারা নয়ন এবং ফারাজীর কাছ থেকে অপকর্ম বিষয়ে নির্দেশনা পেতো। রিফাত হত্যার সময়ও তারা ম্যাসেঞ্জারে নির্দেশনা পেয়েছিলো।

নয়ন ও তার গ্রুপের সদস্যরা প্রাথমিকভাবে সেসব শিক্ষার্থীদের নিশানা করতো যারা দেশের অন্য জায়গা থেকে বরগুনায় এসে হোস্টেলে বসবাস করতো। প্রথমে তাদেরকে ধূমপানে প্রলুব্ধ করতো। তারপর ঠেলে দিতো মাদক সেবনের দিকে। বরগুনা সরকারি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বিভিন্ন প্রকারের মাদক বিনা-পয়সায় সরবরাহ করা হতো।

নয়নের মা শাহিদা আক্তার বলেন, তার ছেলে কলেজে পড়ে। কিন্তু, শিক্ষকরা তাকে বহিরাগত বলেছেন।

একাধিক সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে অনিবন্ধিত মোটরসাইকেল নিয়ে আসতো বন্ড গ্রুপের সদস্যরা। সেগুলো দুই লাখ থেকে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হতো।

গত বছর বরগুনা সদর উপজেলা নির্বাচনের সময় নয়ন ‘দাদা’-র সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় বলেও জানান শাহিদা আক্তার। কিন্তু, কে সেই ‘দাদা’ তা তিনি পরিষ্কার করে বলেননি। এরপর ‘দাদার’ সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি হয় বলে জানা যায়।

নয়নের এই সিদ্ধান্ত নিহত রিফাত শরীফ ভালোভাবে নিতে পারেনি। সে সুনাম সমর্থিত জনের সঙ্গেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে, দুই বন্ধু পরিণত হয় শক্রতে। তারপর এক সময় সেই শত্রুতার জের ধরে নৃশংসভাবে নিহত হয় রিফাত শরীফ।

(সংক্ষেপিত, পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এই ইংরেজি লিংকে ক্লিক করুন)

 

আরও পড়ুন: নয়ন বন্ড গ্যাং ০০৭

আরও পড়ুন: বরগুনার ঘটনা কি বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি নয়?

আরও পড়ুন: বরগুনার রিফাত ফারাজী গ্রেপ্তার

আরও পড়ুন: নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত

আরও পড়ুন: সরকারকে সীমান্তে ‘রেড এলার্ট’ দেওয়ার নির্দেশ

আরও পড়ুন: রিফাতের খুনীদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী: কাদের

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago